Ads (728x90)

SRI SRI THAKUR VIDEO

Like this page

Recent Posts

World time

Add as a follower to automatically get updated Article. Jaiguru!

সৃষ্টিতত্ত্ব অনুযায়ী পরমপিতা এক থেকে বহুতে পরিণত হবার প্রাক্কালে যে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অনাহত-নাদ উৎপন্ন হয়েছিল, সেই আদিধ্বনিস্পন্দিত শব্দ বা ধ্বনি বা পরাবাক্ ওঁ সব সৃষ্টির আদি উত্স। ব্যাপ্ত প্রাক, প্রথম বাক্। পুণ্যপুঁথিতে বর্ণিত শ্রীশ্রীঠাকুরের ভাষায় ‘‘এক বিরাট ধ্বনি সোঽহং পুরুষ ভেদ করে সৃষ্টি করতে চলে এল---সেই ওম্।’’ আবার অনুশ্রুতি গ্রন্থে শ্রীশ্রীঠাকুর বলছেন--
‘‘স্পন্দন়টার সংবেদনা
যেমনতর যেথায় হয়,
শব্দটাও তো মূর্তি নিয়ে
বিশেষ হয়ে তাতেই রয়।’’
এই নিয়মনা বা বিধির মধ্য দিয়েই সৃষ্টি হয়েছে সব ভাষার। শ্রীশ্রীঠাকুরের ভাষায়--- ‘‘ভাষা তার /পরিস্থিতি ও পরিবেশ অনুগ/ব্যক্তির ভাব-সন্দীপনী ব্যক্ত বিবর্তন/ছাড়া আর কিছুই নয়কো।’’ (শিক্ষা-বিধায়না, ১১৮)
এই বিবর্তন পরিলক্ষিত হয় রামায়ণ রচনার প্রেক্ষাপটে।
যথা, রাম-নামের নাদ-সাধন করে রত্নাকর দস্যু মেধানাড়ীকে জাগ্রত করে হয়েছিলেন বাল্মীকি। একদা তমসা নদী থেকে স্নান করে ফিরছিলেন। এক তরুশাখে ক্রৌঞ্চ-জুটি পরস্পর খেলছিল। এক ব্যাধ পুরুষ পাখিটিকে তীর মেরে হত্যা করলে স্ত্রী পাখিটি করুণ বিলাপ করতে থাকে। বাল্মীকি বিচলিত হয়ে ‘কোনদিন প্রতিষ্ঠা পাবে না’ বলে ব্যাধকে অভিসম্পাত করেন। সেই অভিশাপ বাণী স্বতঃস্ফূর্ত শ্লোকবদ্ধ হয়ে নির্গত হয়েছিল :-- সৃষ্টি করেছিলেন দেব-ভাষার আদি শ্লোক--- ‘‘মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শাশ্বতী সমাঃ/যৎ ক্রৌঞ্চমিথুনাদেকম্ অবধী কামমোহিতম্।’’ অতএব, বলা চলে, নাদরূপী বা শব্দরূপী ব্রহ্ম থেকেই ভাষার সৃষ্টি।




সেই ভাষার সমন্বয়ের রচনা যখন সত্তাপোষণী রূপে জগতের হিতসাধনে ব্রতী হয়, তখনই সৃষ্টি হয় সাহিত্যের। শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁর শ্রীমুখ নিঃসৃত ভাষায় চলার সাথী গ্রন্থে বলছেন---‘‘যার আলোচনায় মানুষ হিতে অধিষ্ঠিত বা উন্নীত হতে পারে, তাই যে সাহিত্য।’’ শিক্ষা-বিধায়না গ্রন্থের ২৪৫ সংখ্যক বাণীতে বলছেন, ‘‘ঈশ্বরই সুসঙ্গত, সর্ববিভান্বিত/ সুসমাবিষ্ট, প্রাজ্ঞ জীবন-সাহিত্য,/ তাই তিনি রসো বৈ সঃ।’’
‘‘ভাব, ভাষা, যুক্তি,
ছন্দ ও অনুরণন
যতই সৌষ্ঠবমণ্ডিত হ’য়ে
আদর্শ-উল্লোল হ’য়ে ওঠে---
জীবনীয় সাত্তিক সম্বর্দ্ধনায়,---
রচনা জীবন্ত হ’য়ে ওঠে সেখানে তেমনি,
এই হলো রচনার পঞ্চপ্রাণ।’’ ২৩৯ (শিক্ষা-বিধায়না)
‘‘সমস্ত রসের সমবায়ে
সন্দীপনার বোধ-পরিবেষণী
সাত্বত সম্বেদনাই হ’চ্ছে
সাহিত্যের প্রাণনদীপ্তি।’’ ২৪০ (শিক্ষা-বিধায়না)
‘‘পরিস্থিতির ভাল-মন্দ পরিচলনকে
আলোড়ন-বিলোড়ন ক’রে
সার্থক সঙ্গতিশীল সাত্বত পন্থায়
সাত্তিক মর্যাদায়
সুদীপ্ত ক’রে তোলাই হ’চ্ছে
সাহিত্যের সমীচীন তাৎপর্য,
আর তাই-ই হচ্ছে
জনগণের জীবনীয় সম্বর্দ্ধনা।’’ ২৪১ (শিক্ষা-বিধায়না)
‘‘সাহিত্যের মূল ভিত্তিই হ’চ্ছে---
জীবন ও কৃষ্টি,
অর্থাৎ, কৃষ্টি যা’তে জীবনকে
পোষণ প্রবৃদ্ধ ক’রে তুলে
বিবর্তনে উৎকীর্ণ ক’রে দেয়---
তেমনতর নিয়মনের ভিতর-দিয়ে
ঘটনাকে সন্নিবেশ করতঃ
মানুষের অন্তরে
বিবর্তনী আকূতিকে
অনুপ্রেরিত ক’রে তোলাই হচ্ছে---
সাহিত্যের মন্ত্র চালনা।’’ ২৪৫ (শিক্ষা-বিধায়না)
সাহিত্যের ওই মন্ত্র চালনা করতে যুগের প্রয়োজনে, ঈশ্বর, অবতার-বরিষ্ঠরূপে নরবপু ধারণ করেন। হিতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে সৃষ্ট হয় নব-নব সাহিত্য। বেদ-বেদান্ত, রামায়ণ, গীতা, ত্রিপিটক, বাইবেল, কোর-আন্, চৈতন্য-ভাগবত, চৈতন্য চরিতামৃত, রামকৃষ্ণ কথামৃত ইত্যাদি নামে সংকলিত এবং লব্ধপ্রতিষ্ঠ সাহিত্যিকদের যে-সব জীবন-সাহিত্যের সাথে আমরা পরিচিত হয়েছি, সেই সব সাহিত্যের বিভ্রান্তিগুলো অপসারনপূর্বক প্রকৃত মূল্যায়ন করে অনেক ভুল শুধরে দিয়েছেন। জীবনীয় উদ্ধৃতিগুলো নানাভাবে জনমানসে তুলে ধরে জীবন-সাহিত্যের রূপ দান করেছেন শ্রীশ্রীঠাকুর। যার মাধ্যমে অবতারবরিষ্ঠ পরম্পরাকে, ঋষিবাদকে, জীবনবাদী সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন শ্রীশ্রীঠাকুর। তাঁর শ্রীহস্ত লিখিত রচনা, স্মৃতি-বাণী, শ্রুতি বাণীসমূহ এক অভিনব বর্ণ-বিন্যাসে, শব্দ-বিন্যাসে, ব্যাকরণ-বিন্যাসে, পংক্তি-বিন্যাসে, ভাব-বিন্যাসে সমৃদ্ধ হয়ে সৃষ্টি করেছে এক সুসমাবিষ্ট, প্রাজ্ঞ জীবন-সাহিত্যের সম্ভার। তাঁর বাণী সাহিত্যে আমরা অনেক নবীন ভাষার সন্ধান পেয়েছি এবং আরও পেতে পারতাম যদি বর্তমানের ন্যায় দর্শ-শ্রুতি বৈদ্যুতিন মাধ্যমের সাহায্য পাওয়া যেত। যার অভাবে মহাসমাধির ভাববাণীর সময় প্রোক্ত অনেক বিদেশী ভাষাকে সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। তথাপি তাঁর সৃষ্ট বাণীসাহিত্যে সংস্কৃত, বাংলা, ইংরেজী ভাষার যে অনবদ্য প্রয়োগের সাথে আমরা পরিচিত হতে পেরেছি, তা’ সমৃদ্ধ করেছে মানবজীবনের একান্ত প্রয়োজনীয় প্রতিটি আঙ্গিককে। উপাসনা, সাধনা, লোক-ব্যবহার, দর্শন, কৃষ্টি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প, বিজ্ঞান, পরিবেশ-পরিচর্যা, বাণিজ্য, সমাজ, সমাজ-সংস্কার, দশবিধ-সংস্কার, বিবাহ, প্রজনন, রাষ্ট্র, পরমরাষ্ট্রিক সমবায়, ইত্যাদি সব কিছুই স্থান পেয়েছে তাঁর রচনায়। ওইসব বিধিবদ্ধ অনুশাসনগুলো জীবনকে জীবনীয়ভাবে উপভোগ করার রসদে পরিপূর্ণ। যা আমাদের জাগতিক এবং আধ্যাত্মিক সকল অভাবকে তাড়িয়ে দেবার ব্যবস্থা করে জীবনকে পূর্ণতার আস্বাদে ভরিয়ে দিতে এক নিশ্চিত নির্ভরশীল দিগদর্শন। সেই পূর্ণতার আস্বাদের স্বাদের নেশা ধরাতে,--- তাঁর সুললিত ভাষার বাণী-সাহিত্যের সাথে জগদ্বাসীকে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য শত বাধা-বিপত্তি, অভাব-অনটনকে অতিক্রম করে শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁর ভক্তদের কাছ থেকে কাগজ ভিক্ষা করেছেন, টাকা ভিক্ষা করেছেন পত্র-পত্রিকা এবং পুস্তকাকারে তাঁর বাণীগুলোকে সুলভ মূল্যে পৌঁছে দেবার মানসে। শুধু তাই নয়, তিনি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশের জন্যও জনে জনে বলেছেন। অনেক আত্মোৎসর্গকৃত ভক্ত তাঁর চাহিদা পূরণ করেছেন এবং এখনো করে চলেছেন। তাঁদের উদ্দেশ্যে প্রণাম নিবেদন করেই বলতে হয়, তাঁর সব চাহিদা পূরণের লক্ষ্যমাত্রাকে এখনো ছুঁতে পারিনি আমরা। গড়ে তুলতে পারিনি জীবনবাদী সত্তাপিয়াসী পাঠকসমাজ। একথা ঠিক যে, সাধারণ মানুষেরা অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে, প্রকৃত জীবনবাদী সাহিত্যের আস্বাদ নিতে, শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের দেবভাষার দেবসাহিত্য চর্চায় একদিন না একদিন এগিয়ে আসবেই। সেই শুভাগমনকে ত্বরান্বিত করতে, তাঁর বাণী-সাহিত্যকে দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষান্মাসিক, বার্ষিক পত্র-পত্রিকা মাধ্যমে উপঢৌকন রূপে সাজিয়ে তো রাখতে হবে, না কি ? ক্ষুদ্র আত্মস্বার্থ প্রতিষ্ঠাকে উপেক্ষা করে যদি দীক্ষাকালীন প্রতিজ্ঞা পূরণের শপথ স্মরণ করে ইষ্টস্বার্থ প্রতিষ্ঠায় আমাদের ইচ্ছাটাকে বিনিয়োগ করতে পারি, তবে---হবে, হবে, হবেই জয়। হাসি ফুটবে তাঁর মুখে। অন্তর্যামী পরমপিতার পরম করুণার প্রস্রবনের অমৃত ধারায় স্নাত হয়ে ভাল থাকবেন।
বন্দে পুরুষোত্তমম্! জয়গুরু! প্রণাম!

Post a Comment