Ads (728x90)

SRI SRI THAKUR VIDEO

Like this page

Recent Posts

World time

Add as a follower to automatically get updated Article. Jaiguru!

‘‘বিকাশ-ব্যাকুল গতিই যাঁর সংস্থিতি---
তিনিই সরস্বতী,
আর, বাক্ বা শব্দই যাঁর সত্তা---
তিনিই বাগ্দেবী‍;
তাই, যিনিই বাগ্দেবী
তিনিই সরস্বতী।’’
(সংজ্ঞা সমীক্ষা থেকে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বাণী।)

বর্তমানে ছাত্র-রাজনীতির কবলে পড়ে স্কুল-কলেজে বিদ্যা লাভ হোক না হোক, প্রচলিত সরস্বতী পূজা প্রায় সকলের জীবনেই অবিদ্যার যৌবনতরঙ্গের সিঁড়ির প্রথম ধাপে পা রাখার স্মৃতিমেদুর নস্টালজিক একটা বিষয় ।
দেবভাষা সংস্কৃতের সাথে সখ্যতার বিচ্ছেদ হলেও---
“জয় জয় দেবী চরাচর সারে কুচযুগ শোভিত মুক্তাহারে।
বীণা রঞ্জিত পুস্তক হস্তে ভগবতী ভারতি দেবী নমোহস্তুতে।।

(কোন পণ্ডিত উক্ত মন্ত্র রচনা করেছিলেন আমি জানি না । তবে এটুকু বুঝি যে স্তনযুগলকে মুক্তার হারের আভরণে সজ্জিত না করে, দেবীকে রজোগুণে সমৃদ্ধ না করে, সত্ত্বগুণে সমৃদ্ধ করলে ভাল করতেন। কারণ বিদ্যা লাভ মস্তিকের মেধানাড়ীতে সুপ্ত মানবিক-সাত্ত্বিক গুণের অনুশীলনে সম্পাদিত হয়, অঙ্গসৌষ্ঠবের সজ্জিত বিজ্ঞাপনে নয়।)


ওঁ সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।
বিশ্বরূপে বিশালাক্ষ্বি বিদ্যাং দেহী নমোহস্তুতে।।”---ইত্যাদি মন্ত্রগুলোর সাথে আমাদের বিশেষ পরিচিতি আছে। ওই অঞ্জলী মন্ত্র অনুযায়ী দেবী সরস্বতীই বিদ্যাদাত্রী, তাকে সাধনা করতে পারলেই বিদ্যা লাভ হবে।

বিদ্যা দু প্রকার পরা ও অপরা। ‘আত্মানং বিদ্ধি’ (Know Thyself,--- who am ‘I’ ?) অর্থাৎ নিজেকে জানার চেষ্টার পাঠক্রমকে বলা হয়েছে পরাবিদ্যা। পরাবিদ্যার পাঠক্রমে আমাদের শিক্ষক আর্য-ঋষিগণ বলেছেন, ‘‘যস্তু সর্বাণি ভূতান্যাত্মন্যেবানুপশ্যতি।/সর্বভূতেষু চাত্মানং ততো ন বিজুগুপ্সতে।।’’ (ঈশোপনিষদ) অর্থাৎ, যিনি নিজের আত্মাকেই সর্বাত্মারূপে উপলব্ধি করেন, তিনি কাহাকেও ঘৃণা করেন না। সর্বভূতে নিজেকে, নিজের মধ্যে সর্বভূতকে উপলব্ধি করেন। কেননা , আর্য্য হিন্দু শাস্ত্রমতে আমরা মানুষেরা ঐহিক জগতে দ্বৈত ভাবে অসম্পৃক্ত হয়েও সেই এক পরমাত্মার সাথে সম্পৃক্ত।



আবার তৈত্তরীয় উপনিষদের বিদ্যা দানের শান্তি পাঠে রয়েছে, ‘‘ওঁ সহ নাববতু। সহ নৌ ভুনক্তু। সহ বীর্য করবাবহৈ। তেজস্বি নাবধীতমস্তু মা বিদ্বিষাবহৈ। ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।।’’ যার মর্মার্থ হলো, আমরা সহমত হয়ে চলব, প্রকৃতির উপাদান সকলে স-মান (EQUITABLE) ভাবে ভাগ করে জীবন ধারণ করব। কারো প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করব না। আর অপরাবিদ্যার বিষয় ছিল জাগতিক শিক্ষা, যা ৬৪ কলা বিদ্যার মধ্যে নিহিত ছিল। (অন্তরাসীজন ৬৪ কলাবিদ্যার সিলেবাস জানতে আগ্রহী হলে জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস মহোদয়ের অভিধানে ‘কলা’ সবিশেষ পাঠ করে দেখতে পারেন। তা হলেই বুঝতে পারবেন বিদ্যা কাকে বলে।) পরাবিদ্যার শিক্ষকদের বলা হতো আচার্য্য আর অপরাবিদ্যার শিক্ষকদের উপাচার্য্য (তৈত্তিরীয় উপনিষদ)। যথার্থ প্রয়োগ না হলেও আচার্য্য এবং উপাচার্য্য শব্দদ্বয় বর্তমানেও বিদ্যমান।
তাই একটা প্রশ্ন স্বভাবতঃই জাগে, বিদ্যার্জনের প্রশ্নে আমরা যদি দেবী সরস্বতীর উপর সত্যিসত্যিই নির্ভরশীল হতাম, তাঁকে বিশ্বাস করতাম, তাহলে প্রভূত অর্থ ব্যয় করে, ছাত্র-নেতাদের ধরাধরি করে স্কুল-কলেজে ভর্তি হয়ে, বিষয় ভিত্তিক প্রাইভেট টিউটরের কাছে টুইশন নিতে যেতাম না, কারণ, এ-তো দ্বন্দ্বীবৃত্তি, বিশ্বাসকে অপমান করা।
যাই হোক, ওই মন্ত্রগুলোই শুধু নয়, আমাদের সব কথাই বাক্ হয়ে স্ফূরিত হয় বলে তিনি বাগ্দেবী রূপে কল্পিত হয়েছেন। অতএব যুক্তি বা বিজ্ঞান অনুযায়ী দেবী সরস্বতী মেধানাড়ীতে সুপ্ত, কণ্ঠে বা কলমে ব্যক্ত। একাগ্রতার অনুশীলনে মেধানাড়ী জাগ্রত না করতে পারলে, অর্থাৎ স্মৃতি যদি কাজ না করে মুখস্থ বলা যাবে না, লেখাও যাবে না। মেধানাড়ী ধ্রুবাস্মৃতির কাজ করে। উপনিষদে বর্ণিত আছে, আহার শুদ্ধৌ সত্ত্বাশুদ্ধিঃ, সত্ত্বাশুদ্ধৌ ধ্রুবাস্মৃতি ...... । তাই, বিদ্যা লাভ করতে হলে মেধানাড়ীকে জাগ্রত রাখতে হবে। আর, মেধানাড়ীকে জাগ্রত রাখতে আহারশুদ্ধির অর্থাৎ জীবনধারণের নিমিত্ত আহরণসমূহকে শুদ্ধ রাখতে হবে প্রবৃত্তি-পরায়ণতার নাগপাশ থেকে মুক্ত হয়ে।


সরস্বতীর কোন মূর্তি-পূজা করে নয়, আহত-নাদ রাম-নামের সাধন করে রত্নাকর দস্যু দেবী সরস্বতীকে মেধানাড়ীকে জাগ্রত করে, হয়েছিলেন বাল্মীকি। একদা তমসা নদী থেকে স্নান করে ফিরছিলেন। এক তরুশাখে ক্রৌঞ্চ-জুটি পরস্পর খেলছিল। এক ব্যাধ পুরুষ পাখিটিকে তীর মেরে হত্যা করলে স্ত্রী পাখিটি করুণ বিলাপ করতে থাকে। বাল্মীকি বিচলিত হয়ে ‘কোনদিন প্রতিষ্ঠা পাবে না’ বলে ব্যাধকে অভিসম্পাত করেন। সেই অভিশাপ বাণী স্বতঃস্ফূর্ত শ্লোকবদ্ধ হয়ে নির্গত হয়েছিল :--‘‘মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শাশ্বতী সমাঃ/যৎ ক্রৌঞ্চমিথুনাদেকম্ অবধী কামমোহিতম্।’’ এই শ্লোকটিকে পৃথিবীর সারস্বত সাধকেরা আদি শ্লোক বলে মান্য করেন। অতএব, সারস্বত সাধনার মূল বিষয় মেধানাড়ী বা স্মৃতিবাহী চেতনার জাগরণ।
বর্তমান পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আমাদের বিদ্বান করার জন্য আজ্ঞাচক্রে অনাহত-নাদের সৎমন্ত্র সাধন এবং সদাচার মাধ্যমে আমাদের মেধানাড়ীকে জাগ্রত করার সহজ উপায় দান করেই ক্ষান্ত হন নি, ‘নিয়তং স্মৃতিচিদযুতে’- বাণীতে স্বস্ত্যয়নী ব্রতের মন্ত্রের মাধ্যমে স্মৃতিবাহী চেতনাকে জাগ্রত করার বিধান দিয়ে দেবী সরস্বতীর আরাধনার নিমিত্ত স্থায়ী আসন পেতে দিলেন। আমরা একটু চেষ্টা করলেই সেই বিধিগুলোকে অনুশীলন মাধ্যমে প্রকৃত অর্থে দেবী সরস্বতীকে সম্বর্দ্ধিত করে, প্রকৃত অর্থে পূজা করে নিত্য, শুদ্ধ, বুদ্ধ,পবিত্র হতে পারব।

জয়গুরু!

Post a Comment