Ads (728x90)

SRI SRI THAKUR VIDEO

Like this page

Recent Posts

World time

Add as a follower to automatically get updated Article. Jaiguru!

শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ও বলরাম-মন্দিরে
প্রথম পরিচ্ছেদ

১৮৮৩, ২৫শে ফেব্রুয়ারি

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে রাখাল, রাম, নিত্যগোপাল, চৌধুরী প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে

[নির্জনে সাধন -- ফিলজফি -- ঈশ্বরদর্শন ]

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ সেই পূর্ব পরিচিত ঘরে মধ্যাহ্নে সেবার পর ভক্তসঙ্গে বসিয়া আছেন। আজ ২৫শে ফেব্রুয়ারি, ১৮৮৩ খ্রীষ্টাব্দ (রবিবার, ১৪ই ফাল্গুন, কৃষ্ণা তৃতীয়া)।

রাখাল, হরিশ, লাটু, হাজরা আজকাল ঠাকুরের পদছায়ায় সর্বদা বাস করিতেছেন। কলিকাতা হইতে রাম, কেদার, নিত্যগোপাল, মাস্টার প্রভৃতি ভক্তেরা আসিয়াছেন। আর চৌধুরী আসিয়াছেন।

চৌধুরীর সম্প্রতি পত্নীবিয়োগ হইয়াছে। মনের শান্তির জন্য তিনি ঠাকুরকে দর্শন করিতে কয়বার আসিয়াছেন। তিনি চারটা পাশ করিয়াছেন -- রাজ সরকারের কাজ করেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ (রাম প্রভৃতি ভক্তদের প্রতি) -- রাখাল, নরেন্দ্র, ভবনাথ এরা নিত্য সিদ্ধ -- জন্ম থেকেই চৈতন্য আছে। লোকশিক্ষার জন্যই শরীরধারণ।

“আর-একথাক আছে কৃপাসিদ্ধ। হঠাৎ তাঁর কৃপা হল -- অমনি দর্শন আর জ্ঞানলাভ। যেমন হাজার বছরের অন্ধকার ঘর -- আলো নিয়ে গেলে একক্ষণে আলো হয়ে যায়! -- একটু একটু করে হয় না

“যাঁরা সংসারে আছে তাদের সাধন করতে হয়। নির্জনে গিয়ে ব্যাকুল হয়ে তাঁকে ডাকতে হয়।

(চৌধুরীর প্রতি) -- “পাণ্ডিত্য দ্বারা তাঁকে পাওয়া যায় না।

“আর তাঁর বিষয় কে বিচার করে বুঝবে? তাঁর পাদপদ্মে ভক্তি যাতে হয়, তাই সকলের করা উচিত।”

[ভীষ্মদেবের ক্রন্দন -- হার-জিত -- দিব্যচক্ষু ও গীতা ]

“তাঁর অনন্ত ঐশ্বর্য -- কি বুঝবে? তাঁর কার্যই বা কি বুঝতে পারবে?

“ভীষ্মদেব যিনি সাক্ষাৎ অষ্টবসুর একজন বসু -- তিনিই শরশয্যায় শুয়ে কাঁদতে লাগলেন। বললেন -- কি আশ্চর্য! পাণ্ডবদের সঙ্গে স্বয়ং ভগবান সর্বদাই আছেন, তবু তাদের দুঃখ-বিপদের শেষ নাই! ভগবানের কার্য কে বুঝবে!

“কেউ মনে করে আমি একটু সাধন-ভজন করেছি, আমি জিতেছি। কিন্তু হার-জিত তাঁর হাতে। এখানে একজন মাগী (বেশ্যা) মরবার সময় সজ্ঞানে গঙ্গালাভ করলে।”

চৌধুরী -- তাঁকে কিরূপে দর্শন করা যায়?

শ্রীরামকৃষ্ণ -- এ-চক্ষে দেখা যায় না। তিনি দিব্যচক্ষু দেন, তবে দেখা যায়। অর্জুনকে বিশ্বরূপ-দর্শনের সময় ঠাকুর দিব্যচক্ষু দিছলেন।

“তোমার ফিলজফিতে (Philosophy) কেবল হিসাব কিতাব করে! কেবল বিচার করে! ওতে তাঁকে পাওয়া যায় না।”

[অহেতুকী ভক্তি -- মূলকথা -- রাগানুগাভক্তি ]

“যদি রাগভক্তি হয় -- অনুরাগের সহিত ভক্তি -- তাহলে তিনি স্থির থাকতে পারেন না।

“ভক্তি তাঁর কিরূপ প্রিয় -- খোল দিয়ে জাব যেমন গরুর প্রিয় -- গবগব করে খায়।

“রাগভক্তি -- শুদ্ধাভক্তি -- অহেতুকী ভক্তি। যেমন প্রহ্লাদের।

“তুমি বড়লোকের কাছে কিছু চাও না -- কিন্তু রোজ আস -- তাকে দেখতে ভালবাস। জিজ্ঞাসা করলে বল, ‘আজ্ঞা, দরকার কিছু নাই -- আপনাকে দেখতে এসেছি।’ এর নাম অহেতুকী ভক্তি। তুমি ঈশ্বরের কাছে কিছু চাও না -- কেবল ভালবাস।”

এই বলিয়া ঠাকুর গান গাহিতেছেন:

আমি মুক্তি দিতে কাতর নই
শুদ্ধাভক্তি দিতে কাতর হই।
আমার ভক্তি যেবা পায়, তারে কেবা পায়,
সে যে সেবা পায়, হয়ে ত্রিলোকজয়ী ৷৷
শুন চন্দ্রাবলী ভক্তির কথা কই।
ভক্তির কারণে পাতাল ভবনে,
বলির দ্বারে আমি দ্বারী হয়ে রই ৷৷
শুদ্ধাভক্তি এক আছে বৃন্দাবনে,
গোপ-গোপী বিনে অন্যে নাহি জানে।
ভক্তির কারণে নন্দের ভবনে,
পিতাজ্ঞানে নন্দের বাধা মাথায় বই ৷৷

“মূলকথা ঈশ্বরে রাগানুগা ভক্তি। আর বিবেক বৈরাগ্য।”

চৌধুরী -- মহাশয়, গুরু না হলে কি হবে না?

শ্রীরামকৃষ্ণ -- সচ্চিদানন্দই গুরু।

“শবসাধন করে ইষ্টদর্শনের সময় গুরু সামনে এসে পড়েন -- আর বলেন, ‘ওই দেখ্‌ তোর ইষ্ট।’ -- তারপর গুরু ইষ্টে লীন হয়ে যান। যিনি গুরু তিনিই ইষ্ট। গুরু খেই ধরে দেন।

“অনন্তব্রত করে। কিন্তু পূজা করে -- বিষ্ণুকে। তাঁরই মধ্যে ঈশ্বরের অনন্তরূপ!”

[শ্রীরামকৃষ্ণের সর্বধর্ম-সমন্বয় ]

(রামাদি ভক্তদের প্রতি) -- “যদি বল কোন্‌ মূর্তির চিন্তা করব; যে-মূর্তি ভাল লাগে তারই ধ্যান করবে। কিন্তু জানবে যে, সবই এক।

“কারু উপর বিদ্বেষ করতে নাই। শিব, কালী, হরি -- সবই একেরই ভিন্ন ভিন্ন রূপ। যে এক করেছে সেই ধন্য।

“বহিঃ শৈব, হৃদে কালী, মুখে হরিবোল।

“একটু কাম-ক্রোধাদি না থাকলে শরীর থাকে না। তাই তোমরা কেবল কমাবার চেষ্টা করবে।”

ঠাকুর কেদারকে দেখিয়া বলিতেছেন --

“ইনি বেশ। নিত্যও মানেন, লীলাও মানেন। একদিকে ব্রহ্ম, আবার দেবলীলা-মানুষলীলা পর্যন্ত।”

কেদার বলেন যে, ঠাকুর মানুষদেহ লইয়া অবতীর্ণ হইয়াছেন।

[সন্ন্যাসী ও কামিনী -- ভক্তা স্ত্রীলোক ]

নিত্যগোপালকে দেখিয়া ঠাকুর ভক্তদের বলিতেছেন --

“এর বেশ অবস্থা!

(নিত্যগোপালের প্রতি) -- “তুই সেখানে বেশি যাসনি। -- কখনও একবার গেলি। ভক্ত হলেই বা -- মেয়েমানুষ কিনা। তাই সাবধান।

সন্ন্যাসীর বড় কঠিন নিয়ম। স্ত্রীলোকের চিত্রপট পর্যন্ত দেখবে না। এটি সংসারী লোকেদের পক্ষে নয়।

স্ত্রীলোক যদি খুব ভক্তও হয় -- তবুও মেশামেশি করা উচিত নয়। জিতেন্দ্রিয় হলেও -- লোকশিক্ষার জন্য ত্যাগীর এ-সব করতে হয়।

সাধুর ষোল আনা ত্যাগ দেখলে অন্য লোকে ত্যাগ করতে শিখবে। তা না হলে তারাও পড়ে যাবে। সন্ন্যাসী জগদ্‌গুরু।”

এইবার ঠাকুর ও ভক্তেরা উঠিয়া বেড়াইতেছেন। মাস্টার প্রহ্লাদের ছবির সম্মুখে দাঁড়াইয়া ছবি দেখিতেছেন। প্রহ্লাদের অহেতুকী ভক্তি -- ঠাকুর বলিয়াছেন।


Post a Comment