Ads (728x90)

SRI SRI THAKUR VIDEO

Like this page

Recent Posts

World time

Add as a follower to automatically get updated Article. Jaiguru!

আদি শঙ্করাচার্য (৭৮৮-৮২০)
আদি শঙ্করাচার্য (৭৮৮-৮২০) আদি শঙ্করাচার্য ছিলেন একজন দার্শনিক। ‘অদ্বৈত বেদান্ত’ নামে হিন্দু দর্শনের যে শাখাটি আছে, তিনি ছিলেন সেই শাখার একজন প্রবক্তা। সারা ভারত ঘুরে ঘুরে তিনি তাঁর মত প্রচার করেছিলেন। দেশের চার প্রান্তে স্থাপন করেছিলেন চারটি মঠ। মূলত তাঁরই প্রচেষ্টায় হিন্দুধর্ম ও তার অদ্বৈত বেদান্ত মতটি নতুন করে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

এখনকার কেরল রাজ্যের কালাডি নামে একটি গ্রামে শঙ্করাচার্যের জন্ম হয়েছিল। ছেলেবেলা থেকেই লেখাপড়ায় বেশ ভাল ছিলেন। মাত্র আট বছর বয়সেই চারখানি বেদ পড়ে শেষ করে ফেলেন। তারপর খুব অল্প বয়সে সন্ন্যাসী হয়ে যান তিনি। কেরল ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন উত্তর ভারতের উদ্দেশ্যে। হিন্দুধর্মকে পথনির্দেশ দেওয়ার জন্য ভারতের চার প্রান্তে স্থাপন করেন চারখানি মঠ। এই মঠগুলি হল শৃঙ্গেরী (এখনকার কর্ণাটক রাজ্যে), দ্বারকা (এখনকার গুজরাত রাজ্যে), পুরী (এখনকার ওড়িশা রাজ্যে) ও জ্যোতির্মঠ বা জোশিমঠ (এখনকার উত্তরাখণ্ড রাজ্যে)।
হিন্দুদের তিনখানি অন্যতম প্রধান ধর্মগ্রন্থ হল উপনিষদ, ব্রহ্মসূত্র ও ভাগবত গীতা। এই তিনটি বইয়ের উপর শঙ্করাচার্য যে ভাষ্য বা টীকা লিখেছিলেন, তা খুবই বিখ্যাত। এছাড়া আরও কয়েকটি দর্শন গ্রন্থ এবং দেবদেবীদের স্তবস্তুতিও রচনা করেছিলেন তিনি।
সেই সময় হিন্দুধর্ম নানাভাবে পিছিয়ে পড়েছিল। শঙ্করাচার্য সেই পিছিয়ে পড়া হিন্দুধর্মকে পুনরায় জাগিয়ে তোলার ব্যাপারে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেন। তাঁর প্রচারকার্যের ফলে ভারতে বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্মের প্রভাব কমতে শুরু করে। মাত্র বত্রিশ বছর বেঁচেছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর হিন্দুধর্ম সংস্কারের কথা আজও লোকে সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করে। একটি সম্প্রদায় আজও তাঁর মতাবলম্বী।
শঙ্কর তাঁর দর্শন প্রচার করার জন্য বক্তৃতা দিয়ে ও অন্যান্য চিন্তাবিদের সাথে বিতর্ক করে ভারতব্যাপী এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অংশ ভ্রমণ করেন। অদ্বৈত বেদান্তের ঐতিহাসিক উন্নয়ন, পুনর্জাগরণ এবং প্রসারে সাহায্য করার জন্য চারটি মঠ প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাঁর সুখ্যাতি আছে। বিশ্বাস করা হয় যে, আদি শঙ্কর দশনামী সন্ন্যাসী ক্রমের সংগঠক এবং পূজার সম্মত ঐতিহ্যের প্রতিষ্ঠাতা।
সংস্কৃতে তাঁর কাজ ছিল অদ্বৈত মতবাদ প্রতিষ্ঠা সম্পর্কিত। তিনি এমন এক সময়ে উপনিষদ ও ব্রহ্ম সূত্রে অনুমোদিত সন্ন্যাসী জীবনের গুরুত্বও প্রতিষ্ঠা করেন যখন মীমাংসা পাঠশালা কঠোর ধর্মীয় আচার প্রতিষ্ঠা করেছিল এবং সন্ন্যাস-ব্রতকে বিদ্রুপ করেছিল। শঙ্কর উপনিষদে প্রাপ্ত ধারণাসমূহের বিশদ বর্ণনা হিসেবে তাঁর কাজসমূহ উপস্থাপন করেন এবং তিনি তাঁর তত্ত্বের সমর্থনে বৈদিক অনুশাসনের (ব্রহ্ম সূত্র, মূল উপনিষদসমূহ এবং ভাগবত গীতা) উপর প্রাচুর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন। তাঁর কাজে প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল মীমাংসা ধী গোষ্ঠী, যদিও তিনি শাক্যের মত কিছু পাঠশালা এবং বৌদ্ধ ধর্মের নির্দিষ্ট কিছু পাঠশালার দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি মতানৈক্য প্রস্তাব করেন।
জীবনীঃ
আদি শঙ্করের প্রথাগত জীবনী পাওয়া যাবে শঙ্কর বিজয়মে যেটি মহাকাব্যিক ধরণে লিখিত কাব্যিক কাজ যাতে রয়েছে জীবনী ও পৌরাণিক উপাদানের মিশ্রণ। এ জীবনীগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মাধব শঙ্কর বিজয়ম (মাধবের, ১৪তম শতাব্দী), চিদবিলাস শঙ্কর বিজয়ম (চিদবিলাসের, ১৫তম এবং ১৭তম শতাব্দীর মধ্যে), এবং কেরালা শঙ্কর বিজয়ম (কেরালা এলাকার, ১৭তম শতাব্দী)।
জন্ম ও শৈশবঃ
শঙ্কর বর্তমান সময়ের কেরালার কালাদিতে বা এর নিকটে ব্রাহ্মণ সমাজের শ্রী শিবাগুরু ঔরসে এবং আরিআম্বার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। লোক-জ্ঞান অনুসারে তাঁর পিতামাতা অনেক বছর সন্তানহীন থাকার পর তারা থ্রিসুরের ভাদাক্কুন্নাথান মন্দিরে প্রার্থনা করলে শঙ্কর থিরুভাথিরা নক্ষত্রে জন্মগ্রহণ করেন। শঙ্করের বয়স যখন খুব অল্প তখন তাঁর পিতা মারা যান। তাঁর পিতার মৃত্যুর কারণে শঙ্করের উপনয়ন, ছাত্র-জীবনে দীক্ষাগ্রহণ বিলম্বিত হয় এবং পরে তাঁর মাতা কর্তৃক এগুলো সম্পাদন করা হয়। শিশু হিসেবে আট বছর বয়সের মধ্যে চারটি বেদ আয়ত্ত করে শঙ্কর অসামান্য পান্ডিত্য দেখান।
সন্ন্যাসঃ
নবীন বয়স থেকে শঙ্কর সন্ন্যাস জীবনের প্রতি ঝুঁকে পড়েন, কিন্ত্তু অনেক প্ররোচনার পরই তাঁর মাতা এতে তাঁর অনুমতি দেন। একদিন পুকুরে স্নান করার সময় শঙ্কর তাঁর মায়ের অনুমতি পান যখন একটি কুমির তাঁর পা ধরেছিল। সে সময়ে তাঁর মাতা পুকুরের নিকট আসলে শঙ্কর সন্ন্যাসী হবার প্রার্থনা জানিয়ে তাঁর মায়ের নিকট আবদেন জানান। কুমিরটি যাতে যুবক শঙ্করকে ছেড়ে দেয় তার জন্যই তাঁর মাতা চূড়ান্ত অনুমতি দেন। শঙ্কর তারপর কেরালা ছেড়ে উত্তর ভারতের উদ্দেশ্যে এক গুরুর খোঁজে বের হন। নর্মদা নদীর তীরে তিনি গৌরপদের শিষ্য গোবিন্দ ভগবতপদের দেখা পান। যখন গোবিন্দ ভগবতপদ শঙ্করের পরিচয় জিজ্ঞাসা করেন, তিনি পূর্বচিন্তা ছাড়াই এক শ্লোকের মাধ্যমে উত্তর দেন যা অদ্বৈত বেদান্তের দর্শন ব্যক্ত করে। গোবিন্দ ভগবতপদ প্রভাবিত হন এবং শঙ্করকে তাঁর শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন। গুরু শঙ্করকে ব্রহ্ম সূত্রের উপর একটি ব্যাখ্যা/ভাষ্য লিখতে এবং অদ্বৈত দর্শন প্রচার করতে নির্দেশ দেন। শঙ্কর কাশীতে ভ্রমণ করেন যেখানে দক্ষিণ ভারতের চোলা এলাকা থেকে আগত সদানন্দ নামের এক যুবক তাঁর প্রথম শিষ্য হন। লোককাহিনী অনুসারে বিশ্বনাথ মন্দিরে যাবার পথে শঙ্কর চারটি কুকুরের সঙ্গে থাকা এক অস্পৃশ্যের দেখা পান। শঙ্করের শিষ্যরা তাঁকে পাশে সরতে বললে অস্পৃশ্যটি উত্তর দেন: “আপনারা কি চান আমি আমার চিরস্থায়ী আত্মাকে সরাব নাকি রক্ত-মাংসে গঠিত এ শরীরটাকে?” অস্পৃশ্যটি ভগবান শিব এবং তাঁর চারটি কুকুর চার বেদ ছাড়া আর কিছুই নয় এটা উপলব্ধি করে শঙ্কর তাঁর সম্মুখে সাষ্টাঙ্গপ্রণত হলেন এবং মনীষা পঞ্চকম নামে পরিচিত পাঁচটি শ্লোক রচনা করেন। বাদারীতে তিনি তাঁর বিখ্যাত ভাষ্য এবং প্রকারণ গ্রন্থসমূহ লেখেন।
মন্দন মিশ্রের সাথে সাক্ষাৎঃ
আদি শঙ্করের সবচেয়ে বিখ্যাত বিতর্কসমূহের মধ্যে অন্যতম ছিল আচার-অনুষ্ঠান কঠোরভাবে পালনকারী মন্দন মিশ্রের সঙ্গে তর্ক। মন্দন মিশ্র এ দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করতেন যে গৃহস্থের জীবন একজন সন্ন্যাসীর জীবনের থেকে অনেক শ্রেয়। সে সময়ে ভারতব্যাপী এ দৃষ্টিভঙ্গিকে ব্যাপকভাবে সম্মান করা হতো।] এতদনুসারে তার সাথে আদি শঙ্করের বিতর্ক করা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মন্দন মিশ্রের গুরু ছিলেন বিখ্যাত মীমাংসা দার্শনিক কুমারিলা ভট্ট। শঙ্কর কুমারিলা ভট্টের সাথে একটি বিতর্ক চান এবং তার সঙ্গে প্রয়াগে দেখা করেন যেখানে তিনি তার গুরুর বিরুদ্ধে করা পাপের জন্য অনুশোচনা করার জন্য নিজেকে একটি মৃদু জ্বলন্ত চিতাতে সমাহিত করেছিলেন: কুমারিলা ভট্ট তার বৌদ্ধ গুরুর নিকট মিথ্যা ছলে বৌদ্ধ দর্শন শিখেছিলেন একে অসত্য/অমূলক বলে প্রতিপন্ন করার জন্য। বেদ অনুসারে কেউ গুরুর কর্তৃত্বের অধীণে থেকে তাঁর অজ্ঞাতসারে কিছু শিখলে তা পাপ বলে বিবেচিত হয়। সুতরাং কুমারিলা ভট্ট তার পরিবর্তে আদি শঙ্করকে মহিসমতিতে (বর্তমানে বিহারের সহরসা জেলার মহিষী নামে পরিচিত) গিয়ে মন্দন মিশ্রের সাথে দেখা করে তার সঙ্গে বিতর্ক করতে বলেন। পনের দিনের অধিক বিতর্ক করার পর মন্দন মিশ্র পরাজয় স্বীকার করেন, যেখানে মন্দন মিশ্রের সহধর্মিণী উভয়া ভারতী বিচারক হিসেবে কাজ করেন। উভয়া ভারতী তখন আদি শঙ্করকে ‘বিজয়’ সম্পূর্ণ করার জন্য তার সঙ্গে বিতর্কে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আহ্বান জানান। তিনি আদি শঙ্করকে পুরুষ ও মহিলার মধ্যকার যৌন সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্ন করেন – যে বিষয়ে শঙ্করাচার্যের কোন জ্ঞান ছিল না, কারণ তিনি ছিলেন কুমার এবং সন্ন্যাসী। শ্রী শঙ্করাচার্য ১৫ দিনের “বিরতি” চান। লোককাহিনী অনুসারে তিনি “পর-কায়া প্রবেশের” শিল্প (আত্মা এর নিজের দেহ থেকে বের হয়ে অন্যের দেহে প্রবেশ) ব্যবহার করেন এবং তাঁর নিজের দেহ থেকে বের হন, যেটি(দেহ) তিনি তাঁর শিষ্যদের দেখাশোনা করার জন্য বলেন এবং দৈহিকভাবে একজন রাজার মৃতদেহে প্রবেশ করেন। গল্পে আছে যে রাজার দুই স্ত্রীর নিকট তিনি “ভালবাসা শিল্পের” সকল জ্ঞান অর্জন করেন। রানীরা “পুনরুজ্জীবিত” রাজার তীক্ষ্ন মেধা ও প্রবল ভালবাসায় রোমাঞ্চিত হয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন যে তিনি তাদের পুরনো স্বামী ছিলেন না। গল্পটি আরো বলে যে তারা তাদের রাতদিনের কাজের লোকদের “এক যুবক সাধুর প্রাণহীন দেহ অনুসন্ধান করতে এবং তা শীঘ্র দাহ করতে” পাঠান যাতে তাদের “রাজা” (রাজার দেহে শঙ্করাচার্য) তাদের সাথে বাস করা অব্যাহত রাখেন। চাকররা শঙ্করাচার্যের প্রাণহীন দেহ চিতার উপর রেখে এতে আগুন দিতে যাওয়া মাত্রই শঙ্কর তাঁর নিজের দেহে প্রবেশ করেন এবং পুনরায় জ্ঞান ফিরে পান। পরিশেষে তিনি উভয়া ভারতীর সকল প্রশ্নের উত্তর দেন; এবং উভয়া ভারতী বিতর্কের পূর্ব-সম্মত নিয়মানুসারে মন্দন মিশ্রকে সুরেশ্বরাচার্য সন্ন্যাসী-নাম ধারণ করে সন্ন্যাস গ্রহণ করার অনুমতি দেন।
বিতর্কে সভায় শঙ্করাচার্য
দার্শনিক ভ্রমণঃ
আদি শঙ্কর তারপর তাঁর শিষ্যদের সাথে নিয়ে মহারাষ্ট্র ও শ্রীশৈলম ভ্রমণ করেন। শ্রীশৈলে তিনি শিবের প্রতি ভক্তিমূলক স্তোত্রগীত শিবানন্দলাহিড়ী রচনা করেন। মাধবীয়া শঙ্করাবিজয়াম অনুসারে যখন শঙ্কর কপালিকা দ্বারা বলি হতে যাচ্ছিলেন, পদ্মপদাচার্যের প্রার্থনার উত্তরস্বরুপ ভগবান নরসিংহ শঙ্করকে রক্ষা করেন। ফলস্বরুপ আদি শঙ্কর লক্ষ্মী-নরসিংহ স্তোত্র রচনা করেন। তারপর তিনি গোকর্ণ, হরি-শঙ্করের মন্দির এবং কোল্লুড়ে মুকাম্বিকা মন্দির ভ্রমণ করেন। কোল্লুড়ে তিনি এক বালককে শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন যে বালকটিকে তার পিতামাতা বাকশক্তিহীন বলে মনে করতেন। শঙ্কর তার নাম দেন হষ্টমালাকাচার্য (“বৈঁচি-জাতীয় ফল হাতে কেউ”, অর্থাৎ যিনি নিজেকে পরিষ্কারভাবে উপলব্ধি করেছেন)|পরবর্তীতে তিনি সারদা পীঠ প্রতিষ্ঠা করতে শৃঙ্গেরী ভ্রমণ করেন এবং তোতাকাচার্যকে তাঁর শিষ্য বানান। এরপর আদি শঙ্কর অদ্বৈত দর্শনের বিরোধিতা করা সকল দর্শন অস্বীকারের দ্বারা এর প্রচারের জন্য দিগ্বিজয় ভ্রমণ শুরু করেন। তিনি দক্ষিণ ভারত হতে কাশ্মীর অভিমুখে ভারতের সর্বত্র এবং নেপাল ভ্রমণ করেন এবং পথিমধ্যে সাধারন মানুষের মাঝে দর্শন প্রচার করেন এবং হিন্দু, বৌদ্ধ ও অন্যান্য পন্ডিত ও সন্ন্যাসীদের সাথে দর্শন বিষয়ে তর্ক করেন।
মালায়ালী রাজা সুধনভকে সঙ্গী হিসেবে নিয়ে শঙ্কর তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং বিদর্ভের মধ্য দিয়ে যান। এরপর তিনি কর্ণাটকের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন যেখানে তিনি একদল সশস্ত্র কাপালিকার সামনে পড়েন। রাজা সুদনভ তার সঙ্গীদের নিয়ে প্রতিরোধ করেন এবং কাপালিকাদের পরাজিত করেন। তারা নিরাপদে গোকর্ণে পৌঁছান যেখানে শঙ্কর বিতর্কে শৈব পন্ডিত নীলাকান্তকে পরাজিত করেন। সৌরাষ্ট্রের (প্রাচীন খাম্বোজা) দিকে অগ্রসর হয়ে এবং গিরনার, সোমনাথ ও প্রভাসার সমাধিমন্দিরসমূহ ভ্রমণ শেষে এবং এ সকল স্থানে বেদান্তের শ্রেষ্ঠত্ব ব্যাখ্যা করে তিনি দ্বারকা পৌঁছান। উজ্জয়িনীর ভেদ-অভেদ দর্শনের প্রস্তাবক ভট্ট ভাস্কর হতগর্ব হলেন। উজ্জয়িনীর সকল পন্ডিত (অবন্তী নামেও পরিচিত) আদি শঙ্করের দর্শন গ্রহণ করলেন। এরপর তিনি বাহলিকা নামক এক জায়গায় দার্শনিক বিতর্কে জৈনদের পরাজিত করেন। তারপর তিনি কাম্বোজা (উত্তর কাশ্মীরের এলাকা), দারোদা ও মরুভূমিটিতে অবস্থিত অনেক এলাকার কয়েকজন দার্শনিক এবং তপস্বীর উপর তাঁর বিজয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রকান্ড পর্বতচূড়া অতিক্রম করে কাশ্মীরে প্রবেশ করেন। পরবর্তীতে তিনি কামরুপে এক তান্ত্রিক নবগুপ্তের সম্মুখীন হন।
সারদা পীঠে আরোহণঃ
আদি শঙ্কর কাশ্মীরে (বর্তমানে পাকিস্তান-দখলকৃত কাশ্মীর) সারদা পীঠ ভ্রমণ করেন।[২১] মাধবীয়া শঙ্করাবিজয়ম অনুসারে এ মন্দিরে চারটি প্রধান দিক থেকে পন্ডিতদের জন্য চারটি দরজা ছিল। দক্ষিণ দরজা (দক্ষিণ ভারতের প্রতিনিধিত্বকারী) কখনই খোলা হয়নি যা নির্দেশ করত যে দক্ষিণ ভারত থেকে কোনো পন্ডিত সারদা পীঠে প্রবেশ করেনি। সকল জ্ঞানের শাখা যেমন মীমাংসা, বেদান্ত এবং অন্যান্য হিন্দু দর্শনের শাখাসমূহে সকল পন্ডিতকে বিতর্কে পরাজিত করে আদি শঙ্কর দক্ষিণ দরজা খোলেন; তিনি সে মন্দিরের সর্বোৎকৃষ্ট জ্ঞানের সিংহাসনে আরোহণ করেন। তাঁর জীবনের শেষদিকে আদি শঙ্কর হিমালয়ের এলাকা কেদারনাথ-বদ্রীনাথে যান এবং বিদেহ মুক্তি (“মূর্তরুপ থেকে মুক্তি”) লাভ করেন। কেদারনাথ মন্দিরের পিছনে আদি শঙ্করের প্রতি উৎসর্গীকৃত সমাধি মন্দির রয়েছে। যাহোক, স্থানটিতে তাঁর শেষ দিনগুলির বিভিন্ন পরম্পরাগত মতবাদ রয়েছে। কেরালীয়া শঙ্করাবিজয়াতে ব্যাখ্যাকৃত এক পরম্পরাগত মতবাদ তাঁর মৃত্যুর স্থান হিসেবে কেরালার থ্রিসুরের বদাক্কুন্নাথান মন্দিরকে নির্দেশ করে। কাঞ্চী কামাকোটি পীঠের অনুসারীরা দাবি করেন যে তিনি সারদা পীঠে আরোহণ করেন এবং কাঞ্চীপুরমে (তামিলনাড়ু) বিদেহ মুক্তি লাভ করেন।
মঠসমূহঃ
আদি শঙ্কর হিন্দু ধর্মের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করার জন্য চারটি মঠ প্রতিষ্ঠা করেন। এগুলো দক্ষিণে কর্ণাটকের শৃঙ্গেরীতে, পশ্চিমে গুজরাটের দ্বারকায়, পূর্বে ওড়িশার পুরীতে এবং উত্তরে উত্তরখন্ডের জ্যোতির্মঠে (জোসিরমঠে)| হিন্দু পরম্পরাগত মতবাদ বিবৃত করে যে তিনি এসব মঠের দায়িত্ব দেন তাঁর চারজন শিষ্যকে যথাক্রমে: সুরেশ্বরা, হষ্টমালাকাচার্য, পদ্মপদ এবং তোতাকাচার্য। এ চারটি মঠের প্রত্যেক প্রধান প্রথম শঙ্করাচার্যের নামানুসারে শঙ্করাচার্য (“পন্ডিত শঙ্কর”) উপাধি গ্রহণ করেন।
::::::বিশ্বকোষ অবল্ভনে সংকলিত :::::::::অরুন মজুমদার, ঢাকা,

Collected

Post a Comment