Ads (728x90)

SRI SRI THAKUR VIDEO

Like this page

Recent Posts

World time

Add as a follower to automatically get updated Article. Jaiguru!

তো
মার পূজার ছলে তোমায় ভুলেই থাকিদার্শনিক কবির এই ধ্রুবসত্য উচচারণ একদমই অভ্রান্ত বলা যায়৷ ব্যত্তিুপূজার ছলনায় আমরা ব্যত্তিুর আদর্শ, তার বলা কথা ও চলা পথকে অনেক দূরে সরিয়ে রেখে রোজনামচার ধূলি-মলিন আচার-আচরণ সর্বস্বতায় নিজেদের হারিয়ে ফেলি৷ কিন্তু কখনোই কোনও মহান মানব তাদের শেষ ইচছাপত্রে ঘরে ঘরে পূজিবে মোরেএমন বাণী রেখে যাননি৷ ভাবুন তো, গৌতম বুদ্ধ তাঁর মহানির্বাণের কালে কুশীনগরের উদ্যানে দুই শাল বৃক্ষের মাঝে উত্তর দিকে মাথা রেখে প্রিয় শিষ্য আনন্দকে বলে গিয়েছিলেন, কোথাও যেন তাঁর মূর্তি নির্মাণ করে পূজা করা না হয়৷ অথচ বৌদ্ধদের চতুর্থ মহাসংহতির পর থেকে দিকে দিকে থেরবাদীদের জায়গায় মহাযানবাদীদের প্রভাব বিস্তারের সঙ্গে বুদ্ধমূর্তি নির্মাণ বহুল পরিমাণে ছড়িয়ে পড়ল৷ আরও পরে বৌদ্ধ ধর্ম ও তান্ত্রিকতার ধর্ম মিলিয়ে মিশিয়ে একাকার হয়ে গেল তন্ত্রযান, সহজযান প্রভৃতি ধারার মধ্যে৷
গৌতম বুদ্ধের মতোই চৈতন্যদেবও ধর্মপ্রচার নয় সামাজিক সংস্কারকেই মুখ্য করে দেখিয়েছিলেন, একথা মানতে খুব কষ্ট হয়? ঈশ্বরবিশ্বাসের মধ্যে দিয়ে সমাজকেও সুন্দর করে তোলা৷
মধ্যযুগের বাংলায় বৌদ্ধ পালদের পর এল ব্রাহ্মণ্যবাদী সেনদের কাল৷ জাতপাতের ভেদ ও সামাজিক সংস্কার এত প্রবল হয়ে উঠল যে তার প্রতাপ রামমোহন-বিদ্যাসাগরের কালেও প্রখর রৌদ্রের মতোই অনুভূত হয়েছে৷ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে শেষ সেন রাজা লক্ষ্মন সেন মুসলিম আক্রমন প্রতিহত করতে না পেরে নবদ্বীপ ছেড়ে পূর্ববঙ্গে চলে যান৷ কিন্তু সেন রাজাদের সামাজিক বিধি-বিধান চলতে থাকে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে৷ আর সমাজের বৃহদাংশ মানুষের বিপক্ষে স্বল্প অংশের সৃষ্টি করা এই সামাজিক প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য হুসেনশাহী বংশের আমলে প্রথম উদ্যোগী হলেন নিমাই পণ্ডিত৷ আজকের সাহিত্য থেকে সমাজবিজ্ঞান প্রায় সব পণ্ডিত মানুষ তাঁর ধর্মীয় পরিচিতির পাশে সমাজ সংস্কারকের পরিচিতিকেও স্বীকার করে নিয়েছেন৷ বরং তুলনামূলভাবে তাঁর মানবতার ধর্ম আধুনিককালে আরো বেশি প্রাসঙ্গিক৷
নিমাই পণ্ডিতের পূর্ব থেকেই বিষ্ণুর উপাসকরা ভারতে অবস্থান করছিলেন সুরদাস, মীরাবাঈ প্রায় গোটা ভারতেই বৈদিক পথের তুলনায় বৈষ্ণব পথের অর্থাৎ শুদ্ধা ভত্তিুর জায়গায় ভগবৎ প্রেমের ধারা প্রচলিত হয়ে গেছে৷ চৈতন্যদেব সে ধারায় নতুন জোঁয়ার আনলেন৷ তিনি হয়ত অনুভব করতে পেরেছিলেন, সামাজিক সংকীর্ণতাকে দূর করতে ধর্মের জোয়ার আনা প্রয়োজন৷ তাঁর ভগবদ্ভত্তিু, কৃষ্ণপ্রেমে মানবতার রূপ মাত্র৷ পূর্ববর্তী বৈষ্ণব গোষ্ঠীদের অবস্থান থেকে সরে এসে নিজস্ব ভাষা গড়ে নিয়ে প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থাকে প্রচণ্ড ধাক্কা দিয়েছিলেন৷ ব্রাহ্মণ্যবাদীতার বিপ্রতীপে তাঁর অবস্থান৷
কিন্তু এটাও সত্যি তাঁর তিরোভাবের শতবর্ষ যেতে না যেতেই তাঁর দেখানো মানবতার বৃন্দাবন-পথ জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে পড়ল৷ বৈষ্ণব সমাজ হয়ে উঠল বহুধা বিভত্তু৷ নিত্যানন্দ, অদ্বৈত আচার্য, বীরভদ্র, কাঁলাচাঁদ, গৌরনাগর, সাহেবধনি, শ্যামরায়, গৌরবল্লভ, গৌর নিতাই, গৌড়ীয় মঠ এবং সাম্প্রতিক শ্রীল প্রভুপাদ প্রভৃতি বহু শাখায় বিভত্তু হয়ে গেল বৈষ্ণব অনুরাগী মানুষরা৷ চৈতন্যদেব যাদের একছাতার তলায় নিয়ে এসে একটা সামাজিক শত্তিুর রূপ দিয়েছিলেন তারা হারিয়ে গেলেন নানা আখড়া ও মঠে৷ এক এক শাখার এক এক আচরণ ধর্ম৷
ধুতি পরার ধরন, পূজার সিংহাসনে কোন মূর্তি থাকবে, দিনে কতবার সেবা (ভোগরাগ) হবে, ভোগে কোন দ্রব্য দেওয়া যাবে বা যাবে না, নামসংকীর্তন কত প্রহর হবে এই নিয়েই তাদের চিন্তা-ভাবনা কাজকর্ম সংকুচিত হয়ে পড়ল৷ কোনও কোনও সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে আবার চৈতন্য নয়, রাধা-কৃষ্ণও নয় প্রধান আরাধ্য হয়ে গেলেন গুরু৷ মায়াপুর ইসকন মন্দিরে গেলে দেখতে পাবেন চৈতন্য নয়, নিত্যানন্দ নয়, কৃষ্ণ নয়, রাধা নয়, প্রধান উপাস্য শ্রীল প্রভুপাদ৷
আর কখন যে, বৈষ্ণব ধর্মের কৃষ্ণপ্রেম অপ্রধান হয়ে সাধনসঙ্গিনী নির্ভর দেহসাধনার গোপীতত্ত্ব এক শ্রেণির বৈষ্ণবের মূল আকর্ষণ হয়ে উঠল তার খবর অতিবড় বৈষ্ণব মোহান্তও দিতে পারবেন না৷ আখড়া গড়ে সাধনা জনমানসে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করল৷ চৈতন্যের শুদ্ধ প্রেম কি এই আবিলতার স্রোতে হারিয়ে গেল না? খেয়াল করে দেখুন আঠেরো ও উনিশ শতকের বাংলা সাহিত্যে বৈষ্ণবদের কেমন ভ্রষ্ট, অধঃপতিত, ভোগসর্বস্ব করে দেখান হল৷ তার বাস্তব ভিত্তি অবশ্যই রয়েছে৷ এক সময়ে চৈতন্যের টানে রায় রামানন্দ, দবীর খাস, সাকর মল্লিকের মতো সমাজের উচচবিত্ত, উচচপদস্থরাও আকৃষ্ট হয়ে ছুটে এসেছেন৷ অথচ আঠেরো উনিশ শতক সাক্ষ্য দেয় বৈষ্ণব ধর্ম তার সার্বিক জনভিত্তি হারিয়েছে৷ কেবলই সমাজের শিক্ষার আধুনিকতার আলো থেকে দূরে থাকা, খেটে খাওয়া মানুষরা বাৎসরিক মহোৎসবে যোগ দিয়ে গুরুপ্রণামী দিয়ে ভোগ খেয়ে কীর্তন শুনলেন৷ এতটুকু সীমার বদ্ধ হয়ে গেলেন চৈতন্যের উত্তরাধিকার নিয়ে বসে থাকা নবদ্বীপের বংশানুক্রমিক গুরুরা৷ সাহিত্যে সংস্কৃতিতে গোঁড়ামি, ভণ্ড প্রভৃতির যেন প্রতীক হয়ে গেলেন বৈষ্ণব ভত্তু মানুষরা৷ তাদের নিয়ে ব্যাঙ্গ কার্ুন আঁকা থেকে শুরু করে সামাজিক নাটকে ভণ্ড চরিত্র দেখাতে টেনে আনা হল৷ এটা কি তাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ বশতঃ অপপ্রচার৷ নাকি তার মধ্যেও সত্যতা ছিল?
আসলে চৈতন্যের দেখানো পথ থেকে আনুষ্ঠানিক আচার-সর্বস্বতার মধ্যে হারিয়ে যাওয়ায় হয়ত এই পরিণতি৷ আর এই কারণে এখন ফোঁটা-তিলকের রসকলি, মুণ্ডিত মস্তকে শিখা, গলায় তুলসি মালা আজ বহু মানুষের কাছে সং-এর সাজে পরিণত৷ অথচ চৈতন্যের পথে অতুল সম্ভাবনা ছিল বিশাল বটবৃক্ষ হয়ে যুগ যুগ ধরে তাপিত-তৃষিত মানুষকে শান্তির ছায়া মেলে ধরার প্রতিষ্ঠান নয়, আশ্রয় হয়ে ওঠার৷ তাহলে  হয়ত আর পাঁচশ বছরের মধ্যে আবারও মহান মানবের আবির্ভাবের প্রয়োজন হত না৷ গুরু-গোঁসাইবাদ নয় চৈতন্যপথ ছিল পরম গুরুবাদ, চৈতন্যদেব সেই পরম গুরু৷ আর তাঁর পরমগুরু কৃষ্ণরূপী সাধারণ মানব৷ কিন্তু তত্ত্ব-অনুষ্ঠানের মধ্যে আর গোষ্ঠীকেন্দ্রিক স্বার্থপরতায় চৈতন্য সৌরভ হারিয়ে গেল অতিদ্রুত৷ শুধু প্রতিমা গড়ে তিল-তুলসী-গঙ্গোদক দিই রোজ৷





reference: http://www.thesundayindian.com/bn/story/%E0%A6%95%EF%BF%BD%E0%A6%9F%E0%A6%A6%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%9F-%E0%A6%9A%E0%A7%88%E0%A6%A4%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%9A%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%A4/7/1283/

Collected

Post a Comment