Ads (728x90)

SRI SRI THAKUR VIDEO

Like this page

Recent Posts

World time

Add as a follower to automatically get updated Article. Jaiguru!


শিব
নৈমিষারণ্যে যে ঋষিরা বাস করতেন, তাঁরা একদিন রোমহর্ষণের কাছে এসে বললেন, ‘হে রোমহর্ষণ, আপনি ঈশ্বরের আশীর্বাদধন্য। আপনি আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছেন। কিন্তু আমাদের জ্ঞানতৃষ্ণা এখনও পরিতৃপ্ত হয়নি। আপনি পরম সৌভাগ্যবান যে মহর্ষি বেদব্যাসের নিকট অধ্যয়নের সুযোগ পেয়েছেন। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের কিছুই আপনার অগোচর নয়। আমাদের শিবের কথা বলুন। আমরা শিবের সম্পর্কে বিশেষ জানি না।
রোমহর্ষণ উত্তরে বললেন, ‘আপনাদের জ্ঞানতৃষ্ণা নিবৃত্তিতে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। বহু বছর আগে দেবর্ষি নারদ তাঁর পিতা ব্রহ্মার নিকট শিবের কথা জানতে চেয়েছিলেন। সেই কথাই আপনাদের বলছি, শুনুন।’

ব্রহ্মার উপাখ্যান
সৃষ্টির আদিতে ব্রহ্মাণ্ডে কিছুই ছিল না। ব্রহ্মাণ্ডেরই অস্তিত্ব ছিল না। ছিলেন শুধু ব্রহ্ম। তিনি সর্বত্র পরিব্যাপ্ত ছিলেন। এই ব্রহ্ম তপ্তও ছিলেন না, শীতলও ছিলেন না। তিনি স্থূল বা সূক্ষ্ম কিছুই ছিলেন না। তাঁর আদি ও অন্তও ছিল না।
ব্রহ্মার জন্ম
চারিদিকে শুধুই জল ছিল। সেই জলের উপর ভগবান বিষ্ণু তাঁর অনন্তশয্যায় যোগনিদ্রায় শায়িত ছিলেন। বিষ্ণু যখন নিদ্রিত, তখন তাঁর নাভি থেকে একটি পদ্মের উদ্ভব হল। এই পদ্মটি ছিল বহুদলবিশিষ্ট এবং সহস্র সূর্যের প্রভাযুক্ত। এই পদ্মের কোষ থেকেই ব্রহ্মার জন্ম হল। ব্রহ্মা ভাবতে লাগলেন, এই পদ্ম ছাড়া আর কোথাও তো কিছুই নেই। আমি কে? আমি কোথা থেকে এলাম? আমি কীই বা করব? আমি কার পুত্র? কে আমাকে সৃষ্টি করল?
ব্রহ্মা ভাবলেন, পদ্মটি খুঁজে দেখলে তিনি হয়তো তাঁর প্রশ্নের উত্তর পাবেন। তিনি পদ্মের উৎসটির সন্ধান করার সিদ্ধান্ত করলেন। তিনি পদ্মের মৃণাল ধরে নেমে এলেন এবং একশো বছর ধরে এদিক ওদিক ঘুরলেন। কিন্তু পদ্মের উৎসস্থলটি তিনি খুঁজে পেলেন না। তখন তিনি ভাবলেন, যে কোষে তাঁর জন্ম সেই কোষেই ফিরে যাবেন। কিন্তু আরও একশো বছর ঘোরাঘুরি করেও সেই কোষটি তিনি খুঁজে পেলেন না। শেষে হতাশ হয়ে খোঁজাখুঁজি ছেড়ে দিয়ে বসে পড়লেন।
এমন সময় হঠাৎ দৈববাণী হল, ‘ব্রহ্মা, তুমি তপস্যা করো।’
দৈববাণী শুনে ব্রহ্মা বারো বছর তপস্যা করলেন। বারো বছর পর শঙ্খচক্রগদাপদ্ম-ধারী চতুর্ভূজ বিষ্ণু ব্রহ্মার সম্মুখে আবির্ভূত হলেন। ব্রহ্মা তাঁকে চিনতেন না। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনি কে?’ বিষ্ণু সরাসরি উত্তর না দিয়ে বললেন, ‘পুত্র, ভগবান বিষ্ণু তোমায় সৃষ্টি করেছেন।’
ব্রহ্মা রেগে বললেন, ‘আপনি আমায় পুত্র সম্বোধন করার কে?’
বিষ্ণু বললেন, ‘আমাকে চিনতে পারছো না? আমি বিষ্ণু। আমারই শরীর থেকে তোমার জন্ম।’ কিন্তু ব্রহ্মা তাঁর উত্তরে সন্তুষ্ট হলেন না। তিনি বিষ্ণুর সঙ্গে যুদ্ধ করতে গেলেন।
শিবলিঙ্গের উপাখ্যান
ব্রহ্মা ও বিষ্ণু যখন যুদ্ধ করছেন এমন সময় একটি জ্যোতির্ময় লিঙ্গের আবির্ভাব হল। সেই লিঙ্গের আদি বা অন্ত ছিল না।
বিষ্ণু বললেন, ‘হে ব্রহ্মা, যুদ্ধ থামাও। দ্যাখো, একটি তৃতীয় বস্তুর আবির্ভাব ঘটেছে। এই লিঙ্গটি কী? কোথা থেকেই বা এল? এসো, এর আদি ও অন্ত অনুসন্ধান করে দেখি। তুমি রাজহংসের রূপ ধারণ করে উপরে উঠে যাও। আমি বরাহের রূপ ধারণ করে নিচের দিকে যাচ্ছি।’
এই প্রস্তাবে ব্রহ্মা রাজি হলেন। তিনি শ্বেত রাজহংসের রূপ ধরে উপরে উড়ে গেলেন। বিষ্ণু শ্বেতবরাহের রূপ ধরে নিচে নেমে গেলেন। এক হাজার বছর ধরে তাঁরা সেই লিঙ্গের উৎস খুঁজে ফিরলেন, কিন্তু পেলেন না। তখন তাঁরা যেখানে ছিলেন সেখানে ফিরে এসে প্রার্থনা শুরু করলেন। একশো বছর প্রার্থনার পর একটি ওঁ-কার ধ্বনি তাঁদের শ্রুতিগোচর হল এবং এক পঞ্চানন দশভুজ দেবতার আবির্ভাব ঘটল তাঁদের সম্মুখে। ইনিই মহাদেব শিব।
বিষ্ণু বললেন, ‘ব্রহ্মা আর আমি যুদ্ধ করে ভালোই করেছি। সেই জন্যই তো আপনি আবির্ভূত হলেন।’
পঞ্চানন দশভুজ শিব
শিব উত্তরে বললেন, ‘আমরা একই সত্ত্বার তিনটি অংশ। আমরা ত্রিধা বিভক্ত। ব্রহ্মা সৃষ্টিকর্তা, বিষ্ণু রক্ষাকর্তা ও আমি ধ্বংসকর্তা। আমার শরীর থেকে রুদ্র নামে আর এক সত্ত্বার জন্ম হয়েছে। যদিও রুদ্র আর আমি একই সত্ত্বা। ব্রহ্মা, আপনি এবার সৃষ্টিকর্ম শুরু করুন।’ এই বলে শিব অদৃশ্য হলেন। ব্রহ্মা ও বিষ্ণু তাঁদের রাজহংস ও বরাহের রূপ পরিত্যাগ করলেন।
সৃষ্টিকথা
ব্রহ্মা বসলেন ধ্যানে। তাঁর ধ্যানের বলে একাধিক ঋষির জন্ম হল। তাঁদের মধ্যে ছিলেন কর্দম, দক্ষ ও মারিচী। মারিচীর পুত্র ছিলেন কশ্যপ। দক্ষের ষাট কন্যা ছিল। তাঁদের মধ্যে তেরোজনের বিবাহ হয় কশ্যপের সঙ্গে। কশ্যপ ও এই কন্যাগণের সন্তানেরা হলেন আদিত্য (দেবতা), দৈত্য, দানব, বৃক্ষ, পাখি, সর্প, পর্বত ও সরীসৃপ। এইভাবে জগৎ জনাকীর্ণ হল।
শিবের দেহসঞ্জাত সত্ত্বা রুদ্রের কথা আগেই বলেছি। রুদ্র কৈলাস পর্বতে বাস করতেন। তিনি দক্ষের কন্যা সতীকে বিবাহ করেন।
সতীর দেহত্যাগ
কিন্তু দক্ষ ও রুদ্র পরস্পর পরস্পরকে পছন্দ করতেন না। দক্ষ এক যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। সেই যজ্ঞে তিনি জামাই রুদ্রকে আমন্ত্রণ জানাননি। সতীকেও আমন্ত্রণ জানালেন না। যদিও সতী বিনা আমন্ত্রণেই চলে এলেন। সেজন্য দক্ষ তাঁকে খুবই অপমান করলেন। অপমানিতা হয়ে সতী দেহত্যাগ করলেন। এতে ক্রুদ্ধ হয়ে রুদ্র তাঁর সহচরদের পাঠালেন যজ্ঞ পণ্ড করার জন্য। রুদ্রের অনুচররা গিয়ে যজ্ঞক্ষেত্র লণ্ডভণ্ড করল এবং যজ্ঞে অংশগ্রহণকারী সকল দেবতাকে হত্যা করল।
পরে শান্ত হয়ে রুদ্র সকল দেবতার প্রাণ ফিরিয়ে দিলেন। যজ্ঞ সম্পূর্ণ হল। সতী হিমালয় ও তাঁর স্ত্রী মেনকার কন্যারূপে জন্ম নিলেন। তাঁর নাম হল পার্বতী।
(ক্রমশ)

Post a Comment