সমাজের প্রতিটি মানুষ মাথা উঁচু করে সগৌরবে বাঁচতে চায়। আবার অনেকেই বাঁচার ন্যূনতম অধিকারটুকু ভোগ করতে যেয়ে হিমশিম খায়। এক শ্রেণির মানুষ সুকৌশলে অন্যের ন্যায্য পাওয়াকে গুম করে নিজের কায়েমী স্বার্থ হাসিলের দক্ষতা অর্জনে অবলীলায় ব্যস্ত। অন্যকে পর্যুদস্ত করার জন্য সমাজের বুকে মানুষ নামক চতুর জীবের যে নেপথ্য পদচারণা, তা কিন্তু থেমে নেই। আদিকাল থেকে শুরু করে মহাভারতের যুগ তথা বর্তমান কালের স্নায়ুযুদ্ধময় পৃথিবীই এর প্রমাণ। যুগে যুগেই মানবতা অসুর শক্তি দ্বারা লাঞ্ছিত হয়েছে। যার জন্য ঈশ্বরের অবতার মনুষ্যবাসের এই পৃথিবীতে বারবার অবতরণ করেছেন। শ্রীরামচন্দ্র থেকে শুরু করে শ্রীকৃষ্ণসহ অনেকেই অসুর শক্তির হাত থেকে লাঞ্ছিত মানবতাকে রক্ষার জন্য গান্ডিব হাতে নিয়েছেন। কিন্তু এরপরেও অসুর শক্তির তৎপরতার অবসান হয়নি। এ অসুরেরা কিন্তু মানুষ রূপেই সমাজে বিচরণ করে। মনুষ্য জন্মের পার্থিব নিয়মেই তারা জন্মগ্রহণ করে। এমনকি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করে সমাজের হিসেবের ব্যক্তিত্বের পরিগণিত হয়। যেভাবে নিকষার গর্ভে কুক্ষণে জন্ম হয়েছিল রাবনের, মাতা গান্ধারীর গর্ভে জন্ম হয়েছিল দুর্যোধন-দুঃশাসনের। বর্তমানে এমন রাবন আর দুর্যোধন দুঃশাসনের অভাব নেই। অসংখ্য রাবণ ও দুর্যোধন ঘরে ঘরে জন্মাচ্ছে। এর কারণ কিন্তু একটিই, ওরা সুবিবাহ ও সুপ্রজনন থেকে জন্মাচ্ছেনা।
উপরোক্ত সামাজিক আদি সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্যেই যুগাবতার পরম প্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র কম্বুকণ্ঠে ঘোষণা করেছেন, আমরা সুসন্তান চাই। এ সমাজকে অসুরের সঙ্গে যুদ্ধ জয় করে শোষণহীন সুন্দর শান্তির পৃথিবী গড়তে সুসন্তানের বিকল্প নেই। পরম প্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অসহায় নিঃসম্বল অবস্থায় হিমাইত পুরের মত নিভৃত পল্লীতে অতি ক্লেশে সৎসঙ্গ নামক মানুষ গড়ার প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর গড়া সহায়সম্বলহীন মানুষের এ প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন সময়ে ছদ্মবেশধারী শয়তানের কালো থাবার ছোবল থেকে রেহাই পায়নি। তথাপি পরম দয়াল শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্র যুগত্রাতা বলেই তাঁর হাতে গড়া সৎসঙ্গ অমোঘ গতিতে বিকশিত হচ্ছে। আমরা আমাদের জন্মগত প্রকৃতি দ্বারা তাঁকে এবং সৎসঙ্গকে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। সৎসঙ্গের ভাভধারা ও আদর্শকে হৃদয়ঙ্গম করে নিজেদের কর্ম পরিসর সৃষ্টি করতে হলেই প্রয়োজন যজন, যাজন, ইষ্টভৃতি, স্বস্তরণী সদাচারের একক সাধনা এবং গভীর আচার্য্যনিষ্ঠা।
সৎসঙ্গকে বুঝতে গেলেই আচার্য্যকে বুঝতে হবে। তাঁর চিন্তা চলন থেকেই আমাদের অনুপ্রাণিত হতে হবে। যার জন্যে পরম দয়ালের অনুশ্রুতির ভাষায় বলা যায়-
১.
আচার্য্যকে বাদ দিয়ে তুই
জ্ঞান গবেষণ করবি যতÑ
সামঞ্জস্য থাকাই কঠিন
হারাবি তুই পথ নিয়ত।
২.
আচার্য্য নিষ্ঠায় অটুট হয়ে
জ্ঞান গবেষণায় থাকলে মন,
প্রজ্ঞা বাড়ে ক্রমান্বয়ে
সিদ্ধির পথে যার সে জন।
(অনুশ্রুতি ২য় খ- ধর্ম্ম-৯৭, ৯৮)
এ আচার্য্য নিষ্ঠায় রত হতে গেলেই সৎগুরুর শরণাপন্ন হয়ে সৎদীক্ষা লাভ প্রথমেই প্রয়োজন। দীক্ষাকে অনুশীলনী তৎপরতার মাধ্যমে কাজে লাগিয়ে আচার্য নির্দেশ যথাযথ পালনের জন্য নিজকে তৈরি করে তুলতে পারলেই দৈনন্দিন জীবন তথা সাংসারিক জীবন দক্ষতায় ভরে উঠবে। কেবল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমেই প্রকৃত মনুষ্যত্ব অর্জন সম্ভব হয় না। সৎগুরুর দীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে আচার্য্যকেন্দ্রিক শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা। তাই শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন-
দীক্ষা নিয়ে শিক্ষা ধরিস্
আচার্য্যকে করে সার,
আচরণে বোধ চয়নে
জ্ঞানের সাগর হ’না পাড়।
পরম দয়াল শ্রীশ্রীঠাকুরের সৎসঙ্গে আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়টিই হচ্ছে- ব্যক্তি, দম্পতি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র। সর্বপ্রথমে একজন ব্যক্তিকেই আদর্শকেন্দ্রিক অনুশীলন তৎপর দক্ষ ব্যক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। তবেই তার দ্বারা সুবিবাহের মাধ্যমে সার্থক ও সুন্দর হবে যতটুকু আমরা সৎসঙ্গের নীতিবিধি পালন করে সুকেন্দ্রিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হবো।
আমরা মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হয়ে এ প্রকৃতির বুকেই বেড়ে উঠি। এ বেড়ে উঠার সঠিক নির্দেশনার মাধ্যমেই শ্রীশ্রীঠাকুর আমাদের ধর্ম পালনের কথাটি বুঝিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন-
বাঁচা বাড়ার মর্ম্ম যা
ধর্ম বলে জানিস্ তা।
কিভাবে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকা যায় তার ব্যবস্থাপনাকেই ধর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন শ্রীশ্রীঠাকুর। যে প্রকৃতিতে আমরা বেড়ে উঠি এ প্রকৃতির অধিশ্বরই শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্র। কাজেই এ প্রকৃতিতে আমরা যতটুকু বা যেভাবে আমাদের কর্ম সম্পাদন করি প্রকৃতিও সেভাবেই আমাদের ফলস্বরূপ উপহার দেয়। যার জন্যে ছড়ার বাণীতে শ্রীশ্রীঠাকুরের বলা-
যা ইচ্ছে তা করবে তুমি
তাতে কিন্তু চলবেনা,
ভাল ছেড়ে মন্দ করলে-
পরিস্থিতি ছাড়বে না।
পবিত্র সত্যানুসরণ গ্রন্থে শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন- যদি সৎ চালক অবলম্বন করে থাক, যা’ই কর, ভয় নাই, মরবে না, কিন্তু কষ্টের জন্য রাজি থেকো।’ আমার দীক্ষাত্তোর জীবনে প্রকৃতি জাত স্বেচ্ছাচার করতে যেয়ে আমাকে প্রতিহত হতে হয়েছে। ঈশ্বরের অদৃশ্য চিৎ শক্তিই অপ্রত্যাশিত কর্মকান্ডে আমাকে বাঁধা দিয়েছে। আমার এ উপলব্ধি কিন্তু দীক্ষাপূর্ণ জীবনে ছিল না। ঐশ্বরিক শক্তির অনুভূতি কেবল তখনই সৃষ্টি হয় যখন পরম দয়ালের নীতি বিধির পথে অর্থাৎ ইষ্টময় জীবনের পথে সামান্যতম ভাবেও বিচরণ করা যায়। অনেক সৎসঙ্গীই জীবন পথে চলতে গিয়ে ইষ্টের অপার করুণায় অনেক বিপদ থেকে রক্ষা পেয়ে যান। এজন্যই প্রকৃত হয়ে ওঠার জন্য আচার্য্য কেন্দ্রিক ইষ্টময় কর্মকান্ডের অনুশীলনে আমাদের নিরন্তর প্রয়াস চালানো প্রয়োজন। ইষ্টের প্রতি নিষ্কাম ভালবাসাই গভীর ইষ্টপ্রাণতার সৃষ্টি করে। আর এ ভালবাসার টানই মানুষকে যজনশীল করে গড়ে তোলে। একজন সত্যিকার বজনশীল ব্যক্তি কখনো যাজন না করে থাকতে পারেন না। তাঁর ইষ্টানুগ চলনের দ্বারা অনেক ক্ষেত্রে যাজন হয়ে যায়। ইষ্ট নিষ্ঠার কতকগুলো বাস্তব লক্ষণ থাকে। এ লক্ষণগুলো হলো নিষ্ঠা, আনুগত্য ও কৃতিসম্বেগ। শ্রীশ্রী ঠাকুরের ভাষায় ‘নিষ্ঠা’ শব্দের অর্থ নিঃশেষে লেগে থাকা। ইষ্টের প্রতি গভীর অনুরাগ অর্থাৎ গভীর ভালবাসা দ্বারা যে সম্বেগের তৈরি হয় তার দ্বারাই অনেক মহৎ কাজ সাধিত হয় এবং তাই কৃতি সম্বেগের পর্যায়ভুক্ত। মানুষের দক্ষতা যাচাইয়ের ব্যাপারে শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন-
অর্জনে পটু,
সাশ্রয়ী কাজে-
সুন্দরে সমাপন;
এই দেখে তুই বুঝবি
তাহার দক্ষতা কেমন।
আর্যকৃষ্টির ধারণ পালনে পরম দয়াল বলেছেন-
আর্যকৃষ্টির যা ব্যাঘাত,
খর্গে তোরা কর নিপাত।
পরিশেষে পরম দয়াল শ্রীশ্রীঠাকুরের আর্যকৃষ্টি বিষয়ক অধ্যায়ের ৯৩ নম্বর ছড়ার বাণী উদ্বৃত করেই আমার অগুছালো বক্তব্য শেষ করছি।
অনুকম্পায় ইষ্টনিদেশ
যা’রাই করে ব্যতিক্রম,
তা’রাই জানিস যমের দালাল
শত্রু নাইকো তাদের সম;
ইষ্টনিষ্ঠা প্রতিষ্ঠাটি
হৃদয় হ’তে নেয় কেড়ে,
নির্দেশ পারন প্রবৃত্তিটি
যম-জীবনে দেয় ভ’রে;
কানে-কানে গোপন কথায়
দিয়ে বেড়ায় অসৎ-ঢেউ,
শয়তানেরই সেবক তা’রা
বুঝতে বাকী রয় কি কেউ?
তাই বলিরে অলস চলায়
এখনো তোরা বিরত হ;
মাথায় নিয়ে ইষ্ট বোঝা
জীবন চালা প্রত্যহ;
কথায় ফোনে কথার মালা
কান ছাড়া আর শোনে কেউ?
কর্ম্মে ফোটে কৃতী জীবন
ওঠেই যা’তে বৃদ্ধি ঢেউ;
ইষ্টে যদি তাকেই নেশা
অসৎ-নিরোধ তর্পণায়
এখনই ওঠ্ মাভৈঃ রবে
জেগে জাগা সব জনায়;
হৃদয়টি তোর ওতলায়ে তোল
শ্রদ্ধানূত অর্চ্চনায়,
মরণ সাগর দেরে পাড়ি
সংস্থিত হ’ বদ্ধনায়,
ইষ্টার্থটির ব্যতিক্রম যা’য়
বুঝবি তাকে অসৎ বলে,
তার নিরোধই অসৎ নিরোধ
করাই ভাল ছলে-বলে;
নিজের বুকে হাত দিয়ে দেখ্
অন্যের চলন-বলন বুঝে,
অসৎ যদি থাকে কোথাও
করিস নিরোধ বুঝে-সুঝে;
কেউটে সাপের বাচ্চা তোরা
কেঁচো হ’বি সে কী পাপ!
স্বর্গ-মর্ত্ত্য রসাতলে
ফুটুকরে তোর মাভৈঃ দাপ;
আমার কথা শুনবি কি রে-
লাগবে ভাল এমন চলা?
যদি লাগে তৃপ্তি পাবে
মুর্খ ‘আমি’র এমন বলা।
বন্দে পুরুষোত্তমম্।
লেখক: নীলোৎপল চক্রবর্ত্তী
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক
সিনিয়র-সহসভাপতি, সিলেট জেলা সৎসঙ্গ
সৎসঙ্গকে বুঝতে গেলেই আচার্য্যকে বুঝতে হবে। তাঁর চিন্তা চলন থেকেই আমাদের অনুপ্রাণিত হতে হবে। যার জন্যে পরম দয়ালের অনুশ্রুতির ভাষায় বলা যায়-
১.
আচার্য্যকে বাদ দিয়ে তুই
জ্ঞান গবেষণ করবি যতÑ
সামঞ্জস্য থাকাই কঠিন
হারাবি তুই পথ নিয়ত।
২.
আচার্য্য নিষ্ঠায় অটুট হয়ে
জ্ঞান গবেষণায় থাকলে মন,
প্রজ্ঞা বাড়ে ক্রমান্বয়ে
সিদ্ধির পথে যার সে জন।
(অনুশ্রুতি ২য় খ- ধর্ম্ম-৯৭, ৯৮)
এ আচার্য্য নিষ্ঠায় রত হতে গেলেই সৎগুরুর শরণাপন্ন হয়ে সৎদীক্ষা লাভ প্রথমেই প্রয়োজন। দীক্ষাকে অনুশীলনী তৎপরতার মাধ্যমে কাজে লাগিয়ে আচার্য নির্দেশ যথাযথ পালনের জন্য নিজকে তৈরি করে তুলতে পারলেই দৈনন্দিন জীবন তথা সাংসারিক জীবন দক্ষতায় ভরে উঠবে। কেবল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমেই প্রকৃত মনুষ্যত্ব অর্জন সম্ভব হয় না। সৎগুরুর দীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে আচার্য্যকেন্দ্রিক শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা। তাই শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন-
দীক্ষা নিয়ে শিক্ষা ধরিস্
আচার্য্যকে করে সার,
আচরণে বোধ চয়নে
জ্ঞানের সাগর হ’না পাড়।
পরম দয়াল শ্রীশ্রীঠাকুরের সৎসঙ্গে আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়টিই হচ্ছে- ব্যক্তি, দম্পতি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র। সর্বপ্রথমে একজন ব্যক্তিকেই আদর্শকেন্দ্রিক অনুশীলন তৎপর দক্ষ ব্যক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। তবেই তার দ্বারা সুবিবাহের মাধ্যমে সার্থক ও সুন্দর হবে যতটুকু আমরা সৎসঙ্গের নীতিবিধি পালন করে সুকেন্দ্রিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হবো।
আমরা মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হয়ে এ প্রকৃতির বুকেই বেড়ে উঠি। এ বেড়ে উঠার সঠিক নির্দেশনার মাধ্যমেই শ্রীশ্রীঠাকুর আমাদের ধর্ম পালনের কথাটি বুঝিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন-
বাঁচা বাড়ার মর্ম্ম যা
ধর্ম বলে জানিস্ তা।
কিভাবে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকা যায় তার ব্যবস্থাপনাকেই ধর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন শ্রীশ্রীঠাকুর। যে প্রকৃতিতে আমরা বেড়ে উঠি এ প্রকৃতির অধিশ্বরই শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূল চন্দ্র। কাজেই এ প্রকৃতিতে আমরা যতটুকু বা যেভাবে আমাদের কর্ম সম্পাদন করি প্রকৃতিও সেভাবেই আমাদের ফলস্বরূপ উপহার দেয়। যার জন্যে ছড়ার বাণীতে শ্রীশ্রীঠাকুরের বলা-
যা ইচ্ছে তা করবে তুমি
তাতে কিন্তু চলবেনা,
ভাল ছেড়ে মন্দ করলে-
পরিস্থিতি ছাড়বে না।
পবিত্র সত্যানুসরণ গ্রন্থে শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন- যদি সৎ চালক অবলম্বন করে থাক, যা’ই কর, ভয় নাই, মরবে না, কিন্তু কষ্টের জন্য রাজি থেকো।’ আমার দীক্ষাত্তোর জীবনে প্রকৃতি জাত স্বেচ্ছাচার করতে যেয়ে আমাকে প্রতিহত হতে হয়েছে। ঈশ্বরের অদৃশ্য চিৎ শক্তিই অপ্রত্যাশিত কর্মকান্ডে আমাকে বাঁধা দিয়েছে। আমার এ উপলব্ধি কিন্তু দীক্ষাপূর্ণ জীবনে ছিল না। ঐশ্বরিক শক্তির অনুভূতি কেবল তখনই সৃষ্টি হয় যখন পরম দয়ালের নীতি বিধির পথে অর্থাৎ ইষ্টময় জীবনের পথে সামান্যতম ভাবেও বিচরণ করা যায়। অনেক সৎসঙ্গীই জীবন পথে চলতে গিয়ে ইষ্টের অপার করুণায় অনেক বিপদ থেকে রক্ষা পেয়ে যান। এজন্যই প্রকৃত হয়ে ওঠার জন্য আচার্য্য কেন্দ্রিক ইষ্টময় কর্মকান্ডের অনুশীলনে আমাদের নিরন্তর প্রয়াস চালানো প্রয়োজন। ইষ্টের প্রতি নিষ্কাম ভালবাসাই গভীর ইষ্টপ্রাণতার সৃষ্টি করে। আর এ ভালবাসার টানই মানুষকে যজনশীল করে গড়ে তোলে। একজন সত্যিকার বজনশীল ব্যক্তি কখনো যাজন না করে থাকতে পারেন না। তাঁর ইষ্টানুগ চলনের দ্বারা অনেক ক্ষেত্রে যাজন হয়ে যায়। ইষ্ট নিষ্ঠার কতকগুলো বাস্তব লক্ষণ থাকে। এ লক্ষণগুলো হলো নিষ্ঠা, আনুগত্য ও কৃতিসম্বেগ। শ্রীশ্রী ঠাকুরের ভাষায় ‘নিষ্ঠা’ শব্দের অর্থ নিঃশেষে লেগে থাকা। ইষ্টের প্রতি গভীর অনুরাগ অর্থাৎ গভীর ভালবাসা দ্বারা যে সম্বেগের তৈরি হয় তার দ্বারাই অনেক মহৎ কাজ সাধিত হয় এবং তাই কৃতি সম্বেগের পর্যায়ভুক্ত। মানুষের দক্ষতা যাচাইয়ের ব্যাপারে শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন-
অর্জনে পটু,
সাশ্রয়ী কাজে-
সুন্দরে সমাপন;
এই দেখে তুই বুঝবি
তাহার দক্ষতা কেমন।
আর্যকৃষ্টির ধারণ পালনে পরম দয়াল বলেছেন-
আর্যকৃষ্টির যা ব্যাঘাত,
খর্গে তোরা কর নিপাত।
পরিশেষে পরম দয়াল শ্রীশ্রীঠাকুরের আর্যকৃষ্টি বিষয়ক অধ্যায়ের ৯৩ নম্বর ছড়ার বাণী উদ্বৃত করেই আমার অগুছালো বক্তব্য শেষ করছি।
অনুকম্পায় ইষ্টনিদেশ
যা’রাই করে ব্যতিক্রম,
তা’রাই জানিস যমের দালাল
শত্রু নাইকো তাদের সম;
ইষ্টনিষ্ঠা প্রতিষ্ঠাটি
হৃদয় হ’তে নেয় কেড়ে,
নির্দেশ পারন প্রবৃত্তিটি
যম-জীবনে দেয় ভ’রে;
কানে-কানে গোপন কথায়
দিয়ে বেড়ায় অসৎ-ঢেউ,
শয়তানেরই সেবক তা’রা
বুঝতে বাকী রয় কি কেউ?
তাই বলিরে অলস চলায়
এখনো তোরা বিরত হ;
মাথায় নিয়ে ইষ্ট বোঝা
জীবন চালা প্রত্যহ;
কথায় ফোনে কথার মালা
কান ছাড়া আর শোনে কেউ?
কর্ম্মে ফোটে কৃতী জীবন
ওঠেই যা’তে বৃদ্ধি ঢেউ;
ইষ্টে যদি তাকেই নেশা
অসৎ-নিরোধ তর্পণায়
এখনই ওঠ্ মাভৈঃ রবে
জেগে জাগা সব জনায়;
হৃদয়টি তোর ওতলায়ে তোল
শ্রদ্ধানূত অর্চ্চনায়,
মরণ সাগর দেরে পাড়ি
সংস্থিত হ’ বদ্ধনায়,
ইষ্টার্থটির ব্যতিক্রম যা’য়
বুঝবি তাকে অসৎ বলে,
তার নিরোধই অসৎ নিরোধ
করাই ভাল ছলে-বলে;
নিজের বুকে হাত দিয়ে দেখ্
অন্যের চলন-বলন বুঝে,
অসৎ যদি থাকে কোথাও
করিস নিরোধ বুঝে-সুঝে;
কেউটে সাপের বাচ্চা তোরা
কেঁচো হ’বি সে কী পাপ!
স্বর্গ-মর্ত্ত্য রসাতলে
ফুটুকরে তোর মাভৈঃ দাপ;
আমার কথা শুনবি কি রে-
লাগবে ভাল এমন চলা?
যদি লাগে তৃপ্তি পাবে
মুর্খ ‘আমি’র এমন বলা।
বন্দে পুরুষোত্তমম্।
লেখক: নীলোৎপল চক্রবর্ত্তী
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক
সিনিয়র-সহসভাপতি, সিলেট জেলা সৎসঙ্গ
Post a Comment