Ads (728x90)

SRI SRI THAKUR VIDEO

Like this page

Recent Posts

World time

Add as a follower to automatically get updated Article. Jaiguru!


নবযুগের নবীন প্রভাতে চতুর্দিকে নারী প্রগতির জয়ধ্বনি ঘোষিত হচ্ছে। পূর্বে ভারতীয় নারী ছিল পুরুষের ওপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল। তাদের কোন স্বাধীন সত্তা ছিল না। কখনও কন্যা, কখনও পত্নী, কখনও মা রূপে তার পরিচয় ছিল। নি:সহায় গলগ্রহতা এড়াবার তার কোন উপায় ছিল না। আলোহীন প্রাণহীন দূর্ভেদ্য অন্ধকারের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে আজকের ভারতীয় নারী আলোকিত জগতের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে এসে দাড়িয়েছে। অবগুন্ঠনবতী, অন্তরালবর্তিনী, অসূর্যস্পর্শ্যা নারী আজ আলোকপ্রাপ্ত। আধুনিক শিক্ষা তাকে পাষাণপুরীর বন্দীদশা থেকে মুক্ত করে দিয়েছে। পুরুষের সঙ্গে সমানতালে পা ফেলে নিজের ভাগ্য জয় করার দূর্লভ সাহস নিয়ে সে এগিয়ে এসেছে।

বৈদিক যুগে নারী স্বাধীনতা ছিল স্বীকৃত। নারী শিক্ষায় আর্যপুরুষরা কখনও বাধা দেননি। তাই ভারতীয় পুরাণাদিতে ব্রহ্মবাদিনী, লোপামুদ্রা, বিশ্ববারা, গার্গী, মৈত্রেয়ী, অরুন্ধতি প্রমূখ বিদুষী মহিয়সী নারীর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। বৈদিক যুগে নারী পুরুষের সহধর্মিনী ও সহমর্মিনীও ছিলেন। বৌদ্ধধর্ম প্রচারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন।

  বৌদ্ধধর্মের পর ভারতীয় রাজনৈতিক পটভূমিকায় এল বিরাট পরিবর্তন। এল মুসলমান যুগ। এল ভারতীয নারীর সর্বনাশের যুগ। সম্মান ও সম্ভ্রম বাঁচিয়ে ভারতীয় নারী আশ্রয় নিল অন্দরমহলে। বহির্জগতে উন্মুত্ক শিক্ষার আলোক পাষাণ প্রাচীরেরা রুদ্ধদারের বাইরে ধাক্কা খেয়ে ফিরে এল। অশিক্ষা, কুশিক্ষা, মেয়েলী অর্থহীন আচার অনুষ্ঠান কুসংস্কার, পরনিন্দা, পরচর্চাকে নিত্যসঙ্গী করে নারী শুরু করল গৌরবহীন জীবনযাপন। সুযোগ বুঝে কৌলিণ্যপ্রথা, বাল্যবিবাহ, সতীদাহ প্রভৃতি নানা নিষ্ঠুর প্রথা গ্রাস করল তাদের অন্ধকারময় জীবনকে। জীবনের সবরকম অগ্রগতির সুযোগ হারিয়ে জগতের প্রগতি ধার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তারা তাদের নিস্তরঙ্গ জীবনে অজস্র জঞ্জাল জমাল সমাজ একটি ঘৃণ্য নরককুন্ডে পরিণত হল।

  এরপর ভারতে কায়েম হল ইংরেজ শাসন। মুসলমান যুগের মতই এ যুগেও ভারতীয় নারীর ইজ্জত ও সম্মানের প্রশ্ন দেখা দিল। কিন্তু এর মধ্যেও ঘটল একটা বিপর্যয়। ইউরোপীয় শিক্ষা দীক্ষা কৃষ্টির সাথে ভারতবাসীর পরিচয় ঘটল। আমাদের স্থবির সমাজের উপর এল বিরাট আঘাত। ঊনবিংশ শতাব্দির এ নবজাগরণের উদ্যোক্তা পুরুষ হলেও তা বিকশিত হয়ে ওঠে নারী জাতিকে কেন্দ্র করে। রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদ করলেন। বিধবা বিবাহ প্রচলন এবং নারী শিক্ষা আন্দোলনের উদ্যোগ নিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। প্রায় হাজার বছর ধরে যে নারী জাতি অন্ত:পুরের অন্ধকারে লুকিয়ে ছিল তারা দেখল পৃথিবীর মুক্ত আলোক। ভারতীয় নারীর নবজস্ম ঘটল।

নারী শিক্ষার জন্য স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠিত হল। স্বাধীনতার যুদ্ধে নারী পুরুষের পাশে এসে দাঁড়াল। দেশমাতৃকাকে বিদেশী শাসকের শাসনের নাগপাশ থেকে মুক্ত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ল মুক্তিযুদ্ধে। ভারতবর্ষ স্বাধীন হল।

স্বাধীন ভারতে নারীজাতির এই অগ্রগতি অব্যাহত আছে। শিক্ষা দীক্ষায় কর্মসংস্থানে নারী জাতির সমানাধিকার আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। বিজ্ঞান, সাহিত্য, চিকিৎসা, ইঞ্জিনিয়ারিং, সাংবাদিকতা, রাজনীতি ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে ভারতীয় নারী দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে এসেছে।

উদার মানসিকতাসম্পন্ন প্রতিভাময় নারী বলিষ্ঠ জাতি গঠনের জন্য প্রয়োজন। শিশুর শিক্ষা শুরু হয় মায়ের কাছে। তাই নারীর শিক্ষা ও প্রগতির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আমাদের দেশে পরিবারই সমাজের কেন্দ্রবিন্দু। নারী পরিবারের নিয়ামক। তাকে কেন্দ্র করেই প্রাত্যহিক পারিবারিক জীবন আবর্তিত হয়।

নারী শিক্ষার প্রসারের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেও শ্রীশ্রীঠাকুর নারীর সনাতনী রূপটির প্রতি বারবার শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। নারী প্রগতির স্রোতকে আজ আর রোধ করার উপায় নেই। তবৃ্ও ভারতীয় নারীর বিশেষ রূপটিকে শ্রীশ্রীঠাকুর বিশেষ মর্যাদা দিতে চেয়েছেন। এই রূপটির জন্য আধুনিক যুগেও ভারতীয় নারী সারা পৃথিবীতে বিশেষ সম্মান পায়। শ্রীশ্রীঠাকুরের বিভিন্ন বাণী ও উপদেশ ভারতীয় নারীর সম্পর্কে তাঁর মানসিকতার স্পষ্ট ছবি পাওয়া যায়।

  নারী স্বাধীনতা বা নারী প্রগতির নামে উচ্ছৃঙ্খলতা বা স্বেচ্চারিতাকে শ্রীশ্রীঠাকুর সমর্থন করেননি। আমাদের দেশের নারীদের সতী সাবিত্রী সীতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হতে বলেছেন শ্রীশ্রীঠাকুর। একসময়ে আমাদের দেশে সতীত্বের খুব আদর ছিল। স্বামীর সঙ্গে সহমরণে যেতে মেয়েরা কুন্ঠিত বা ভীত হত না। পরে এই প্রথাটি বিলুপ্ত হলেও এর মূলে আছে ভারতীয় নারীর সতীত্বের একটা বিশেষ প্রেরণা। আমাদের দেশে এমন সব মেয়েরা ছিলেন যাঁরা স্বামীহঅন বেঁচে থাকার চাইতে মৃতু্ ্য্র্যবরণই শ্রেয় বলে মনে করতেন।
এ প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন, 'মরে যাওয়ার বুদ্ধিকে আমি প্রশংসা করি না বটে কিন্তু এর পিছনে অনুরাগের যে তীব্রতা আছে তাই হলো পরম অমৃত। ঐ একনিষ্ঠ ভক্তি শ্রদ্ধাই মানষিকে জন্মমৃত্ুযর উর্ধ্বে নিয়ে যেতে পারে, এই-ই তো মুক্তির রাজপথ। তার বদলে কিনা পাশ্চাত্যের নারী স্বাধীনতা আন্দোলন আজ আমাদের দেশের মেয়েদের কাছে পরম লোভনীয় বলে মনে হচ্ছে। নারী স্বাধীনতা করে করে তো আজ সেখানে ঘরে ঘরে অশান্তির আগুন জ্বলছে। '
      [আলোচনা প্রসঙ্গে, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা-৯১]

আদর্শ স্ত্রী সম্পর্কে শ্রীশ্রীঠাকুরের একটি সুস্পষ্ট ধারণা ছিল। আদর্শ স্ত্রী দু:খকষ্ট সবরকম অশান্তির মধ্যে স্বামীকে বুঝে চলবেন। তাঁর মতে "যে স্ত্রী এমন করে স্বামীকে,আপনজনকে সয় বয়, সেই আবার সংসারে সম্রাজ্ঞী।"
    [আলোচনা প্রসঙ্গে, ৩য় খন্ড পৃষ্ঠা-৯১]

   এমন স্ত্রীর কথা ছাড়া সংসার চলে না। শুধু স্বামী নয়, শ্বশুর শাশুড়ী সকলেই তার মতামতের বিশেষ মূল্য দেন। ক্রমে তার ওপরেই এসে পড়ে সকল কতৃত্বের ভার। নারী স্বাধীনতা সম্বন্ধে তাঁর বক্তব্যটি তিনি খুব পরিষ্কারভাবেই বিশ্লেষণ করেছেন, "এইভাবে একটা সংসারের অধীন হয়ে, ভালবেসে  সেবা দিয়ে, দু:সময়ে সকলকে আপনার করে নিয়ে যে আধিপত্য ও স্বাধীনতা অর্জন, তার মধ্যেই তো নারী স্বাধীনতা মধুমর্ম। আমি বুঝি Cooperative interdependent serviceable run of life is liberty."

      [আলোচনা প্রসঙ্গে, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা-৯২]

চলমান.....

Post a Comment