পরম প্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের নাম গ্রহনের পর থেকে আমার জীবনে তাঁর অশেষ অহৈতুক দয়ার পরশে অনেক ঘটনার জন্ম দিয়েছে। তা সবগুলো ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। তা অনুভূতির ব্যাপার। কিছু কিছু দয়ার কথা বলার অভিপ্রায় নিয়ে আমি লিখতে বসেছি কিন্তু কি লিখব? একেতো আমার লেখার অভ্যাস নেই, কোন ভাষা জানাও নেই।
তারপরও একটি ঘটনার মাধ্যমে তাঁর দয়ার কথা আমার ক্ষুদ্র অনুভূতিতে জাগে, তা ব্যক্ত করার চেষ্টা করছি।
কূলগুরুবেষ্টিত পরিবারে আমার জন্ম। ঐ পরিবেশ থেকে আমার বেরিয়ে আসতে আমার দুটি বছর সময় লেগেছিল। কারণ আমার দীক্ষা গ্রহনের দুবছর আগ থেকে সৎসঙ্গ বিহারে থাকার সৌভাগ্য তৈরি করেছিল প্রথমত আমার সতীর্থ ডা: মন্টু দাস ও মামা শ্রীক্ষীতিষ দত্ত (সহপ্রতিঋত্বিক)। যদিও আমার মামার বাড়ি সকলেই সৎনামে দীক্ষিত ছিল, তারপরও আমার সৎনাম গ্রহন করতে অনেক সময় লেগেছিল। আমি সৎনাম গ্রহন করি ১৩৯৮ বাংলা ৩০শে ভাদ্র শ্রীযুক্ত রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য (সহপ্রতিঋত্বিক) মহোদয়ের মাধ্যমে।
সৎনাম গ্রহনের সময়টি ছিল রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মুহুর্ত্ব (১৯৯২ ইং)। রাজনৈতিক দুইটি দলের মধ্যে স্থানীয়ভাবে সিলেটে দাঙ্গা-হাঙ্গামা চলছিল। এর মধ্যে এক রাতে কয়েকটি যুবক আমার রুমে এসে একটি ছালার ব্যাগ রেখে যায়্ আমার অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমাকে তা রাখতে হয়। ওরা চলে পাবার পর, ব্যাগের ভিতরের জিনিসগুলো দেখে ভীষণ বিপদের সম্মুখীন হয়ে পড়ি। তাৎক্ষনিকভাবে আমার ইষ্টদেবের নাম নিতে নিতে ভাবলাম বাইরে কোথাও রাখতে হবে। বাহিরে দেয়াল সংলগ্ন কলাগাছের ঝাড়ের মধ্যে রেখে দেই। কিন্তু সমস্ত রাত বিনিদ্রভাবে কাটাতে হয়েছে।
কিন্তু তারপরও আমার রক্ষা নেই। পরদিন সকাল ৯-১০টার দিকে যখন ঠাকুর ভোগ দিবেন পুরোহিত (শ্রীইন্দ্রনীল মৈত্র), তখন পাশের বাড়িতে আমাদের গুরুভ্রাতা শ্রীমিন্টু দেবদা'র বাড়িতে হুলস্থুল পড়ে যায়, উনার একমাত্র ছেলেকে মান্নাকে নিয়ে। ছেলেটি খেলনা বল খুজতে গিয়ে ঐ ব্যাগের ভিতর থেকে লাল ফিতার মোড়া কৌটা নিয়ে ঘরে বসে খুলতে থাকে। ঠিক সেই মুহুর্ত্বে দয়ালের অহেতুক দয়ায় তার মা-বাবার নজরে পড়ায় ছেলেটি তথা পুরো পরিবারটি রক্ষা পেয়ে যায়। তখন বুঝতে পারলাম আমার দয়াল শ্রীশ্রীঠাকুর আমাদের এই ভয়ানক বিপদ থেকে রক্ষা করেছেন। তারপর থেকে আমার ইচ্ছে হয় তাঁর লীলাধাম দেওঘরে যাবার। তারপরের বৎসরই আমার ঋত্বিক দেবতা শ্রীরামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য এর মাধ্যমে দর্শনে যাওয়া হয়।
দেওঘরে যাবার কিছুদিন আগে আর একটি ঘটনা উল্লেখ না করে তৃপ্তি আসছে না। সময়টি ছিল শরৎ এর প্রথম দিকে। ঐ সময় আমাদের দিরাই ভাটি অঞ্চলের কর্মী গুরুভ্রাতা শ্রীমনোরঞ্জন দাম দা ঢাকা থেকে আসেন, উনার শাশুড়ি মা ও স্ত্রীকে নিয়ে এসে শ্রীহট্ট সৎসঙ্গ বিহারে রেখে যান। পরের দিন উনার ব্যক্তিগত কাজে বাইরে চলে যান। সেদিন আর বিহারে আসেননি। শ্রীরামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য মন্দিরেই ছিলেন। আমি মন্দিরের গেইটের বাইরে সতুন একটা একতলা বিল্ডিং এর প্রথম রুমে থাকি। ঐদিন আমি অনুমান সাড়ে তিনটার দিকে সময় আমার ঋত্বিকদেবতা শ্রীরামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য আমার দরজায় জোর শব্দ করে নাম ডেকে উঠলেন।
আমি বুঝতে পারলাম, এতো রাতে নিশ্চিত কোন বিপদ। তিনি বললেন, তোমার কাছে ওষুধ আছে? আজ্ঞে মাত্র কয়েকটি ওষুধ এ রাখা। আমি জারতে চাইলাম কি জন্য? তিনি বললেন, একটি বৃদ্ধা মায়ের প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে। তাই তুমি তাড়াতাড়ি করে একটি ওষুধ নিয়ে আস। আমি তখনও পাঁকা প্র্যাকটিশনার্স নই। রক্তক্ষরণ শুনে বলতে লাগলাম আমিতো কোন ৗষধ আনি নাই। তখন তিনি বললেন, ইষ্ট নাম জপে জপে নিয়ে আস। ঠিক উনার কথামত বক্স এ হাত দিয়ে শক্তির ২টি বোতল হাতে নিয়ে প্রাণ ভরে দয়ালের নাম নিয়ে রোগীনির সম্মুখে উপস্থিত হয়ে দেখলাম ঘরের মেঝেতে শুয়ে পড়ে আছেন। আর তিনির মেয়ে দুহাত দিয়ে জল উঠানোর মত রক্ত উঠাচ্ছেন একটি বালতিতে। অর্ধবালতি হয়ে গেছে দেখে আমি হে ঠাকুর বলে বসে পড়ি এবং রোগীনির গায়ে হাত দিয়ে দেখলাম নাড়ি স্পন্দন পাওয়া যাচ্ছে না, শরীর একবারে শীতল অবস্থা। পার্শ্বে ঋত্বিক দেবতা বসে নাম করছেন। আমার হাতে শক্তি নেই ওষুধ দেয়ার। তখন রামকৃষ্ণ ভট্টচার্য্য ধমক দিয়ে বলছেন অরুন ওষুধ দিস না কেন? সেই মুহুর্ত্বে আমি জানি না কেমন করে শক্তির বোতল থেকে রোগীনির ঠোঁটের উপর ঢালতে থাকি কয়েক ড্রপস। ২-৩ মিনিটের মধ্যে দেখতে পাই মেয়ের দুহাতে রক্তের পরিমাণ কমে আসছে। আমি তখন বুঝতে পারলাম শ্রীশ্রীঠাকুরের অপার দয়াতে অসম্ভব সম্ভব হয়। পরদিন উনার জামাতা বর্তমানে সহপ্রতিঋত্বিক শ্রীমনোরঞ্জনদা এসে আর ডাক্তারের কাছে নিতে পারলেন না আমাকেই দায়িত্ব নিয়ে চিকিৎসা করে তাঁর দয়াতে তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে যান।
লেখক: ডা: অরুনোদয় ধর
ডি.এইচ.এম.এস (ঢাকা)
অর্থ-সম্পাদক, সিলেট মহানগর সৎসঙ্গ, সিলেট, বাংলাদেশ।
কূলগুরুবেষ্টিত পরিবারে আমার জন্ম। ঐ পরিবেশ থেকে আমার বেরিয়ে আসতে আমার দুটি বছর সময় লেগেছিল। কারণ আমার দীক্ষা গ্রহনের দুবছর আগ থেকে সৎসঙ্গ বিহারে থাকার সৌভাগ্য তৈরি করেছিল প্রথমত আমার সতীর্থ ডা: মন্টু দাস ও মামা শ্রীক্ষীতিষ দত্ত (সহপ্রতিঋত্বিক)। যদিও আমার মামার বাড়ি সকলেই সৎনামে দীক্ষিত ছিল, তারপরও আমার সৎনাম গ্রহন করতে অনেক সময় লেগেছিল। আমি সৎনাম গ্রহন করি ১৩৯৮ বাংলা ৩০শে ভাদ্র শ্রীযুক্ত রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য (সহপ্রতিঋত্বিক) মহোদয়ের মাধ্যমে।
সৎনাম গ্রহনের সময়টি ছিল রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মুহুর্ত্ব (১৯৯২ ইং)। রাজনৈতিক দুইটি দলের মধ্যে স্থানীয়ভাবে সিলেটে দাঙ্গা-হাঙ্গামা চলছিল। এর মধ্যে এক রাতে কয়েকটি যুবক আমার রুমে এসে একটি ছালার ব্যাগ রেখে যায়্ আমার অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমাকে তা রাখতে হয়। ওরা চলে পাবার পর, ব্যাগের ভিতরের জিনিসগুলো দেখে ভীষণ বিপদের সম্মুখীন হয়ে পড়ি। তাৎক্ষনিকভাবে আমার ইষ্টদেবের নাম নিতে নিতে ভাবলাম বাইরে কোথাও রাখতে হবে। বাহিরে দেয়াল সংলগ্ন কলাগাছের ঝাড়ের মধ্যে রেখে দেই। কিন্তু সমস্ত রাত বিনিদ্রভাবে কাটাতে হয়েছে।
দেওঘরে যাবার কিছুদিন আগে আর একটি ঘটনা উল্লেখ না করে তৃপ্তি আসছে না। সময়টি ছিল শরৎ এর প্রথম দিকে। ঐ সময় আমাদের দিরাই ভাটি অঞ্চলের কর্মী গুরুভ্রাতা শ্রীমনোরঞ্জন দাম দা ঢাকা থেকে আসেন, উনার শাশুড়ি মা ও স্ত্রীকে নিয়ে এসে শ্রীহট্ট সৎসঙ্গ বিহারে রেখে যান। পরের দিন উনার ব্যক্তিগত কাজে বাইরে চলে যান। সেদিন আর বিহারে আসেননি। শ্রীরামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য মন্দিরেই ছিলেন। আমি মন্দিরের গেইটের বাইরে সতুন একটা একতলা বিল্ডিং এর প্রথম রুমে থাকি। ঐদিন আমি অনুমান সাড়ে তিনটার দিকে সময় আমার ঋত্বিকদেবতা শ্রীরামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য আমার দরজায় জোর শব্দ করে নাম ডেকে উঠলেন।
আমি বুঝতে পারলাম, এতো রাতে নিশ্চিত কোন বিপদ। তিনি বললেন, তোমার কাছে ওষুধ আছে? আজ্ঞে মাত্র কয়েকটি ওষুধ এ রাখা। আমি জারতে চাইলাম কি জন্য? তিনি বললেন, একটি বৃদ্ধা মায়ের প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে। তাই তুমি তাড়াতাড়ি করে একটি ওষুধ নিয়ে আস। আমি তখনও পাঁকা প্র্যাকটিশনার্স নই। রক্তক্ষরণ শুনে বলতে লাগলাম আমিতো কোন ৗষধ আনি নাই। তখন তিনি বললেন, ইষ্ট নাম জপে জপে নিয়ে আস। ঠিক উনার কথামত বক্স এ হাত দিয়ে শক্তির ২টি বোতল হাতে নিয়ে প্রাণ ভরে দয়ালের নাম নিয়ে রোগীনির সম্মুখে উপস্থিত হয়ে দেখলাম ঘরের মেঝেতে শুয়ে পড়ে আছেন। আর তিনির মেয়ে দুহাত দিয়ে জল উঠানোর মত রক্ত উঠাচ্ছেন একটি বালতিতে। অর্ধবালতি হয়ে গেছে দেখে আমি হে ঠাকুর বলে বসে পড়ি এবং রোগীনির গায়ে হাত দিয়ে দেখলাম নাড়ি স্পন্দন পাওয়া যাচ্ছে না, শরীর একবারে শীতল অবস্থা। পার্শ্বে ঋত্বিক দেবতা বসে নাম করছেন। আমার হাতে শক্তি নেই ওষুধ দেয়ার। তখন রামকৃষ্ণ ভট্টচার্য্য ধমক দিয়ে বলছেন অরুন ওষুধ দিস না কেন? সেই মুহুর্ত্বে আমি জানি না কেমন করে শক্তির বোতল থেকে রোগীনির ঠোঁটের উপর ঢালতে থাকি কয়েক ড্রপস। ২-৩ মিনিটের মধ্যে দেখতে পাই মেয়ের দুহাতে রক্তের পরিমাণ কমে আসছে। আমি তখন বুঝতে পারলাম শ্রীশ্রীঠাকুরের অপার দয়াতে অসম্ভব সম্ভব হয়। পরদিন উনার জামাতা বর্তমানে সহপ্রতিঋত্বিক শ্রীমনোরঞ্জনদা এসে আর ডাক্তারের কাছে নিতে পারলেন না আমাকেই দায়িত্ব নিয়ে চিকিৎসা করে তাঁর দয়াতে তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে যান।
লেখক: ডা: অরুনোদয় ধর
ডি.এইচ.এম.এস (ঢাকা)
অর্থ-সম্পাদক, সিলেট মহানগর সৎসঙ্গ, সিলেট, বাংলাদেশ।
Post a Comment