Ads (728x90)

SRI SRI THAKUR VIDEO

Like this page

Recent Posts

World time

Add as a follower to automatically get updated Article. Jaiguru!

তপোবনের একটি ছাত্র পরীক্ষায় ফেল করেছে বলে শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে এসে কাঁদছে। শ্রীশ্রীঠাকুর তখন আশ্রম প্রাঙ্গণে বাবলা-তলায় একটি হাতলওয়ালা বেঞ্চে পূর্ব্বাস্য হয়ে বসা। বেলা আন্দাজ আটটা, রোদ উঠেছে বেশ, শ্রীশ্রীঠাকুর রোদের মধ্যে পা-দুখানি রেখেছেন,বেঞ্চের হাতলে হেলান দিয়ে সুখকর ভঙ্গীতে বসে আছেন। কিছু ধান ছিটিয়ে দেয়া হয়েছে, কতকগুলি পায়রা সেগুলো খুঁটে-খুঁটে খাচ্ছে। শ্রীশ্রীঠাকুর পায়রাগুলির দিকে চেয়ে আছেন। সস্নেহ-সতৃষ্ণ দৃষ্টিতে, চেয়ে-চেয়ে দেখছেন পায়রাগুলির ধান খাওয়া। পায়রাগুলির সুখে তিনিও যেন কত সুখী। ছেলেটির কান্নায় শ্রীশ্রীঠাকুর চকিতভঙ্গীতে চাইলেন তার দিকে, চেয়ে স্নেহ বিগলিত কণ্ঠে বললেন,কি হইছেসোনা? কি হইছে? কাঁদো কেন?

ছেলেটি কাঁদতে-কাঁদতে বলল: আমি পরীক্ষার পরে বাড়ী চলে গিয়েছিলাম, আজ এসে শুনলাম, আমি প্রমোশন পাইনি। ভাবছি, বাবা-মাকে কি ক’রে এই কথা জানাব।

শ্রীশ্রীঠাকুর হেসে বললেন,ও, এই কথা! এই জন্য তুই কাঁদছিস! দূর পাগল? পরীক্ষায় ফেল করিছিস, তাতে কী হইছে? এবার এমনক’রে পড়, যা’তে খুব ভালোভাবে পাশ করতে পারিস। মনে-মনে এমন সংকল্প করা লাগে যে জীবনে আর কখনও ফেল করব না। আর শুধু নিজে ফেল না করা নয়, সহপাঠী বা পরিচিত কাউকেও ফেল হ’তে দিবি না। কোথায়-কোথায় কিসে-কিসে গলদ আছে,সেগুলি বের করা লাগে, বের ক’রে খেটে শুধরে ফেলতে হয়। নিজের গলদগুলি সেরে ফেলতে পারলে, অন্যকেও তখন তোর অভিজ্ঞতা দিয়ে সাহায্য করতে পারবি, প্রবুদ্ধ ক’রে তুলতে পারবি। শুধু পড়াশোনার ব্যাপারে নয়, সব ব্যাপারেই জীবনে জয়ী হওয়া চাই। যদি কখনও কোনও ভাল কাজে অকৃতকার্য্য হোস বা দুঃখ পাস, তা’তে কিন্তু দমবি না, রোখের সঙ্গে লেগে যাবি। বাধাকে বাধ্য ক’রে তার উপরে উঠে জয়ী হওয়া চাই। আমার ঐ স্বভাব আছে, তাই দেখিস না কিছুতেই ডরাই না। বাধাকে বাধ্য করা, না-কে হাঁ করা, অসম্ভবকে সম্ভব করা,এ যেন আমার একটা নেশা বিশেষ। তা’তে কোন কষ্টের জ্ঞান থাকে না আমার, একটা শূয়োরে গোঁ যেন পেয়ে বসে। কাজ হাসিল না ক’রে যেন আমার রেহাই নেই। অনেকদিন আগের কথা, একদিন গরমের সময় দুপুরবেলা হঠাৎ খেয়াল হ’লো, এই গরমের মধ্যেই আগুনের মতো বালির উপর দিয়ে হেঁটে কুষ্টিয়া যাব। মনে হওয়া মাত্র বেরিয়ে পড়লাম। সে কি কাঠফাটা রোদ, বালি তেতে যেন একেবারে জলন্ত কয়লা হ’য়ে আছে। একটু দূর হেঁটে মনে হ’লো, এর মধ্যে যেয়ে কাজ নেই। পরক্ষণেই মনে হলো-এত শীঘ্র আমি সংকল্পচ্যুত হব, তা’ কিছুতেই হ’তে দেব না, মনে যখন করেছি যাব, যেতেই হবে আমাকে।



তখন সেই অবস্থায় ৯ মাইল পথ পাড়ি দিলাম এইভাবে। যেতে-যেতে পায়ের তলায় ফোস্কা প’ড়ে গ’লে-গ’লে ঘা হ’য়ে গেল, কিন্তু তবু দমলাম না,তখন রোখ আমার এতই প্রবল যে কষ্ট সম্বন্ধে হুঁশ নেই। কুষ্টিয়া পৌঁছে তখন খেয়াল হ’লো পায়ের কী অবস্থা হয়েছে। ওদিন কেটে গেল,পরদিন দুপুরবেলা আবার মনে হ’লো, দেখি পায়ের এই অবস্থা নিয়ে আবার পাবনা পর্য্যন্ত হেঁটে যেতে পারি কি না। কষ্টের কথা ভেবে মন শিউরে উঠলো, তৎক্ষণাৎ মনে হ’লো, ভয় বা দূর্বলতাকে প্রশ্রয় দেয়া চলবে না। পারব না যখন মনে হচ্ছে, তখন তাকে অতিক্রম ক’রে পারাই লাগবে। ভেবে কি ব’সে থাকার জো আছে? ভেবেছি কি করতেই হবে। বেরিয়ে পড়লাম পায়ের ঐ দগদগে ঘা নিয়ে এসেপৌঁছুলাম এখানে। কোনো ভালো ব্যাপারে হ’টে যাওয়াটা আমার কাছে বড় অপমানজনক মনে হয়। ও আমি কিছুতেই বরদাস্ত করতেপারি না।...তোরা আমার বাচ্চা, তোদেরও আমি এমনতর দেখতে চাই। তাই বলি, রুখে দাঁড়া, ফেল যেন ফেল মেরে যায় তোর কাছে,কোন ব্যাপারে ফেলকে আর এগুতে দিবি না তোর ত্রিসীমানার কাছে, শুধু তুই নয়, দেখবি কেউ যেন কোন সৎকাজে ফেল না পড়ে।নিজে কৃতকার্য্য হ’বি, সবাইকে চেতিয়ে তুলে কৃতকার্য্যতায় পৌঁছে দিবি। কী বলিস, এ খেলায় মজা আছে না?



ছেলেটি তখন স্ফূর্ত্তিতে ফুলছে, হাসি-হাসি মুখে বলল, আপনার কথা শুনে মনে হ’চ্ছে আমি সব পারব। আমি আজ থেকে লাগলাম।

শ্রীশ্রীঠাকুর উল্লসিত হ’য়ে- সাবাস বেটা! এরেই তো কয় পুরুষ-ছাওয়াল। তবে যা’ করিস, শরীরটা ঠিক রেখে করবি। মনে রাখিস্, আমার জন্য তোকে জীবনে বড় হওয়া লাগবে, কৃতী হওয়া লাগবে, আর তা’তে তোর বাপ-মায়েরও মুখ উজ্জ্বল হবে।

ছেলেটি আনন্দবিধুর সাশ্রুনয়নে শীতের মাটিতে আভূমিলুণ্ঠিত হ’য়ে প্রণাম ক’রে চ’লে গেল, তার অশ্রুধারা পুরুষোত্তম-পদচুম্বিত আশ্রম-ভূমির উপর অম্লান মাধুর্য্যে জেগে রইল তার শুভসঙ্কল্পের-নবজন্মের ভাস্বর স্বাক্ষর বহন ক’রে।

Post a Comment