Ads (728x90)

SRI SRI THAKUR VIDEO

Like this page

Recent Posts

World time

Add as a follower to automatically get updated Article. Jaiguru!


 মা-বাপ মানুষের সত্যিকার গৃহদেবতা। এই গৃহদেবতা যতদিন থাকেন, ততদিন অমঙ্গল মানুষকে কাবু করতে পারে কমই। তাদের প্রতি ভক্তিই মানুষকে অনেকখানি তাজা রাখে। [আলো.প্র.-২০/৫১]

 পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম পিতাই তপের নন্দনা,
পিতৃপ্রীতি চারিয়ে আনে সব দেবতার বন্দনা।

 আরোধ্যদেব পিতাকে তুমি নিত্য কর নমস্কার,
জ্ঞানদাতা তিনিই জেনো শিবরুপেতে তিনি তোমার।

 পিতা মাতায় ভক্তি জানিস্ প্রথম শিষ্ট ভাব,
তার উপরেই গজিয়ে ওঠে জীবনের স্বভাব।

§ ইষ্ট জানিস্ পিতা মাতার শিষ্ট বেদন-বিগ্রহ,
তাঁহার প্রতি থাকলে নতি নিরুদ্ধ হয় নিগ্রহ।

§ পিতার পূজায় সত্তা-পুরুষ অন্তরে তোর স্থিতি পান,
আশিস্-কুশল কৃতি-দীপনায় করেন তিনি স্বস্তি-দান।
§ পিতৃসেবায় ব্রতী যে-জন সত্তাবিবেক বুদ্ধি নিয়ে,-
জীবনধারার উর্জ্জনা তার ফোটেই অঢেল আলো বিছিয়ে।

§ পিতৃনিষ্ঠা, শিষ্টাচার আর শুভসুন্দর ব্যবহার,
নিয়ন্ত্রিত করে জীবন নিয়ে অশেষ উপচার।

 পিতায় শ্রদ্ধা মায়ে টান,
     সেই ছেলে হয় সাম্যপ্রাণ।
 স্যার আশুতোষ বিদ্যাসাগর কোথায় পেল শক্তি?
দেখ চেয়ে তার পিছনে আছেই মাতৃভক্তি।

§ চাণক্যের সামনের দুটো দাঁত উঁচু ছিল। জ্যোতিষী তার মাকে বলেছিল, ঐটে নাকি রাজলক্ষণ। মা ঠাট্টা করে বললেনÑচাণক্য! তুমি তো রাজা হবে, রাজা হলে একদিন এই গরীব মাকে ভুলে যাবে। এই কথা শোনা মাত্র চাণক্য কোন কথা না বলে নোড়া দিয়ে দাঁত দুটো ভেঙ্গে ফেললেন। দরদর করে রক্ত বেরুতে লাগল। মা তো বেকুব! চাণক্য বলেÑদাঁত থাকলে যদি রাজা হতে হয়, আর রাজা হলে যদি তোমাকে ভুলতে হয়, তার মূল আমি মেরে দিলাম। মাতৃভক্তির বিরল দৃষ্টান্ত!

§ আমাদের দেশে একটা কথা আছে, যে ছেলের মুখ মায়ের মুখের মত দেখতে হয়, সে বড় হয় জীবনে।

§ মাতৃভক্তি অটুট যত
সেই ছেলে হয় কৃতি তত।

§ মাতৃভক্ত যারা, তারা প্রায়ই সুখী হয়, বড় হয়, কোমলহৃদয় হয়। যে-সব ছেলেরা মাতৃভক্ত থেকে পিতৃভক্ত বেশী হয়, তারা খানিকটা কঠিনহৃদয় হয়।

§ কাম-কুহেলে পড়িস্ যখন আমার কথা শোন্-
মাতৃচিন্তা-বিভোর হয়ে সৎকাজে দিস্ মন।

 মাতৃসেবার অমোঘ টানে চল ওরে তুই চল,
থাকবি হ’তে বীর্য্যবান পাবিই বুকে বল।

 পিতামাতায় অটুট টান পূরনপ্রবণ ঝোঁক,
সেই ছেলেই ভবিষ্যতের মহান একটি লোক।

 ছেলের নেশা মায়ের উপর মেয়ের নেশা বাপে,
এমনতর ছেলে মেয়ে নষ্ট হয়না চাপে।

 মা-বাপের তুই ধার ধারিস না বউ থাকে তোর জঙ্গলে,
কোথায় আসবে শিষ্ট আচার-সুখি হবি কোনকালে?

 ইষ্টভরণ পিতৃপোষন পরিস্থিতির উন্নয়ন
এ না করে যা করিস্ অধঃপাতে তোর চলন।

শ্রীশ্রীঠাকুর একদা মাতৃবিরাগ সুরেশদাকে বললেন-যা, এখনই মাকে গিয়ে প্রণাম করে আয়। ‘নমামি তারিনীং, বহুবল ধারিনীং, নমামি মাতরম’।এই বলে প্রণাম করবি। এখনই যা, এই পায়ে গিয়ে প্রণাম করে আয়। সুরেশদা যথাযথ করলেন।

 শ্রীকৃষ্ণ একদা বন্ধুদের সাথে খেলার নেশায় জঙ্গলের ভেতরে প্রবেশ করলেন। হঠাৎ শুনতে পেলেন-একজন বৃদ্ধমানুষ (গন্ধর্বমুনি) জলতৃষ্ণায় কাতর সুরে সাহায্য চাইছেন। শ্রীকৃষ্ণ দৌঁড়ে গিয়ে জলাশয় থেকে জল আনলেনÑকিন্তু মুনিবর বললেন, তুমি মহাপাপী তোমার জল আমি খাব নাÑতোমার জন্মদাতা মা-বাবা কংশের কারাগারে অন্নজলের অভাবে অন্ধকারে ধুকে-ধুকে মরতে চলেছে, আর তুমি তাদের সন্তান হয়ে নন্দরাজার প্রাসাদে রাজভোগ খেয়ে রাজবাড়ীতে নেচে বেড়াচ্ছ- তুমি আমাকে জল দেবে! তোমার জল আমি খাব না। শ্রীকৃষ্ণ বললেন-মহর্ষি আপনি দয়া করে জলপান করুন, আমি আমার মা-বাবাকে এই মুহুর্তে মুক্ত করে আনব। শ্রীকৃষ্ণ জানতেন না যে তার মা-বাবা কংশের কারাগারে বন্দি। জানামাত্রই মা-বাবাকে তিঁনি যুদ্ধ করে মুক্ত করে আনলেন। আর আজকের সমাজে শ্রীকৃষ্ণের ভক্তরা মা-বাবাকে ত্যাগ করে, নিজ-বংশপরিচয় মুছে ভিন্ন নামে ধর্ম্ম করে বেড়ায়। যারা মা-বাবাকে ভাত দেয় না, তারা আর যাই হোক কৃষ্ণভক্ত হতে পারে না।
অন্নদাতা, ভয়ত্রাতা, কন্যাদাতা, জনক এবং উপনয়নদাতা এই পাঁচজন পিতা বলে কথিত। শাস্ত্রে আছে -
অন্নদাতা ভয়ত্রাতা কন্যাদাতা তথৈব চ।
জনয়িতোপনেতা চ পঞ্চৈতে পিতরঃ স্মৃতাঃ।।
§ কালী মানে সংখ্যায়নী গতি। যে-গতির দ্বারা সংখ্যা অর্থাৎ সষ্টি হয়। কালো negation of all colours (সমস্ত বর্ণের অনুপস্থিতি)। শিব combination of all colours  (সমস্ত বর্ণের সমাবেশ)। শিবেরই opposite pole  (বিপরীত মেরু) কালী। মা মেপে দেন, পরিমাপিত করেন, প্রত্যেককে তার মতো করে সৃষ্টি করেন। কোথাও একটার মত আর একটা নয়। প্রত্যেকেই আলাদা। এক বাপের পাঁচ ছেলে প্রত্যেকেই আলাদা। মা-ই যেন আলাদা করে মেপে দেন। নিজের মাকে বাদ দিয়ে যে কালীপূজা করে, শ্যামাপূজা করে, জগদ্ধাত্রী পূজা করে, সে পূজা সার্থক হয় না। প্রত্যেকের মা ও বাবা তার জীয়ন্ত গৃহদেবতা বিশেষ। মার উপর টান থাকলে সদ্গুরুর প্রতি টান আপনা থেকে হয়ে ওঠে।

 পিতামাতার উপর অচ্যুত ভক্তি হল সবচেয়ে বড় শিক্ষা। এ থেকেই আসে ইষ্টের ওপর প্রেম, প্রীতি, নিষ্ঠা। দুনিয়ায় যারা বড় হয়েছেন তারা পিতামাতা, গুরুজন, গুরুকে শ্রদ্ধা-ভক্তি করেই হয়েছেন। এর চেয়ে বড় শিক্ষা আর কোথায়? এই পথ ধরে ঈশ্বরপ্রাপ্তি পর্যন্ত হয়ে থাকে। গুরু, সূর্য, শালগ্রাম শিলা, অগ্নি, আত্মা, পিতা, মাতা, পতি, এদের যে কোনটি অবলম্বন করে ঈশ্বরলাভ করা যায়। তবে গুরুকে অবলম্বন করে তাঁর কাছে পৌঁছানো সবচেয়ে সহজ। পিতা-মাতাকেও দেবতাজ্ঞানে পূজা করা হয়। কিন্তু গুরু “সর্বদেবময়ো গুরু”। ¬শ্রীশ্রীবড়দা। (ই.প্র৪র্থ/২৭)

 মহাভারতে আছে-শান্তিপর্ব-১০৫তম অধ্যায়
ভূতো বৃদ্ধো যো ন বিভর্ত্তি পুত্রঃ স্বযোনিজঃ পিতরং মাতরঞ্চ।
তদ্বৈ পাপং ভ্র“ণহত্যা বিশিষ্টং তন্মান্নান্যঃ পাপকৃদস্তি লোকে।।
অর্থাৎ - স্বীয় পিতা-মাতা কর্ত্তৃক পরিপালিত ও পরিবর্দ্ধিত হয়ে যে-পুত্র ঐ পিতামাতাকে ভরণপোষণ না করে তার পাপ ভ্রƒণহত্যার পাপের সমতুল। ঐ-সন্তানের থেকে বড় পাপী আর পৃথিবীতে নেই।

পিতামাতাও গুরু। মনপ্রাণ দিয়ে পিতামাতাকে ভক্তি করলে শ্রদ্ধা করলে গুরু আপসে মিলে যাবে। আমাদের শাস্ত্রে বলে পিতা, মাতা, পতি, অগ্নি, আত্মা, শালগ্রাম শিলা, গুরু ইত্যাদি যে কোনটির ভজনা করলে ঈশ্বরলাভ করা যায়। পিতা-মাতাকে মনেপ্রাণে ভক্তি করতে-করতে সদগুরুর সন্ধান পাওয়া যায়। সেজন্য পিতা-মাতার উপর ভক্তি রাখতে হয়। তাঁদের তৃপ্তি দিতে হয়। পিতা-মাতায় যার ভক্তি নেই, সদগুরু বেটে খেলেও তার কিছু হবে না। যার পিতা-মাতার উপর ভক্তি আছে সদগুরু লাভের রাস্তাও তার ঠিক হয়ে যায়।  - শ্রীশ্রীবড়দা।

প্রশ্নঃ ঠাকুর! আমার বাবা-মাকে ভাল লাগে না, জোর করে কি ভক্তি আনা যায়? ওরা আমার ইষ্টের পথে বাধা দেয়, কি করব?  
শ্রীশ্রীঠাকুর - বাবা-মাকে ভাল লাগে না মানে, নিজের জীবনকেই তোমার ভাল লাগে না। অমন কথা কখনও বলবি না। অমন কথা ভাবাও পাপ, বলাও পাপ, শোনাও পাপ। বাবা-মা হলেন তোমার জীবনের আদিভূমি, তাঁদের দিয়েই জালাইছে তোমার শরীর-মন। তাঁদের যদি অপ্ভার করতে শেখ, দেখবে, দুনিয়ায় তোমার loafer(বাউন্ডুলে) হয়ে ঘুরে বেড়ানো ছাড়া কোন গত্যন্তর থাকবে না। বাপ-মায়ের প্রতি ভক্তিশ্রদ্ধা নেই অথচ জীবনে বড় হইছে এমন একটা মানুষও দেখা যায় না। আমি বলছি - তুই রোজ এইগুলি করবি। রোজ সকালে উঠে বাবা-মাকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করবি। ইষ্টভৃতি করার পর বাবা ও মাকে কিছু-না-কিছু রোজ দিবি। নিজ হাতে বাবা-মার সেবা যত করবি। বাবার জুতোটায় হয়তো কালি দিয়ে দিলি। পা ধোয়ার জলটা হয়তো এনে দিলি। মার বাসনটা হয়তো মেজে দিলি। রান্না করতে-করতে মা ঘেমে গেছে, তুই যেয়ে হয়তো পাখা দিয়ে বাতাস করলি। নিত্যনূতন ভেবে-ভেবে বের করবি আর বাবা-মার সন্তোষ ও শান্তি যাতে হয়, হাতে-কলমে তাই করবি। কয়েকদিন এই করে দেখ, তখন দেখবি, মা-বাবাকে কত মিষ্টি লাগে, বুঝতে পারবি তাঁরা কি বস্তু। বাবা! এই জ্যান্ত দেবতাদের যদি খুশি করতি না পার, তাঁরা যদি প্রসন্ন না হন, তালে কিন্তু সব দেবতার দরজায় তোমার কাঁটা পড়ে যাবে। কারও প্রসন্নতা উৎপাদন করা সম্ভব হবে না তোমার পক্ষে। তোমার মঙ্গল যারা চান, তোমার হিতাকাঙ্খী যারা, তাঁরা কখনও তোমার মঙ্গলের পথে চলতে বাধা দিতেই পারেন না। তবে তোমার নিজ আচরণ দিয়ে প্রমাণ করতে হবে যে তুমি প্রকৃত মঙ্গলের পথে চলেছ। তার প্রথম ধাপই হলো পিতামাতার প্রতি আরো সশ্রদ্ধ ও সেবাপরায়ণ হওয়া। তোমার ঠাকুর ধরার ফলে নগদানগদি এই শুভ পরিবর্ত্তনটা যদি তাঁরা দেখেন, তাহলে তোমার সঙ্গে লড়াই করতে যাবেন কোন দুঃখে? সেবা খুব দিতে হয়, খুব মান্য করতে হয়, কিন্তু ইষ্টের ব্যাপারে খুব ধর্ম্মমত্ত থাকা লাগে।[আলো.প্র.৪/১৪১]
 ধর্ম্মস্য তত্ত্ব নিহিত গুহায়াম্। এটা খুব কঠিন। কিন্তু আবার খুব সহজও। পূরাণে একটা গল্প আছে - মা দূর্গার দুই ছেলৈ - কার্তিক, গণেশ। মা-র গলায় গজমতির হার। মা স্থির করলেন দুই ছেলের মধ্যে যে আগে সারা পৃথিবী ঘুরে আসতে পারবে তাকে তিনি গজমতির হারখানি দেবেন। দেবসেনাপতি কার্তিকের বাহন ময়ূর। তাই তিনি শোনামাত্র বেরিয়ে পড়লেন ময়ূরের পিঠে চড়ে। কার্তিক ভাবছে সে নিশ্চয়ই হারটি পাবে। কারণ ময়ূল খুব দ্রুতগামী। গণেশের বাহন ইঁদুর। সে তো সারা পৃথিবী ঘুরে আসতে পারবে না আমার আগে। গণেশ ভাবছে মা-ই তো দুনিয়া। তাই একবার মা-র চতুর্দিক প্রদক্ষিণ করে দাঁড়াতেই মা দুর্গা তাকে কোলে টেনে নিলেন। এদিকে কার্তিক কোথাও না থেমে দ্রুতবেগে পৃথিবী ঘুরে এসে দেখেন গণেশ হাসিমুখে মায়ের কোলে বসে - গলায় গজমতির হার। তাই বলছি ভক্তিতে সব সহজ। বিশ্বাসে সব সহজ।  - শ্রীশ্রীবড়দা।
গীতায় আছে -
অনন্যাশ্চিন্তয়ন্তো মাং যে জনাঃ পর্যুপাসতে।
তেষাং নিত্যাভিযুক্তানাং যোগক্ষেমং বহাম্যহম্।।

Post a Comment