শ্রীশ্রীঠাকুর চাকরী বৃত্তিটাই পছন্দ করেন না। তিঁনি চেয়েছেন উদ্ভাবনী শিল্পমাথা।
§ শিল্পীমাথা শিল্প ঘরে
তবেই দেশে লক্ষী ধরে।
§ সেবাবুদ্ধিই শিল্প গড়ে
শিল্পেই সব হতে পারে।
§ ঋষির ছেলে আর্য্য তোরা
গোলাম বুদ্ধি ত্বরায় ফেরা।
যে-শিক্ষা স্বাভাবিকভাবে চাকুরীকেই সর্ব্বস্ব বলে জানিয়ে দেয়,তা তোমার যোগ্যতাকে জব্দ করবেই কি করবে,সাবধান থেকো।
কারো চাকর হতে যেওনা বরং সেবক হও, আর সেবার অনুপ্রেরণা যেন অন্তঃস্থ অনুকম্পনা হয়ে ওঠে; চাকুরী কিন্তু চাকর-মনোবৃত্তিসম্পন্ন করে তোলে, ক্রীতদাস করে তোলে।
বংশানুক্রমিকতা (Heridity) যখনই, যে-কোন প্রকারেই বিকৃত ও বিধ্বস্ত হয়, বুদ্ধিবৃত্তির উদ্ভাবনী ক্ষমতা তখন হইতেই জর্জরিত ও অবসন্ন হইতে থাকে, তখনই মানুষের বাঁচিয়া থাকার প্রয়োজন গোলামিতে উপসংহৃত হয়, নজর রাখিও!
বুঝিও, তাহা করাই গোলামি যাহা করিতে গিয়া প্রাপ্যের খাতিরে তোমার আদর্শকে বিসর্জ্জন দিতে হইতেছে!
দাস-মনোবৃত্তি যাদের গর্ব্বেপ্সু করে তুলেছে, সুকেন্দ্রিক শ্রেয়ার্থ সঙ্গতি তাদের পক্ষে সুদূরপরাহত।
প্রশ্নঃ আমার ছেলে সবে লেখাপড়া শেষ করল, চাকরি করবে কিনা?
§ চাকরী আমার পছন্দ না। অগত্যা করতে পারে। ওতে brain-এর all-round unfurling hindered (মস্তিষ্কের সর্ব্বতোমুখী বিকাশ ব্যাহত) হয়, শেষে চাকরী ছাড়া পথ নেই। চাকরী চলে যাওয়াকে জীবন বের হয়ে যাওয়ার সামিল মনে করে। স্বাধীনভাবে কিছু করার অভ্যাস থাকলে, অমন করে আত্মবিশ্বাস হারায় না।
প্রশ্নঃ আর চাকরী করতে ভাল লাগে না।
শ্রীশ্রীঠাকুর: ওতে স্কুলমাষ্টারের মতো হয়, একদিক ছাড়া অন্য সবদিক die out (বিলুপ্ত) করে। কিন্তু যারা স্বাধীন ব্যবসা করে, তাদের পথ খোলা থাকে, মাথা খোলা থাকে, ability বাড়ে। চাকরী এমন বিশ্রী জিনিস যে একপুরুষ চাকরী করলেও পুরুষানুাক্রমে চাকরীর tendency আসে। কলকাতায় বি-এ পাশ রিক্সাওয়ালা দেখেছিলাম। জিজ্ঞাসা করায় বলল,‘ঠাকুরদা, বাবা, কাকা সবাই চাকরে। তাদের দশা দেখে মনে হল, অন্য যা-কিছু পারি করব, কিন্তু চাকরীর মধ্যে কিছুতেই ঢুকব না। আর কোন সুবিধা না পেয়ে শেষটা এই করছি।’ মুখে কিছু বললাম না, মনে-মনে ভাবলাম, পূর্ব্বপুরুষের চাকরীর পাপে আজ তুমি রিক্সাওয়ালা হয়েছ, যাহোক এটা তবু স্বাধীন ব্যবসায়ের অন্তর্গত, এতে তুমি উন্নতির পথ পেলেও পেতে পার।
আজকাল ইউনিভার্সিটি থেকে যারা পাশ করে বেরোচ্ছে তাদের লক্ষ্য হচ্ছে চাকরী। বাংলা আস্তে-আস্তে একটা গোলামের কারখানা হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে, মানুষ আর মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াত পারবে না। যে আন্দোলনের ফল ভোগ করে গেলেন গান্ধীজীরা, তার সৃষ্টি করল কিন্তু বাঙ্গালী। আর এখন বাঙ্গালীর নামও নেই। গোলামী করতে করতে একেবারে নিকেশ হয়ে যাওয়ার মুখে। ঐ যে কথা আছেÑ
পাপচারে কদাচারে সন্ধুক্ষিত যেথা
বিধিরোষ নিঃসন্দেহে জানিও সেথায়,
নিষ্ফল পুরুষকার, দৈব বলবান।
এই যে ইংরাজ আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেল। আমরা কিন্তু এমন কিছু করিনি যাতে স্বাধীনতা পেতে পারি। আজ দেখ চাকরদের সংখ্যা কিভাবে বেড়ে গেছে। বাংলা-বিহারের কত লোক আজ চারীজীবি। সব মিলে আস্তে-আস্তে জাতীয় চাকর গোষ্ঠী হয়ে যাবে।
ঘুষ নেওয়া মানেই, কৃতিদেবীর শিষ্ট পূজাকে অগ্রাহ্য করা, তাঁর আরাধনাকে অভিনন্দিত না করে ফাঁকিবাজির ফক্কিকারীতে নিজেকে নিবিষ্ট করে তোলা; আর, তাতে বৃদ্ধি ও ব্যাপ্তি সঙ্কীর্ণতা লাভ করে ব্যক্তিত্বকে ক্ষুদ্র ও ইতরই করে রাখে, সার্থকতা অর্থকে আমন্ত্রণ করে না।
§ চাকরীবাজীদের বেকুব আবেগ
ক্রীতদাস-বুদ্ধি আনেই আনে,
ঐতিহ্য আর শ্রেয়নিষ্ঠায়
করেই ব্যাঘাত আঘাত দানে।
চাকরীজীবি যতই হবি খাবি খাবে ব্যক্তিত্ব,
পদলেহী হতেই হবে লোপাট হবে অস্তিত্ব।
চাকরী করে পয়সা উপায় বেশ্যাগিরিত্ ধনী হওয়া,
দূরদৃষ্টের অট্টহাসিÑ পদক্ষেপে তাকেই বওয়া।
গোলামী করে বইলে জীবন
বংশ হারায় চক্ষী-চলন।
পয়সা নিয়ে চাকরী করাইÑ বুঝো মহাদূর্ভাগ্য,
বীনা পয়সায় প্রীতিচর্য্যা এর বাড়া নাই সৌভাগ্য।
উপকারের দায় ঠেকিয়ে পয়সা যারা চায়,
অনর্থকে কুড়িয়ে এনে নষ্ট পানেই ধায়।
নাও প্রীতি-অবদান যাÑ কাউকে শোষণ করে নয়Ñবরং দক্ষ করে, আর, তাই দক্ষিণা।
প্রশ্নঃ ড.অতুলদা বললেন,চাকরী না করে উপায় কি? পয়সা পাব কোথায়? সংসার চালাব কি করে?
শ্রীশ্রীঠাকুরÑনিজের যোগ হলেই হয়। সেই যোগ যদি অক্ষুণ্ণ থাকে, প্রকৃতিই তখন যোগান দেন। আমার মনে হয়, ছয় বছর যে বসেছিলেন, সেও ভাল ছিলেন, কিন্তু জাত খোয়াইছেন ঐ ৩০০ টাকার চাকরীর কাছে আত্মসমার্পণ করে।
পাপাচারে, কদাচারে সন্ধুক্ষিত যেথা
বিধিরোষে নিঃসন্দেহে জানিও সেথায়
নিষ্ফল পুরুষকার, দৈব বলবান।
জীবনকে যা দীপ্ত করে তোলে, তৎসম্বন্ধীয় যা-কিছুকেই বলে দৈব। যে পুরুষকার সপরিবেশ আমাদের দীপ্ত করে তোলার সাধনায় ব্রতী না হয়, তা নিষ্ফল ও নিরর্থক হয়ে ওঠে। মাইনের চাকর হলে দীপ্তি ফোটে না। যা থাকে তাও মিইয়ে যায়। তাই চাকরীর মধ্যে যাওয়াই বোকামি। অসহায় শিশু মার কোলে পড়ে থাকে। ভগবান বলেন, চাটিস্ তো দুধ পাবি। পেটের মধ্যে placenta (ফুল) দুধ যোগাত। যেই বাইরে এল, করে পেতে হবে। মাইতে দুধ আছে, মার কোলে আছে, চাটলে তবে দুধ পাবে। আমার চাটাকর্ম্ম adjust করলেই পাই। মাই তো টনটন করে আমাকে দুধ দেবার জন্য, আমার চাটা চাই। পরমপিতা তোমার-আমার সবার জন্য সবই সাজিয়ে রেখেছেন দুনিয়ায়, তাঁর কোলেই আছি। একটু খুঁজে পেতে যোগাড় করে নিতে হবে। করার-ভিতর দিয়ে না পেলে, পাওয়ার সুখ থাকে না। তাই এই ব্যবস্থা। দেবার জন্যই তো ব্যগ্র তিনি। [আলো.প্র.-৬/১৯০]
প্রশ্নঃ আমার চাকরী করতে ভাল লাগে না, করতে হয় দায় ঠেকে।
শ্রীশ্রীঠাকুরÑউৎকৃষ্টে, ইষ্টে বা শ্রেষ্ঠে যদি একবার মন মজে, তখন নিকৃষ্টে মন ধরে না। বড়টা চায়, উপরের দিকে টান ধরে, তখন ও-সব ভাল লাগে না। হরির চাকর হওয়া ভাল, পয়সার চাকর হয়ে কি হবে? হরির চাকর হলে তার কিন্তু ছুটি নেই, হরির সেবায় এবং হরির যারা তাদের সেবায় দিনরাত ব্যস্ত থাকতে হয়। এই সেবা কখনও ব্যর্থ হয় না। তাই, যায় শালা চাকরী চলে যাক।
মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান একান্ত দরকার।
শ্রীশ্রীঠাকুরÑ যত ভাল মানুষের জন্ম হবে এবং তারা বৈশিষ্ট্যানুযায়ী কর্ম্ম ও সেবার মধ্য-দিয়ে যোগ্য হয়ে উঠবে ততই অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হবে। কৃষি, শিল্প সবই বাড়িয়ে তোলা লাগে। চাকরী করার বুদ্ধি যত সমাজে প্রশ্রয় পাবে, ততই কিন্তু অর্থনেতিক সমস্যা প্রবল হবে। পারিবারিক শিল্প গড়ার দিকে নজর দিতে হবে।
প্রশ্নঃ সকল ক্ষেত্রে অর্থ না হলে তো চলে না, উপায় কি?
শ্রীশ্রীঠাকুরÑযেখানে সুগঠিত সেবাপ্রাণ চরিত্র ও বিহিত করা আছে, অর্থ সেখানেই হাজির হয় হাসিমুখে। অর্থের পিছনে ছুটলে অর্থ পাওয়া যায় না। অর্থ আসে প্রয়োজনপূরণ সেবার পিছু পিছু। আমরা শ্রমকাতর। আর, আমাদের শিক্ষাটাই এমন যে আমরা আয় করার কথা ভাবতে গিয়েই চাকরীর কথা ভাবি। চাকর চাকরই। সে যত উঁচু দরের মেকদারের চাকর হোক না কেন। স্বাধীন উপার্জ্জন বুদ্ধির দিকে যতদিন আমাদের নজর না যাবে ততদিন আমাদের দৈন্য ঘুচবে না। অর্থনৈতিক দারিদ্রের মূলে থাকে চারিত্রিক দারিদ্র। এই দারিদ্র দূরীকরণে মনোযোগী হলে আর্থিক দারিদ্র আপনা থেকেই দূর হবে।
চাকরী করতে-করতে প্রত্যেকের মনে একটা বিরূপতা ভাব আসে।
শ্রীশ্রীঠাকুরÑবিরূপভাব থাকলেও চাকরী না করে পারে না। দু’চার পুরুষ চাকরী করলে কাম সারা। তখন মাথা আর খোলে না। চাকরী করা ছাড়া পথ দেখে না। ইচ্ছা থাকলেও ছাড়তে পারে না। (দূরে একটা কুকুরকে লক্ষ্য করে বলরেন) কুকুর-টুকুর যখন সম্ভ্রমের সঙ্গে লেজ নাড়ে তখন একরকম ভাবে নাড়ে। আবার যখন তৃপ্তিতে লেজ নাড়ে, তার অভিব্যক্তি অন্যরকম হয়। [আলো.প্র.১৮/২৫৮]
§ শিল্পীমাথা শিল্প ঘরে
তবেই দেশে লক্ষী ধরে।
§ সেবাবুদ্ধিই শিল্প গড়ে
শিল্পেই সব হতে পারে।
§ ঋষির ছেলে আর্য্য তোরা
গোলাম বুদ্ধি ত্বরায় ফেরা।
যে-শিক্ষা স্বাভাবিকভাবে চাকুরীকেই সর্ব্বস্ব বলে জানিয়ে দেয়,তা তোমার যোগ্যতাকে জব্দ করবেই কি করবে,সাবধান থেকো।
কারো চাকর হতে যেওনা বরং সেবক হও, আর সেবার অনুপ্রেরণা যেন অন্তঃস্থ অনুকম্পনা হয়ে ওঠে; চাকুরী কিন্তু চাকর-মনোবৃত্তিসম্পন্ন করে তোলে, ক্রীতদাস করে তোলে।
বংশানুক্রমিকতা (Heridity) যখনই, যে-কোন প্রকারেই বিকৃত ও বিধ্বস্ত হয়, বুদ্ধিবৃত্তির উদ্ভাবনী ক্ষমতা তখন হইতেই জর্জরিত ও অবসন্ন হইতে থাকে, তখনই মানুষের বাঁচিয়া থাকার প্রয়োজন গোলামিতে উপসংহৃত হয়, নজর রাখিও!
বুঝিও, তাহা করাই গোলামি যাহা করিতে গিয়া প্রাপ্যের খাতিরে তোমার আদর্শকে বিসর্জ্জন দিতে হইতেছে!
দাস-মনোবৃত্তি যাদের গর্ব্বেপ্সু করে তুলেছে, সুকেন্দ্রিক শ্রেয়ার্থ সঙ্গতি তাদের পক্ষে সুদূরপরাহত।
প্রশ্নঃ আমার ছেলে সবে লেখাপড়া শেষ করল, চাকরি করবে কিনা?
§ চাকরী আমার পছন্দ না। অগত্যা করতে পারে। ওতে brain-এর all-round unfurling hindered (মস্তিষ্কের সর্ব্বতোমুখী বিকাশ ব্যাহত) হয়, শেষে চাকরী ছাড়া পথ নেই। চাকরী চলে যাওয়াকে জীবন বের হয়ে যাওয়ার সামিল মনে করে। স্বাধীনভাবে কিছু করার অভ্যাস থাকলে, অমন করে আত্মবিশ্বাস হারায় না।
প্রশ্নঃ আর চাকরী করতে ভাল লাগে না।
শ্রীশ্রীঠাকুর: ওতে স্কুলমাষ্টারের মতো হয়, একদিক ছাড়া অন্য সবদিক die out (বিলুপ্ত) করে। কিন্তু যারা স্বাধীন ব্যবসা করে, তাদের পথ খোলা থাকে, মাথা খোলা থাকে, ability বাড়ে। চাকরী এমন বিশ্রী জিনিস যে একপুরুষ চাকরী করলেও পুরুষানুাক্রমে চাকরীর tendency আসে। কলকাতায় বি-এ পাশ রিক্সাওয়ালা দেখেছিলাম। জিজ্ঞাসা করায় বলল,‘ঠাকুরদা, বাবা, কাকা সবাই চাকরে। তাদের দশা দেখে মনে হল, অন্য যা-কিছু পারি করব, কিন্তু চাকরীর মধ্যে কিছুতেই ঢুকব না। আর কোন সুবিধা না পেয়ে শেষটা এই করছি।’ মুখে কিছু বললাম না, মনে-মনে ভাবলাম, পূর্ব্বপুরুষের চাকরীর পাপে আজ তুমি রিক্সাওয়ালা হয়েছ, যাহোক এটা তবু স্বাধীন ব্যবসায়ের অন্তর্গত, এতে তুমি উন্নতির পথ পেলেও পেতে পার।
আজকাল ইউনিভার্সিটি থেকে যারা পাশ করে বেরোচ্ছে তাদের লক্ষ্য হচ্ছে চাকরী। বাংলা আস্তে-আস্তে একটা গোলামের কারখানা হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে, মানুষ আর মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াত পারবে না। যে আন্দোলনের ফল ভোগ করে গেলেন গান্ধীজীরা, তার সৃষ্টি করল কিন্তু বাঙ্গালী। আর এখন বাঙ্গালীর নামও নেই। গোলামী করতে করতে একেবারে নিকেশ হয়ে যাওয়ার মুখে। ঐ যে কথা আছেÑ
পাপচারে কদাচারে সন্ধুক্ষিত যেথা
বিধিরোষ নিঃসন্দেহে জানিও সেথায়,
নিষ্ফল পুরুষকার, দৈব বলবান।
এই যে ইংরাজ আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেল। আমরা কিন্তু এমন কিছু করিনি যাতে স্বাধীনতা পেতে পারি। আজ দেখ চাকরদের সংখ্যা কিভাবে বেড়ে গেছে। বাংলা-বিহারের কত লোক আজ চারীজীবি। সব মিলে আস্তে-আস্তে জাতীয় চাকর গোষ্ঠী হয়ে যাবে।
ঘুষ নেওয়া মানেই, কৃতিদেবীর শিষ্ট পূজাকে অগ্রাহ্য করা, তাঁর আরাধনাকে অভিনন্দিত না করে ফাঁকিবাজির ফক্কিকারীতে নিজেকে নিবিষ্ট করে তোলা; আর, তাতে বৃদ্ধি ও ব্যাপ্তি সঙ্কীর্ণতা লাভ করে ব্যক্তিত্বকে ক্ষুদ্র ও ইতরই করে রাখে, সার্থকতা অর্থকে আমন্ত্রণ করে না।
§ চাকরীবাজীদের বেকুব আবেগ
ক্রীতদাস-বুদ্ধি আনেই আনে,
ঐতিহ্য আর শ্রেয়নিষ্ঠায়
করেই ব্যাঘাত আঘাত দানে।
চাকরীজীবি যতই হবি খাবি খাবে ব্যক্তিত্ব,
পদলেহী হতেই হবে লোপাট হবে অস্তিত্ব।
চাকরী করে পয়সা উপায় বেশ্যাগিরিত্ ধনী হওয়া,
দূরদৃষ্টের অট্টহাসিÑ পদক্ষেপে তাকেই বওয়া।
গোলামী করে বইলে জীবন
বংশ হারায় চক্ষী-চলন।
পয়সা নিয়ে চাকরী করাইÑ বুঝো মহাদূর্ভাগ্য,
বীনা পয়সায় প্রীতিচর্য্যা এর বাড়া নাই সৌভাগ্য।
উপকারের দায় ঠেকিয়ে পয়সা যারা চায়,
অনর্থকে কুড়িয়ে এনে নষ্ট পানেই ধায়।
নাও প্রীতি-অবদান যাÑ কাউকে শোষণ করে নয়Ñবরং দক্ষ করে, আর, তাই দক্ষিণা।
প্রশ্নঃ ড.অতুলদা বললেন,চাকরী না করে উপায় কি? পয়সা পাব কোথায়? সংসার চালাব কি করে?
শ্রীশ্রীঠাকুরÑনিজের যোগ হলেই হয়। সেই যোগ যদি অক্ষুণ্ণ থাকে, প্রকৃতিই তখন যোগান দেন। আমার মনে হয়, ছয় বছর যে বসেছিলেন, সেও ভাল ছিলেন, কিন্তু জাত খোয়াইছেন ঐ ৩০০ টাকার চাকরীর কাছে আত্মসমার্পণ করে।
পাপাচারে, কদাচারে সন্ধুক্ষিত যেথা
বিধিরোষে নিঃসন্দেহে জানিও সেথায়
নিষ্ফল পুরুষকার, দৈব বলবান।
জীবনকে যা দীপ্ত করে তোলে, তৎসম্বন্ধীয় যা-কিছুকেই বলে দৈব। যে পুরুষকার সপরিবেশ আমাদের দীপ্ত করে তোলার সাধনায় ব্রতী না হয়, তা নিষ্ফল ও নিরর্থক হয়ে ওঠে। মাইনের চাকর হলে দীপ্তি ফোটে না। যা থাকে তাও মিইয়ে যায়। তাই চাকরীর মধ্যে যাওয়াই বোকামি। অসহায় শিশু মার কোলে পড়ে থাকে। ভগবান বলেন, চাটিস্ তো দুধ পাবি। পেটের মধ্যে placenta (ফুল) দুধ যোগাত। যেই বাইরে এল, করে পেতে হবে। মাইতে দুধ আছে, মার কোলে আছে, চাটলে তবে দুধ পাবে। আমার চাটাকর্ম্ম adjust করলেই পাই। মাই তো টনটন করে আমাকে দুধ দেবার জন্য, আমার চাটা চাই। পরমপিতা তোমার-আমার সবার জন্য সবই সাজিয়ে রেখেছেন দুনিয়ায়, তাঁর কোলেই আছি। একটু খুঁজে পেতে যোগাড় করে নিতে হবে। করার-ভিতর দিয়ে না পেলে, পাওয়ার সুখ থাকে না। তাই এই ব্যবস্থা। দেবার জন্যই তো ব্যগ্র তিনি। [আলো.প্র.-৬/১৯০]
প্রশ্নঃ আমার চাকরী করতে ভাল লাগে না, করতে হয় দায় ঠেকে।
শ্রীশ্রীঠাকুরÑউৎকৃষ্টে, ইষ্টে বা শ্রেষ্ঠে যদি একবার মন মজে, তখন নিকৃষ্টে মন ধরে না। বড়টা চায়, উপরের দিকে টান ধরে, তখন ও-সব ভাল লাগে না। হরির চাকর হওয়া ভাল, পয়সার চাকর হয়ে কি হবে? হরির চাকর হলে তার কিন্তু ছুটি নেই, হরির সেবায় এবং হরির যারা তাদের সেবায় দিনরাত ব্যস্ত থাকতে হয়। এই সেবা কখনও ব্যর্থ হয় না। তাই, যায় শালা চাকরী চলে যাক।
মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান একান্ত দরকার।
শ্রীশ্রীঠাকুরÑ যত ভাল মানুষের জন্ম হবে এবং তারা বৈশিষ্ট্যানুযায়ী কর্ম্ম ও সেবার মধ্য-দিয়ে যোগ্য হয়ে উঠবে ততই অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হবে। কৃষি, শিল্প সবই বাড়িয়ে তোলা লাগে। চাকরী করার বুদ্ধি যত সমাজে প্রশ্রয় পাবে, ততই কিন্তু অর্থনেতিক সমস্যা প্রবল হবে। পারিবারিক শিল্প গড়ার দিকে নজর দিতে হবে।
প্রশ্নঃ সকল ক্ষেত্রে অর্থ না হলে তো চলে না, উপায় কি?
শ্রীশ্রীঠাকুরÑযেখানে সুগঠিত সেবাপ্রাণ চরিত্র ও বিহিত করা আছে, অর্থ সেখানেই হাজির হয় হাসিমুখে। অর্থের পিছনে ছুটলে অর্থ পাওয়া যায় না। অর্থ আসে প্রয়োজনপূরণ সেবার পিছু পিছু। আমরা শ্রমকাতর। আর, আমাদের শিক্ষাটাই এমন যে আমরা আয় করার কথা ভাবতে গিয়েই চাকরীর কথা ভাবি। চাকর চাকরই। সে যত উঁচু দরের মেকদারের চাকর হোক না কেন। স্বাধীন উপার্জ্জন বুদ্ধির দিকে যতদিন আমাদের নজর না যাবে ততদিন আমাদের দৈন্য ঘুচবে না। অর্থনৈতিক দারিদ্রের মূলে থাকে চারিত্রিক দারিদ্র। এই দারিদ্র দূরীকরণে মনোযোগী হলে আর্থিক দারিদ্র আপনা থেকেই দূর হবে।
চাকরী করতে-করতে প্রত্যেকের মনে একটা বিরূপতা ভাব আসে।
শ্রীশ্রীঠাকুরÑবিরূপভাব থাকলেও চাকরী না করে পারে না। দু’চার পুরুষ চাকরী করলে কাম সারা। তখন মাথা আর খোলে না। চাকরী করা ছাড়া পথ দেখে না। ইচ্ছা থাকলেও ছাড়তে পারে না। (দূরে একটা কুকুরকে লক্ষ্য করে বলরেন) কুকুর-টুকুর যখন সম্ভ্রমের সঙ্গে লেজ নাড়ে তখন একরকম ভাবে নাড়ে। আবার যখন তৃপ্তিতে লেজ নাড়ে, তার অভিব্যক্তি অন্যরকম হয়। [আলো.প্র.১৮/২৫৮]
Post a Comment