Ads (728x90)

SRI SRI THAKUR VIDEO

Like this page

Recent Posts

World time

Add as a follower to automatically get updated Article. Jaiguru!

 বড়বৌ বলছিল,‘তুমি থাকতে আমি মরি, এ আমার কখনও ইচ্ছা হয় না। কারণ, আমি জানি, আমি চলে গেলে তোমার অশেষ কষ্ট হবে।’ বড়মা মাঝে-মাঝে বলতেন,‘ তোমাদের সবাইকে দেখবার জন্য তো ঠাকুর আছেন কিন্তু তাঁকে দেখবার জন্য আমি ছাড়া আর কে আছে।’ শ্রীশ্রীঠাকুর ষ্ট্রোক করে বহুদিন ভুগছিলেন একবার, শ্রীশ্রী বড়মা তখন ৪২ দিন অন্ন গ্রহণ করেন নাই। সে কি ব্যকুলতা! আপসোস করে ঠাকুরকে বললেন,‘ মানুষের অসুখ হলে তোমার কাছে আসে। বলে, ঠাকুর! আমার মেয়ের অসুখ সেরে দাও। আমার ছেলে বেয়াড়া, আমার মনে শান্তি নেই। এই রকম সব কয়। কিন্তু আমরা আর কার কাছে যাব। ভগবান বলে যদি কিছু থাকে, তার কাছে জানাইÑতুমি সুস্থ হয়ে ওঠ।’ চন্দ্রপাণি দাসদা বড়মাকে বললেনÑঠাকুরের যে এবার কেন এমন হল, এ ব্যারামের তো কারণ বুঝি না। উত্তরে বড়মা বললেন,‘ হবে না? তোরা, আমরা তাঁকে সময়ে-অসময়ে যে-রকম ব্যথা দিচ্ছি, তিনি কেমন করে সুস্থ থাকবেন?’
 বড়বৌ-এর মত নীরব কর্ম্মী পাওয়া খুব কঠিন। ওঠে কত ভোরে, একটার পর একটা কাজে লেগেই আছে। কিন্তু কোন তড়তড়ানি নেই, হৈ-চৈ নেই। আর সব জিনিস এত গোছান ও সুশৃঙ্খল যে দেখলে অবাক হয়ে যেতে হয়। হাঁড়ি-কুঁড়িগুলো এখনও এমন সুন্দর করে সাজায়ে রাখে।  সংরক্ষণ-বুদ্ধি অসাধারণ। তার কাছে চেয়ে পাওয়া যাবে না, এমন সাধারণ সাংসারিক প্রয়োজনীয় জিনিস খুব কমই আছে। অথচ থাকে তো ঐটুকু জায়গার মধ্যে। আর জিনিসগুলি তার এমন নখদর্পণে থাকে যে কোন-কিছু চাইলে বোধ হয় চোখ বুজে তা বের করে এনে দিতে পারে।
 বড়মা ঘর ঝাঁট দেবার সময় যদি দুএকটা চাল বা ডালের দানা পেতেন তাও কুড়িয়ে আঁচলে বাঁধতেন এবং পরে পাত্রে রাখতেন। বড়মা বলতেনÑঠাকুরের সেই কথা “একটা যদি অবহেলা করি, অন্যটাও ধীরে-ধীরে অবহেলা এসে যাবে।” ‘এ তো আমাদের প্রয়োজন, সেটা অবহেলা করব কেন? একটা চাল বা একটা ডাল বলে তো কথা নয়। অপ্রয়োজনীয় জিনিসের প্রতি যদি একটুও মমতা হারাই তবে সংরক্ষণ করার বুদ্ধি কালে-কালে হারিয়ে ফেলব। সেই জন্যে প্রত্যেক নারীরই এই সংরক্ষণ-বুদ্ধি যাতে না হারায় সেজন্যে প্রয়োজনীয় বস্তুর প্রতি মমতাহীন হওয়া ভাল না।’
শ্রীশ্রীঠাকুর একদিন লবঙ্গ মুখে দিতে গিয়ে কোথায় পড়ে গেল। কৌটায় আরও বহু লবঙ্গ ছিল। কিন্তু অনেকক্ষণ খুঁজলেন ঐ লবঙ্গটা। পাওয়া গেলে ঠাকুর স্বস্তি পেলেন।
 বড়মা একটি আ্যালুমিনিয়ামের ঘটিতে জলপান করতেন। ঘটিটির যে বয়স কত? আর কত ধাক্কায় যে এবরো-থেবরো হয়ে যে তার আসল চহারা হারিয়ে ফেলেছে তা বলবার নয়। (সুশীলাবালা) হালদার মা একদিন বললেন আপনি এ ঘটিতে জল খাচ্ছেন আমার ভাল লাগছে না। বড়মা বললেনÑ‘ ওলো, জল খাওয়ার জন্যই তো ঘটি, ঘটির জন্য তো জল খাওয়া নয়, নারিকেলের মালায়ও তো জল খাওয়া যায়, আসল কথা হলো জল খাওয়াÑজল খাচ্ছি, ঘটি তো খাচ্ছি না,  যা যা ঠাকুরের কাছে যা।’ জামা, জুতার উপরও বড়মার একই দরদ।
 শ্রীশ্রীবড়মার কলারবোন ভেঙ্গে গেছে। দারুণ যন্ত্রণায় ভুগছেন তিঁনি। ডাঃ ধীরেন্দ্র কিশোর ভট্টাচার্য্য তাঁর কাছে গিয়ে রোগ-জিজ্ঞাসা করছেন, গলার আওয়াজ শুনে ঠাকুর তাঁর ঘর থেকে জিজ্ঞাসা করলেন বড়বৌ কে এসেছে রে? বড়মা বললেনÑ ধীরেন এসেছে। চিকিৎসান্তে বড়মা বললেনÑ‘ ধীরেন, তুই যখন ঠাকুর প্রণাম করতে যাবি, তখন যদি ঠাকুর জিজ্ঞাসা করেনÑ কেন এসেছিস? বলবি, বড়মাকে প্রণাম করতে এসেছিলাম। আমার হাড় ভাঙ্গার কথা বলবি না। তিনি শুনলে মনে কষ্ট পাবেন, ভীষণ চঞ্চল হয়ে উঠবেন।’ পতিতে খুশি রাখার  কি ব্যকুলতা! বড়মা বয়ঃসন্ধিকালে চকিতে বসে পা ছড়ায়ে রান্না করতেন। একদিন কড়াই নামাতে গিয়ে পা পুড়িয়ে ফেললেন। কিন্তু ঠাকুর শুনলে অস্থির হবেন তাই, বড়মা ঠাকুরকে জানালেন না।
 মানিকতলায় একটা দোতলা ভাড়া বাড়িতে কিছুদিন ঠাকুর থাকতেন। একদিন হঠাৎ ভুমিকম্প হল। আসে-পাশে বহু ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে পড়ার শব্দ শোনা গেল। ঘর বাড়ি দুলতে শুরু করল। ঠাকুর নীচতলা থেকে ভক্তমন্ডলী সহ বাহিরে বের হয়ে আসলেন চাপা পড়ার ভয়ে। তারপর দেখা গেল বড়মা আসেন নাই, তিনি দোতলায় বারান্দায় দাড়িয়ে আছেন। ঠাকুর উদ্বিগ্ন হয়ে ডাকছেন,বড়বউ তাড়াতাড়ি নেমে এস, বাড়ি ভেঙ্গে পড়তে পারে।’ বড়মা এলেন না। ভুমিকম্প থেমে গেলে বড়মাকে স্বধাপ্রিয়দা জিজ্ঞাসা করলেন, যদি ঘর ভেঙ্গে পড়ত, আপনার ভয় করিনি? বড়মা দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে বললেন,‘ আমার ঘরে ঠাকুরের ব্যবহার উপযোগী বহু জিনিস ছিলÑ ঘর ভেঙ্গে পড়লে সব নষ্ট হয়ে যেত। আমি জানি আমি ঘরে থাকলে ঠাকুর কিছুতেই ঘর ভাঙ্গতে দেবেন না, আমি নেমে গেলে ঘর ভাঙ্গতেও পারত।’
 ঠাকুর বাংলার দালানে বড়মার অপরিসর কক্ষের মধ্যে একদিন দুপুরে তিঁনি পা ফসকে পড়ে গেলেন। ঠোঁঠ কেটে গেল, নাক থেতলে গেল, কপাল ফুঁলে উঠলো। একদিকে খাটের কিনারা, অপরদিকে ছোট্ট ঘরের দেওয়াল, তার মধ্যে চাপা পড়েছেন, ভারী দেহ নিয়ে কিছুতেই ঊঠতে পারছেন না। ধীরেন ভক্তদা ছুটে গেলেন। বড়মা বললেন,‘ ওরে আমাকে শিগগির টেনে তোল। ঠাকুর যে এক্ষুনি খেতে আসছেন।’ নিজের ব্যাথা কোথায় তার?
 কোন নতুন বর-কণে বড়মাকে প্রণাম করতে গেলেই তিঁনি আর্শীবাদ করতেন,‘ লজ্জাই মেয়েদের অলঙ্কার, লজ্জা রেখে চলো।’  একদিন স্বল্প ঘোমটা পরা নববধুর ঘোমটা টেনে দিয়ে বলেছিলেন,‘ ঘোমটা দিলে বিবাহিতা মেয়েদের লক্ষীর মত দেখায়।’
 আসাম থেকে সস্ত্রীক এসেছেন প্রমথচন্দ্র ব্যাপারী। তাদের সন্তানাদি নেই। অধুণা চিকিৎসাশাস্ত্র, ঝাড়-ফুঁক, তন্ত্রমন্ত্র, কবচ, দেবোস্থানে হত্যে সব কিছু করে হতাসাগ্রস্থ হয়ে অবশেসে এসেছেন দয়াল ঠাকুরের শ্রীচরণে। দয়াল ঠাকুর তাদের দুঃখের কাহিনী সব শুনে বললেন,‘ যা, বড়বৌকে গিয়ে বল।’ বড়মার ঘরে ঢুকতেই বললেন,‘ কি রে রঘুর মা এলি নাকি?’ তার কিছুদিন পর ওদের এক পুত্র সন্তান হল। দয়ার ঠাকুর নাম রাখলেন, রঘুনন্দন। এমনি কত নিঃসন্তানকে পরমাপ্রকৃতি বড়মা আশীর্বাদ করেছেন,‘যা, এবার ছেলে কোলে নিয়ে আসবি।’ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণদেবের নিকটও কেহ সন্তান প্রর্থনা করলে তিঁিনও এমনি করে জননী সারদা মায়ের ঘর দেখিয়ে দিয়ে বলতেন,‘ঐ ঘরে এক মা বসে আছেন তাঁর কাছে যা, তাঁর ঝুলির ভিতর সব আছে।’
 দেওঘরে উৎসবে হিন্দি চন্দ্রগুপ্ত নাটক মঞ্চস্থ হবে। ছোটদা বললেন প্রসাদদাকে যাও, বড়মাকে এখানে নিয়ে এস। বড়মা এলে অভিনয় শুরু হবে। একথা বড়মাকে গিয়ে নিবেদন করলে বড়মা বললেন,‘এখনও ঠাকুরের ভোগ হয়নি আর যতক্ষণ না তার ভোগ হচ্ছে ততক্ষণ স্বয়ং যম এসে ডাকলেও আমি যাব না।’
 জঙ্গলে ঘেরা দুমকা শহরের শেষ প্রান্তে মুখার্জি পার্ক। এই পার্কের ছোট একটি বাড়িতে বড়মার থাকার ব্যবস্থা। অন্যান্য ঘরে ভক্ত-শিষ্যদের থাকবার ব্যবস্থা। সেই বাড়িটির সামনে বড় একটি তাবু খাটানো হল। দিনে অগনিত ভক্তের সাথে আলোচনা ও বাংলা এবং ইংরাজীতে বাণী দিতেন ঠাকুর। লিপিবদ্ধ করা হত সে বাণী। রাত্রে শ্রীশ্রীঠাকুর ঐ তাবুতেই ঘুমাতেন। একদিন গভীর রাতে প্রসাদদা বার্থরুমে যাওয়ার কালে ঠাকুরের তাবুর দিকে দৃষ্টি পড়তেই দেখলেনÑমাঝরাতে গভীর জঙ্গলে শীতের তীব্র ঠান্ডায় শ্রীশ্রীবড়মা ঠাকুরকে পাহারা দিচ্ছেন, নির্ভয়ে তাবু পরিক্রমা করছেন। শিষ্যদের মধ্যে এই ব্যাপারটা কেউ জানতেন না। তুলসীদাসের রামায়ণে বণিত রয়েছে শ্রীরামের বনবাস কালে মা সীতাদেবীও এমনি করে রাত্রজাগরণে রামচন্দ্রকে পাহারা দিতেন। সতী নারীর বিশ্বাস হিংস্র জন্তু, সাপ, দুষ্টলোক তাদের কেই জগতে কোন ক্ষতি করতে পারে না। কি অদ্ভূত পতিব্রত। শ্রীশ্রীঠাকুর একদিন কথাপ্রসঙ্গে দেওঘর আশ্রমে পূজনীয় কাজলদাকে বললেন,‘এই যে বড়বৌ ঘুমায় দশ মিনিট কি পনের মিনিট। আগে যখন পা ভাল ছিল, তখন রাত্রে উঠে ঘুরে-ঘুরে পাহারাও দেখত।’
 রায়গঞ্জের সুভাষপল্লী থেকে অভিভাবকসহ এক বিবাহিতা যুবতী ছুটে এসেছে দয়াল ঠাকুরের শ্রীচরণে। মেয়েটির স্বামী ছিল পুরুত্বহীন। নারী-জীবন বুঝি ব্যর্থ এমন ভাব। স্বামী পেয়েও না-পাওয়া। সমাজের নানান বেড়াজাল, রকমারী গঞ্জনার গুঞ্জন। মনের কন্দরে লুকিয়ে থাকা বেদনা ঠাকুরকে জানাল মেয়েটি। ঠাকুর সব শুনে বললেন,‘বড়বৌ-এর কাছে গিয়ে সব খুলে বলগে যা।’ শ্রীশ্রীবড়মার শ্রীচরণে সঙ্গোপনে ব্যক্ত করলো মা-টি তার ব্যাথার কাহিনী। শ্রীশ্রীবড়মা শোনার পর তার অভিভাবকদের ডাকলেন এবং দৃড়তার সাথে নির্দ্দেশ দিলেনÑ‘মেয়েটির যেন পুনরায় সৎপাত্রে পাত্রস্থ করা হয়। কিসের সমাজ! আমি আছি জানবি।’ সে কি ব্যক্তিত্বের অভিব্যক্তি, তেজোময় গাম্ভীর্য্যপূর্ণ কন্ঠস্বর! বড়মার আর্শীবাদে সুপাত্রের সঙ্গে বিবাহ হল এবং যথাসময়ে একটি পুত্রসন্তান হল।
শ্রীশ্রীবড়মাকে সৎসঙ্গী দাদারা ও মায়েরা শ্রীশ্রীলক্ষীমাতা রূপে পূজা করেন। পাবনা গাঁড়াদহ গ্রামের হেমাঙ্গিনী রায়গঞ্জ থাকত। তিনি তার ঘরে প্রতিদিন লক্ষীপূজা করতেন। পূজার সময় লক্ষীপ্রতিমার হাতে পানসুপারি দিতেন। তিনি সৎসঙ্গের দীক্ষিত। একদিন লক্ষীপ্রতিমার হাত থেকে পানসুপারী পড়ে গেলে ভাবলেন বড়মাকে গিয়ে পান সুপারি দেব। আশ্রমে এসে বড়মার হাতে পানসুপারী দিলেন। বড়মা বললেন,‘এই দ্যাখ আমি কিন্তু সুধীর দাসের দোকানের মিষ্টি খাই।’ সত্যি তো মিষ্টি দেওয়া হয়নি! বড়মাকে মিষ্টি কিনে দিলেন। পরে মা-টি জিজ্ঞাসা করলেন বড়মাকে, লক্ষীর প্রতিমার বদলে আপনার ছবি বসিয়ে পূজা করতে চাই। বড়মা বললেন,‘ করতে পারিস, তোর যা ইচ্ছে।’ একান্ত ভক্তের নিকট ধরা দিতেন তিঁনি।
 আশ্রম কর্ম্মীরা হোলির দিনে রং খেলায় মেতে উঠলো। অপরাহ্নে শৈল-মা স্নান করে ঘরে ঘিরছিলেন। কতিপয় কর্ম্মীর ঘাড়ে ভূত চাপলো শৈল-মার গায়ে রং দেবে। রং ছিটাতেই অগ্নিমূর্ত্তি হয়ে ঠাকুরের দরবারে যেয়ে নালিশ ঠুকে দিলেন। ঠাকুর শুনে তো ফায়ার! দেখছি আমি কারা করেছে এ দশা। বড়মা অবস্থা বেগতিক দেখে বললেন,‘আমি দেখছি’। বড়মা সবকটাকে ভালমত তিরস্কার করলেন। বললেন,‘এ অবেলায় এ-রকম কেঊ করে নাকি? দাঁড়া সব লাইন দিয়ে দাঁড়া। তারপর লাইন ধরে বড়মা সবাইকে আলতো করে একটি করে চড় মারলেন। কিন্তু ভাব দেখালেন খুব মেরেছেন। ঠাকুর বললেন,‘ দিয়েছো তো আচ্ছা শাসন করে?’ বড়মা বললেনÑ‘শুধু শাসন এমন মেরেছি এই দেখ হাত লাল হয়ে গেছে।’ শৈল-মা খুশি হয়ে ঘরে গেল।
 কলকাতা থেকে শ্রীশ্রীঠাকুরের জন্য নতুন গাড়ি কিনে আনা হয়েছে। শ্রীশ্রীঠাকুর বড়মাকে সাতে নিয়ে দেখে বললেন, ‘ভাল। কেমন হইছে বড়বৌ? ’ বড়মা বললেন, ‘ভাল হইছে’। শ্রীশ্রীঠাকুর বললেনÑ‘তা তুমি যেয়ে গাড়িটায় একটু পা দিয়ে আস। তুমি লক্ষী!’ শ্রীশ্রীবড়দা পাবনা ও দেওঘরে উৎসবের সময় বড়মাকে আনন্দ বাজারের রন্ধনশালা থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসতেন। তাঁর বিশ্বাস মা স্বয়ং লক্ষী, মায়ের পদচিহ্ন যদি আনন্দবাজারে পড়ে তবে আর প্রসাদ কম পড়বে না।
 শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণদেব বললেন,‘নরলীলায় অবতারকে ঠিক মানুষের মত আচরণ করতে হয়Ñতাই চিনতে পারা কঠিন। মানুষ হয়েছো ঠিক মানুষ। সেই ক্ষুধা, তৃষ্ণা,  রোগ, শোক, কখন বা ভয়, ঠিক মানুষের মত। পঞ্চভূতের ফাঁদে ব্রহ্ম পড়ে কাঁদে। আর তাঁদের লীলা প্রয়োজনেই তাঁদের সঙ্গে আসেন তাঁদের প্রকৃতিশক্তি, শ্রীশ্রীবড়মা তাঁদেরই একজন।’
 কৃষ্ণপ্রসন্নদার প্রথম পুত্র পন্ডিতদার তখন বালক বয়স। একদিন পদ্মার পাড় দিয়ে চলতে গিয়ে পাগলা কুকুরে তাড়া করল। পন্ডিত দৌড়াচ্ছে। বড়মা জল আনতে গিয়ে ঐ অবস্থা দেখতে পেয়ে বললেন,‘ পন্ডিত! দৌড়াস না, রুখে দাঁড়া, কুকুর পালিয়ে যাবে।’ পন্ডিত রুখে দাড়াতে কুকুর পলিয়ে গেল। সত্যানুসরণের প্রথম বাণীতেই পড়েছি,সর্ব্বপ্রথম আমাদের দূর্ব্বলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে, সাহসী হতে হবে, বীর হতে হবে। একদিন শ্রীশ্রীবড়মার ঘরে রাত্রে চোর ঢুকে বড়মার বালা ধরে টান দিয়েচে বড়মা এমন জোরে লাথি মারলেন! রাথি খেয়ে পড়ে ফের উঠে দৌড় মেরে ঘর থেকে পালালো।
 একবার দুজন আশ্রমিক না বলে আশ্রম ছেড়ে চলে যায়। বাহিরের জগৎ তাদের বেশী আকর্ষণ করেছিল। কিছুদিন পর বিপর্য্যস্ত হয়ে আবার দুজনেই আশ্রমে ফিরে এল। শ্রীশ্রীঠাকুর তাদেরকে বড়মার কাছে পাঠালেন,বড়মা বললেন‘এসেছো, ভাল করেছো, কিন্তু যা ছিলে তা আর রইলে না।’ ছোট্ট কথা কিন্তু কত শক্তি নিহিত রয়েছে এই কথার মধ্যে অন্তরের অন্তস্থলে গিয়ে আঘাত করে সহজে তাৎপর্য্যপূর্ণভাবে।
 শ্রীশ্রীঠাকুর দ্বন্দ্বী-বৃত্তি (Go Between) কোন মতেই ভাল বাসতেন না, শ্রীশ্রীবড়মাও সেইমত চলতেন। একবার শ্রীশ্রীঠাকুর শ্রীশ্রীবড়মার কাছে কয়েকটা টাকা রাখতে দিয়েছিলেন, সে বহুদিন আগের কথা। বহুবছর পর ঠাকুর সেইটাকাটা চাইলে বড়মা সেই টাকাটা, যেমন যেমন দিয়েছিলেন, ঠিক তেমনি এনে দিলেন ঠাকুরকে। এমনকি কোনদিন প্রয়োজনবশতঃ টাকাটা পরিবর্ত্তনও করেননি।

Post a Comment