Ads (728x90)

SRI SRI THAKUR VIDEO

Like this page

Recent Posts

World time

Add as a follower to automatically get updated Article. Jaiguru!

শ্র্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বলেছেন, “ আমি বলছি প্রচার ছাড়া হবে ন। তোমরা ক’টা মানুষের কাছে পৌঁছাতে পার, আর হাওয়া যেমন বইছে তাতে প্রচার চাই-ই কি চাই। ”
“মহাপুরুষের বাণী রোজ বের করা দরকার, মহাপুরুষের কথা যদি মানুষ জানতে না পারে, তাহলে মানুষ বাঁচবে কি করে, ঐক্যবদ্ধ হবে কি করে?”
“.... একটা কথা বলি আমার দায়টা যদি আপনাদের দায় হয়ে না দাঁড়ায় তাহলে আপনাদের স্বার্থ ও পরমার্থ দুই-ই খাবি খেতে থাকবে। ”
“......জানবেন ধর্ম, কৃষ্টি ও জীবন সম্বন্ধীয় ভ্রান্তির অপনোদনে অর্থাৎ পরমপিতার বাণী প্রচারে যারা ব্রতী হবে যারা তারা মহাভাগ্যবান।”


তাই পরম পুরুষ শ্রীকৃষ্ণের জীবনাদর্শ প্রচারে যারা ব্রতী হয়েছেন তারা মহাসৌভাগ্যবান। এ মহাপুরুষেরাই আমাদের ঐক্যের স্থান। আমি প্রচলিত ধারার বাইরে একটা অন্যদৃষ্টিতে শ্রীকৃষ্ণকে উপলব্দি করতে চাই। তাই এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।

শ্রীকৃষ্ণের জন্মরহস্যের কাহিনী আপনারা জানেন এবং এ প্রকাশনায় অনেক লেখকই হয়ত তা উল্লেখ করবেন। তাই আমি সেই অংশটি আর উল্লেখ করছিনা।

ভাগবত পুরাণে কৃষ্ণকে প্রায়শই বংশী-বাদনরত এক কিশোরের রূপে বর্ণনা করা হয়েছে।আবার ভগবদ্গীতায় তিনি এক পথপ্রদর্শক ও সহায়ক তরুণ রাজপুত্র। হিন্দু দর্শন ও ধর্মতাত্ত্বিক ঐতিহ্যে কৃষ্ণ-সংক্রান্ত উপাখ্যানগুলি বহুধা পরিব্যাপ্ত।তাঁকে কল্পনা করা হয়ে থাকে বিভিন্ন রূপে: কখনো শিশুদেবতা, কখনো রঙ্গকৌতুকপ্রিয়, কখনো আদর্শ প্রেমিক, কখনো দিব্য নায়ক, আবার কখনো বা সর্বোচ্চ ঈশ্বর।কৃষ্ণ-সংক্রান্ত উপাখ্যানগুলি মূলত লিখিত আছে মহাভারত, হরিবংশ, ভাগবত পুরাণ ও বিষ্ণু পুরাণ গ্রন্থে।
চতুর্থ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকেই বাসুদেব, বালকৃষ্ণ ও গোপাল প্রভৃতি কৃষ্ণের নানা রূপের পূজাকারী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অস্তিত্বের কথা জানা যায়। খ্রিষ্টীয় নবম শতাব্দীতেই দক্ষিণ ভারতে কৃষ্ণভক্তি আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। উত্তর ভারতে কৃষ্ণধর্ম সম্প্রদায়গুলি সুপ্রতিষ্ঠিত হয় মোটামুটি একাদশ শতাব্দী নাগাদ। দশম শতাব্দী থেকেই ভক্তি আন্দোলনের ক্রমবিস্তারের ফলে কৃষ্ণ শিল্পকলার এক মুখ্য বিষয় হয়ে ওঠেন। ওড়িশায় জগন্নাথ, মহারাষ্ট্রে বিঠোবা, রাজস্থানে শ্রীনাথজি প্রভৃতি কৃষ্ণের রূপগুলিকে কেন্দ্র করে আঞ্চলিক ভক্তিসংস্কৃতিও বিকাশলাভ করে।

সংস্কৃত কৃষ্ণ শব্দটির অর্থ কালো, ঘন বা ঘন-নীল। কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি বোঝাতে এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়। কৃষ্ণের মূর্তিগুলিতে তাঁর গায়ের রং সাধারণত কালো এবং ছবিগুলিতে নীল দেখানো হয়ে থাকে।
কৃষ্ণ নামের অর্থ-সংক্রান্ত একাধিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। মহাভারতের উদ্যোগপর্বে (৫।৭১।৪)বলা হয়েছে কৃষ্ণ শব্দটি কৃষ এবং ণ এই দুটি মূল থেকে উৎপন্ন। কৃষ শব্দের অর্থ টেনে আনা বা কর্ষণ করা; সেই সূত্রে শব্দটি ভূ (অর্থাৎ, অস্তিত্ব বা পৃথিবী) শব্দটির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ণ শব্দটিকে নিবৃত্তি শব্দের প্রতিভূ ধরা হয়। মহাভারতের উক্ত শ্লোকটি চৈতন্য চরিতামৃত ও শ্রীল প্রভুপাদের টীকায় ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে ভূ শব্দটির নিহিত অর্থ আকর্ষণীয় অস্তিত্ব; অর্থাৎ কৃষ্ণ শব্দের অর্থ সকল দিক থেকে আকর্ষণীয় ব্যক্তি। ভাগবত পুরাণের আত্মারাম স্তবে কৃষ্ণের গুণাবলি বর্ণিত হয়েছে।বল্লভ সম্প্রদায়ের ব্রহ্মসম্ভব মন্ত্রে কৃষ্ণ নামের মূল শব্দগুলিকে বস্তু, আত্মা ও দিব্য কারণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত পাপের বিনাশশক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত বলে উল্লিখিত হয়েছে।
বিষ্ণু সহস্রনামের ৫৭তম নামটি হল কৃষ্ণ, যার অর্থ, আদি শঙ্করের মতে আনন্দের অস্তিত্ব। কৃষ্ণের একাধিক নাম ও অভিধা রয়েছে। কৃষ্ণের সর্বাধিক প্রচলিত নামদুটি হল গোবিন্দ (গো-অন্বেষক) ও গোপাল (গো-রক্ষাকারী)। এই নামদুটি ব্রজে কৃষ্ণের প্রথম জীবনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। কোনো কোনো নামের আঞ্চলিক গুরুত্বও রয়েছে। যেমন, জগন্নাথ নামটি। ওড়িশায় এই নামে একটি বিশেষ মূর্তিতে পূজিত হন কৃষ্ণ।

গৈর্গ্য মুনি বাসুদেবের অনুরোধে অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে এই দুই সন্তানের নামকরণ করেন। রোহিনীর সন্তানের নাম রাখা হয় রাম এবং দেবকীর সন্তানের নাম রাখা হয় কৃষ্ণ। পরবর্তীতে রাম তার অসীম শক্তি অর্জনের জন্যই বলরাম নামে পরিচিত হন।

অল্প বয়সে বুদ্ধিমত্ত্বা
 কংস বধের পরেই বলরাম ও শ্রীকৃষ্ণকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় অবন্তি নগরে গুরু সন্দীপনীর আশ্রমে। সেখানে মাত্র ৬৪ দিন সময়কালের মধ্যে তিনি ১৪ ধরণের বিদ্যা ও ৬৪ ধরণের কলা শিখেছিলেন। সাধারণত এ ধরণের একটি বিদ্যা শিখতেই একজনের দুই থেকে আড়াই বছর সময় লাগত।

অসাধারণ ব্যক্তিত্ববোধ
 তিনি তাঁর চেয়ে বয়সে বড় অনেকের সাথেই খুবই আন্তরিকভাবে মিশতেন। খুবই অল্প বয়সে, তিনি গোয়ালাদের মথুরা যেতে আপত্তি করেন কারণ, শয়তান কংসের নিকট দুধ বিক্রির মাধ্যমে টাকা আয় করতেন তিনি চাননি। সেই থেকেই বয়স্করাও তার উপদেশ মানতে শুরু করেন এবং তিনি তাদের বিশ্বাসের মর্যাদা রেখেছিলেন।

শ্রীকৃষ্ণকে বন্দি করার জন্য অত্যাচারী জরাসন্ধের সেনারা ১৮ বার মথুরা ঘেরাও করেন। আমার মনে হয় না পৃথিবীতে এ কান্ড আর ঘটেছে।
আদর্শ পারিবারিক ও সামাজিক জীবন

আদর্শ সন্তান: শ্রীকৃষ্ণ এমনতর আচরণ করতেন যাতে সর্বদায় পিতা বাসুদেব ও মাতা দেবকী এবং তাঁর অভিভাবক নন্দ ও যশোদা সন্তুষ্ট থাকেন। তাদের সামান্যতম কষ্ট নিবারনেও তার উদ্ভিগ্নতা লক্ষ্য করা যায়।

আদর্শ ভাই: কৃষ্ণ সর্বদায় বড়ভাই বলরামকে শ্রদ্ধা করতেন। ভাইয়ের প্রতি একজন মানুষের কেমনতর আচরণ হওয়া উচিত তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ পরমপুরুষ শ্রীকৃষ্ণ।

আদর্শ স্বামী: যখন একজন স্ত্রীকে সন্তুষ্ট রাখাই কষ্টসাধ্য, সেখানে কৃষ্ণ তাঁর ১৬০০৮ স্ত্রীকে সন্তুষ্ট রেখেছিরেন। নারদ তাদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টির যে চেষ্টা করেছিলেন তাও সম্ভব হয়নি।

আদর্শ পিতা: যেহেতু তার সন্তানেরা অসত্য ও অসৎপথে পরিচালিত হয়। তিনি নিজেই নল-খাগড়ার  যুদ্ধে তাদের ত্যাগ করেন চিরতরে।

কলা প্রিয় একজন
  শ্রীকৃষ্ণ নৃত্য ও গীত এসব কলা খুবই পঠন্দ করতেন তাই নয়, তিনি নিজে এসব বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন। তাঁর বাশির সুর আর রাস নৃত্যের কাহিনী প্রসিদ্ধ। তিনি যখন বাশি বাজাতেন মানুষতো বটে, এমনকি পশু-পাখি পর্যন্ত মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যেত।

                                            সামাজিক প্রেক্ষাপটে

অন্যায়ের প্রতিবাদী: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, অন্যায় যে করে,/ আর অন্যায় যে সহে,/ তব ঘৃণা যেন তারে / তৃণসম দহে। শ্রীকৃষ্ণ শৈশব থেকে কখনোই কোন অন্যায়কে প্রশয় দেননি। বরংচ প্রবল প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কংস, জরাসন্ধ ও কৌরবদের মত ধূর্ত ও অত্যাচারীদের বিপক্ষে তিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়েছেন।

সামাজিক দায়িত্ব পালনে সচেতনতা: যখন তিনি নারকাসুরের কারাগার থেকে ১৬০০০ রাজকন্যাদের মুক্ত করেন, তখন এইসব মহিলাদের কোন সামাজিক অবস্থান ছিল না। এমনকি সমাজে মুখ দেখানোর কোন অবস্থায় ছিল না!  তারা তখন সমাজের কাছে অপাক্তেয় ছিল। এ ব্যাপক সংখ্যক নারীদের সামাজিক মর্যদাহীনতা সমাজে বিরূপ অবস্থার সৃষ্টি করত। শ্রীকৃষ্ণ এই ১৬০০০ নারীকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহন করেন, তাদের সামাজিক মর্যাদা ফিরিয়ে দেন এবং পৃথিবীর ইতিহাসে সামাজিক ও মানবিক দায়বদ্ধতার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। কিন্তু ইদানিং অনেকেই এ বিষয় নিয়ে হাস্যÑরসাত্মক গল্প করেন। এ রকম মহামানবকে নিয়ে এ ধরণের তামাশা যারা করে এবং যেসব নব্য কৃষ্ণ প্রেমিকদের ভূল প্রচারের কারণে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তাদের ধিক, শতধিক।

পরকল্যাণে আত্মোৎসর্গী : কিছু কিছু লোক পরম পুরুষ শ্রীকৃষ্ণের বিভিন্ন আচরণের সমালোচনা করেন। এগুলো তাদের মূর্খতা ও নষ্ট চিন্তার বহি:প্রকাশ মাত্র। বরংচ তিনি সারা জীবনে যা’ই করেছেন, তা অন্যের কল্যাণের জন্য। ইতিহাসের পাতায় আমরা দেখতে পায় তিনি বিভিন্ন সময়ই অনেক প্রথা ও নিয়ম ভেঙেছেন। যেমন তিনি সুভদ্রাকে অপহরন করার সময় জরাসন্ধকে বধ করেন, যাতে অর্জুন সুভদ্রাকে বিয়ে করতে পারে, ১৬০০০ নারীকে বিয়ে করা ইত্যাদি। কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের সময়, তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তিনি স্বহস্তে অস্ত্র ধারণ করবেন না। কিন্তু ভীষ্মাচার্য্য প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তিনি শ্রীকৃষ্ণকে অস্ত্র ধারণ করাবেনই। শ্রীকৃষ্ণ এমনতর পরিস্থিতিতে তার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেছিলেন এবং অস্ত্র ধারণ (চাকা) করে ভীষ্মাচার্য্যকে আক্রমণ করেছিলেন।

সমাজের কল্যান কাজে অন্যদেরকে পরিচালিত করা:  সামাজিক নিরাপত্তা তথা সমাজের সুরক্ষাই ছিল তাঁর মূখ্য উদ্দেশ্য। তিনি অনুধাবন করেছিলেন, সমাজের সমস্যা সৃষ্টিকারী ও অসৎলোকদের চিরতরে দূর করার জন্য এটা অতীব প্রয়োজনীয়। শুধুমাত্র সত্য ও শুদ্ধতা নিয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকলে কখনই  দুষ্টকে দমন করা যাবে না। মানব ইতিহাসের এই দূর্ভাগ্যজনক সত্যটুকু উপলব্দি করে, তাদেরকে জাগতিক বিষয়গুলোর সাথে পরিচিত হতে হবে। যদি তা না হয়, এই আইনের বালাইহীন বিশ্বে, নিষ্ঠুর অসুরেরা রাজত্ব করত এবং সামাজিক নীতি পাল্টে যেত এবং মূল লক্ষ্যই ব্যহত হত। এটাই ছিল বুদ্ধিমত্ত্বার সহিত পরম পুরুষের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। এটা এ কারণে যে, অনেক সময় “ সত্যের চেয়ে আপাত মিথ্যাকে অনেক উত্তম বলে মনে হয়” এবং “একজনকে ধর্মের বা সত্যের পথ ছেড়ে আপাত দৃষ্টিতে উল্টো পথে যেতে হয়”। “ভীমসেন সফল হতেন না, যদি তিনি সৎপথে লড়াই করতেন। তাঁর ঐভাবে লড়াই করারই প্রয়োজন ছিল”, এগুলো প্রায়ই তিনি (শ্রীকৃষ্ণ ) বলতেন।
রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ খেকে
একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ:
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ এড়ানোর জন্য শ্রীকৃষ্ণ (যিনি নিজেও দ্বারকা রাজ্যের শাসক ছিলেন)একজন মধ্যস্থতাকারী ও কুটনৈতিক হিসাবে বিনীতভাবে চেষ্টা করেছিলেন, যাতে শান্তি ফিরিয়ে আনা যায়। শেষমুহুর্ত্বেও পান্ডব ও কৌরবদের মধ্যে যাতে দ্বন্ধের একটি সমাধান আসে, সেজন্য যে অক্লান্ত পরিশ্রম, কৌশলী উদ্যোগ ও ভূমিকা নিয়েছিলেন, তা মহাভারতের প্রতিটি পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ আছে। 

মহাভারতে আমরা শ্রীকৃষ্ণকে দেখতে পায় একজন সেবামূখর নেতা হিসেবে। পাশ্চাত্য পন্ডিতেরা যাকে বলেন servant-leade । তিনি রাজক্ষমতা প্রয়োগ না করার  (যদিও তা শ্রীকৃষ্ণের প্রচুর ছিল) পরিবর্তে দুইপক্ষের কথা শুনে, তাদের মর্মব্যাথা উপলব্দি করে,  শান্তির পথে তাদের ঐক্যমত সৃষ্টি করতে,  এবং অতীতের ভূল কাজের জন্য সমবেদনা ও শান্তনা  দিয়ে ( যেসব কারণে তাদের শান্তি আলোচনা ভেঙ্গে যেতে পারে) শ্রান্তির দূত হতে চেয়েছিলেন। যদিও তিনি জানতেন, কৌরবরা এতটাই দুষ্ট প্রকৃতির ছিল যে, বিনা শক্তি প্রয়োগে তারা কিছুই ছাড়বে না। তা স্বত্ত্বেও শ্রীকৃষ্ণ কৌরবদের সাথে সাক্ষাত করতে গিয়েছিলেন, যাতে পান্ডবদের অন্তত: কিছু ন্যায়সঙ্গত অধিকারের বিষয়ে ঐক্যমত্যে পৌছানো যায়।servant-leader  এর নেতৃত্বের গুনাবলী নিরূপণে রাষ্ট্র বিজ্ঞানী Greenleaf   যে প্রধান ১০টি বিষয়ের কথা বলেছেন, সেগুলো হলো listening, empathy, healing, awareness, persuasion, conceptualization, foresight, stewardship, commitment to growth of people, ও building community  । এসব গুণাবলী শ্রীকৃষ্ণের পূর্ণমাত্রায় ছিল।

একজন অসাধারণ বক্তা:   শ্রীকৃষ্ণ খুবই দক্ষতা, কেীশলী প্রকাশ ও বুদ্ধিমত্তার সহিত কৌরবদের রাজকীয় দরবার সভায় পান্ডবদের বিষয় উপস্থাপন করেছিলেন। এই ঘটনা এবং প্রাপ্তি বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। তাঁর অসাধারণ বাগ্মিতার মাধ্যমে তিনি পান্ডব শিবিরের সবার মন জয় করেছিলেন এবং লড়াইয়ের শেষ পর্যন্ত তাদের উজ্জীবিত রাখতে সমর্থ হয়েছিলেন।

একজন দক্ষ কুটনীতিবিদ:    কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ এড়ানোর জন্য শ্রীকৃষ্ণ (যিনি নিজেও দ্বারকা রাজ্যের শাসক ছিলেন) একজন মধ্যস্থতাকারী ও কুটনৈতিক হিসাবে বিনীতভাবে চেষ্টা করেছিলেন, যাতে শান্তি ফিরিয়ে আনা যায়। শেষমুহুর্ত্বেও পান্ডব ও কৌরবদের মধ্যে যাতে দ্বন্ধের একটি সমাধান আসে, সেজন্য যে অক্লান্ত পরিশ্রম, কৌশলী উদ্যোগ ও ভূমিকা নিয়েছিলেন, তা মহাভারতের প্রতিটি পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ আছে। 

একজন সত্যিকারের মনোবিজ্ঞানী:   কুরুক্ষেত্রের ধর্মযুদ্ধের একজন বিশিষ্ট যোদ্ধা কর্ণ। শ্রীকৃষ্ণ সঠিক ও উপযুক্ত সময়, প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতিতে কর্ণকে তার জন্মরহস্য প্রকাশ করেন। এর ফলে এই শক্তিমান ও কৌশলী যোদ্ধা মানসিকভাবে আত্মনিয়ন্ত্রণ হারান ও তার মনোবল অনেকখানিই ভেঙ্গে পড়ে।

যুদ্ধের বিবেচনায়
লড়াইয়ের একজন বিশেষজ্ঞ:
একজন দক্ষ তীরন্ধাজ: অর্জুনের মত, শ্রীকৃষ্ণ তার ধনুক থেকে তীর ছুড়ে ঘূর্ণায়মান মাছের চোখে আঘাত করতে সমর্থ হয়েছিলেন এবং এর মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর রানী লক্ষনাকে জয় করেন।  
একজন দক্ষ গদা যোদ্ধা: শ্রীকৃষ্ণ বক্রদন্তকে গদা দিয়ে লড়াইয়ে খুবই কৌশলীভাবে হত্যা করেন।
একজন দক্ষ মল্লবীর: শ্রীকৃষ্ণ চান্নুরকে মুষ্টিযুদ্ধে হত্যা করেন।

সাহসী ও নির্ভীক: শ্রীকৃষ্ণ অনেক অত্যাচারী রাজন্যবর্গ ও অসুরকে দমন করেছেন, যারা মিথ্যা ক্ষমতার দাপটে ধরাকে সরা জ্ঞান করেছিল। যারা আসুরিক শক্তির দাপটে ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্যই সমাজ থেকে মুছে দিয়েছিল।

একজন দক্ষ সারথী: কুরুক্ষেত্রের অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের যুদ্ধে খুবই দক্ষতার সাথে যেমন অর্জুনের রথ পরিচালনা করেছেন, তেমনি একজন জীবন সারথী হিসেবে তিনি অর্জূনকে মহামূল্যবান দিক-নিদেশনা প্রদান করেছিলেন। 



নিস্বার্থ:  শ্রীকৃষ্ণ কংস ও আরো অনেক রাজাকে পরাজিত ও হত্যা করেন এবং প্রতিষ্ঠা করেন স্বর্ণরাজ্য দ্বারকা কিন্তু তা স্বত্ত্বেও তিনি রাজসিংহাসন বা মুকুট ধারণ করেননি। যদিও নি:সন্দেহে তিনিই ছিলেন সেই সময়কার সাধারণ মানুষদের মুকুটহীন সম্রাট।

বিনয়ী: পান্ডব কতৃক আয়োজিত রাজসূয়া যজ্ঞের সময়, শ্রীকৃষ্ণ ব্রাহ্মনদের নিজহাতে পা ধুয়ে দিয়েছিলেন এবং অতিথিদের এ্যাঁটো খাবার বাসনগুলোও পরিষ্কার করেছিলেন।

 দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে
শ্রীকৃষ্ণ যে অমৃত দর্শন প্রচার করেছেন তাই ‘গীতা’। তাঁর এই দর্শনে তিনি আসক্তি ও অনাসক্তির মধ্যকার উপযুক্ত মেলবন্ধন দেখিয়েছেন। তিনি বেদ অনুসারে কর্মযোগের সমর্থন দিয়েছেন, জ্ঞানযোগকে সমর্থন দিয়েছেন সাংখ্য দর্শন অনুসারে। অবচেতন মনের ঝোঁকগুলোর উপর আত্মনিয়ন্ত্রেনের মত দিয়েছেন যোগের পথানুসারে এবং সন্ন্যাসকে সমর্থন দিয়েছেন বেদান্ত অনুসারে। কিন্তু এসব প্রত্যেকটি বিষয়ই এককভাবে চূড়ান্ত  যে প্রস্তাবনা এসব শাস্ত্রে আছে, তা তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি প্রত্যেকটি বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোর সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে উপযুক্ত সাম্যতা প্রদান করেছেন এবং নিষ্কাম তথা ফল প্রত্যাশাবিহীন কর্মের উপর ভিত্তি করে তিনি এক নতুন নীতির প্রবর্তন করেন। ভাগবত গীতায়, তিনি মূলত: একজন ব্যক্তি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে দায়িত্বগুলো কিভাবে পালন করা উচিত তাই প্রচার করেছেন। প্রাচীন ঋষিরা একজন ব্যক্তির কি দায়িত্ব তা নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ কিভাবে সেই দায়িত্বগুলো ভালভাবে পালন করতে হবে, তা প্রাঞ্জল ব্যাখ্যা দিয়েছেন বা করেছেন। ভাগবত গীতায়, তিনি অর্জুনকে কিভাবে আসক্তিকে অনাসক্তিতে রুপান্তরিত করা যায় এবং কিভাবে একজন ব্যক্তিকে তার সামগ্রিক দায়বদ্বতা পালন করা উচিত তা বিবৃত করেছেন। 

গুরু হিসেবে
শ্রীকৃষ্ণ মৌখিকভাবে গীতার বানীগুলো বিবৃত ও ব্যাখ্যা করার মাধ্যমে অর্জুনের বিভ্রান্তি দূর করেছিলেন এবং যে আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা তাকে প্রদান করেছিলেন তা বর্ণনাতীত। যা মানব ইতিহাসে মানবজীবন সূচারুভাবে পরিচালনা করার প্রামান্য দলিল। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি জ্ঞানমুদ্রা ধারণ করেছিলেন।  

পরবর্তী উদাহরণগলো উপরোক্ত সকল গুণাবলীর প্রভাব অন্যদের কেমন আলোড়িত করেছিল, তা পরিষ্কার করবে।
    কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে,  কেউই শ্রীকৃষ্ণকে আঘাত করতে চাইনি বা ভাবেওনি। যদিও অন্য রথ সারথীরা কিন্তু আক্রান্ত হয়েছিল।
    যুদ্ধের পরে, সেখানে মৃত্যু সম্পর্কে ভালচার  ও শিয়ালের আলাপচারিতা ছিল। তার মধ্যে, তারা সকলের ত্র“টি নিয়ে আলোচনা করেছিল, এমনকি যুধিষ্ঠিরের দোষ-ত্র“টি নিয়ে আলোচনা ছিল। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের বিষয়ে একটি শব্দও লক্ষ্য করা যায়নি।


আজ এ অস্থির সময়ে এসে আমরা শ্রীকৃষ্ণকে যে রুপে দেখছি তা সত্যিই দূর্ভাগ্যজনক। আজ বিকৃত ইতিহাস আর বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে পরম পুরুষ শ্রীকৃষ্ণকে সাধারণের কাছে তুলে ধরা হয়েছে ভিন্নভাবে। গত কয়েক মাস আগে স্টার জলসা নামক এক টিভি চ্যানেলে এক নব্য কৃষ্ণ প্রেমিকের তার পিতা-মাতার প্রতি যে অবহেলার চিত্র দেখেছি তা সত্যিই আশংকার কথা। শ্রীকৃষ্ণ একাধারে আদর্শ পুত্র, ভাই, স্বামী ও পিতা ছিলেন। কারো দায়িত্ব তিনি অবহেলা করেননি। কিন্তু আজ নব্য কৃষ্ণ প্রেমিকরা সনাতনী আর্য সমাজে এ কি তথ্য সন্ত্রাস চালাচ্ছে! আমাদের কোমলমতি আগামীরা কি এই সত্য নিয়ে বড় হবে? অসত্যের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হলো সত্য।আর তথ্য সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবাধ সঠিক তথ্যের যোগানই পারে এ অপরাধকে রুখতে। আসুন আমরা পরম পুরুষ শ্রীকৃষ্ণের সত্যিকার জীবনাদর্শ জেনে যোগ্য মানুষ হয়ে উঠি। এই সবার কাছে আমার আকুল প্রার্থনা।


লেখক: বৃন্দদ্যূতি চৌধুরী , পরিচালক, শ্রেয় অন্বেষা (শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রে’র জীবন ও কর্ম ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান)


Post a Comment