Ads (728x90)

SRI SRI THAKUR VIDEO

Like this page

Recent Posts

World time

Add as a follower to automatically get updated Article. Jaiguru!




শারদীয় দূর্গাপূজা আমাদের অন্তরে এমন একটা স্থান অধিকার করে নিয়েছে, যার ফলে এ পূজার নেপথ্য কাহিনী আজ কারো অজানা নয়। কিন্তু আমাদের জন্য এ পূজার একটি বিজ্ঞানভিত্তিক বার্তা আছে, যাতে আমরা ঝামেলাহীন, সুখী জীবনযাপন উপভোগ করতে পারি । যেখানে থাকবেনা কোন ধরনের communalism, separatism ও Non-cooperation। যে জ্ঞান আমরা পাই সপ্তশতী থেকে তাই নিম্নে বিবৃত করলাম।

অসুরদের রাজা মহিষাসুর স্বর্গ আক্রমন করেছিলেন। দেবরাজ ইন্দ্রের সাথে তার তীব্র লড়ায় চলতে লাগল এবং পরিশেষে স্বর্গের সিংহাসনচ্যুত করলেন। ইন্দ্রসহ সকল দেবতারা ছুটে গেলেন সবচেয়ে প্রাজ্ঞ্য ও জ্ঞানী,  সৃষ্টির অধিপতি ব্রহ্মার নিকট। তারা তাঁর নিকট প্রার্থনা জানালেন কেন তারা এ যুদ্ধে হারলেন তা জানতে। সাথে অসুররাজ মহিষাসুরকে কিভাবে দমন করা যায় তার পথ বাতলে দিতে অনুরোধ জানাল। ব্রহ্মার পাশেই ছিলেন প্রলয়ের অধিপতি শিব এবং পালনের অধিপতি বিষ্ণু, তারা দেবগনের এ দূরাবস্থায় কথা জানতে পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন। সকলের রাগের সম্মিলিত রূপ দেবী দূর্গা। সব দেবতারা তাদের অস্ত্র দেবীকে দান করলেন এবং অসুররাজকে দমনের জন্য প্রার্থনা জানালেন।

মহিষাসুরের সাথে দেবী দূর্গার তুমুল লড়ায় হল এবং যেখানে তার প্রাথমিক ছদ্মরূপ ছিল মহিষ। কিন্তু দেবীর উপর্যপুরি হামলায় ঠিকতে না পেরে অসুররাজ তার স্বরুপে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিল। স্বরুপে ফিরে আসা মাত্রই দেবী ত্রিশূল তার বুকে গেঁথে দিয়ে তাকে হত্যা করলেন।

এরূপেই দেবী অসুরমর্দিনী হিসেবে পূজিত হন, যেখানে সিংহের পিঠে অধিষ্ঠিতা দেবী ত্রিশুল দিয়ে হত্যা করছেন মহিষরূপ থেকে স্বমূর্তিতে ফেরা অসুরকে। দেবীর সাথে আরো পূজিত হন গনপতি (গনেশ), কার্তিক, দেবী লক্ষ্মী ও স্বরসতী।

এই পৌরানিক কাহিনীর গুপ্ত তাৎপর্য্য এবং দেবী দূর্গার সাথে আরো চারজন দেব-দেবতার পূজার কারণ সত্যিকার অর্থেই সাধারণ লোকেরা জানে না বা অনুধাবণ করতে পারে না। এর ফলে, কি পূজার্থী কি সমাজ কি রাষ্ট্র কেউই এই পূজা ও পূজার আচার থেকে লাভবান হতে পারছেনা।
এই আচারগুলো দাড়িয়ে আছে সাধারণ মানুষের মনের মধ্যকার বিচ্ছিন্নবাদীতা, সহযোগী মনোভাবকে এক সুতায় গেঁথে দেশ ও জাতির এক্যকে সুসমন্নিত করার মানসে। একে অপরকে ভালবাসার পথে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করতে।

পরাজিত হয়ে দেবতারা যখন ব্রহ্মার নিকট গিয়েছিল, তখন ব্রহ্মা তাদের বলেছিল, তোমাদের নিজেদের মধ্যে অনৈক্যই তোমাদের পরাজয়ের কারণ।
অনেক দেবতারা ও তাদের অধিভুক্তরা যেমন যুদ্ধে অংশগ্রহন করেনি,তেমনি অনেকে এ যুদ্ধ সম্বন্ধে অবগতও ছিলনা। অন্যদিকে, অসুর সাম্রাজ্যের সকল গোষ্ঠীভুক্তরা যেমন:শুম্ভ, নিশুম্ভ, রক্তবীর্য্য, চন্ডা, মুন্ডা এবং ধুমরালোচনসহ সকল অসুর সেনারা মহিষাসুরকে সাহায্য করে। যতক্ষন পর্যন্ত কোন রাজ্যে সত্যিকারের একতা ও সহযোগীতার মনোভাব গড়ে উঠবেনা, ততদিন কোন রাজাই  যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারবেনা। সর্বশেষ যুদ্ধে বৈষ্ণব স¤প্র্রদায়ের (বিষ্ণু শক্তি) ব্যবহার করা হয়নি, যারা কিনা চক্রের যুদ্ধে পারদর্শী। শৈব স¤প্রদায় (শিব শক্তি) শূল, ত্রিশূল ব্যবহারে বিশেষজ্ঞ। সেই শক্তিও অব্যবহৃত ছিল। শাক্ত স¤প্রদায় খড়গ যুদ্ধে, গানপত্যরা পাশা ও অংকুশা, স্বরসতী যুদ্ধের সংগীত নিয়ে অংশগ্রহন করেনি। সূতরাং যদি সকল দেবতারা একত্র হতে পারে, নি:সন্দেহে তারা যুদ্ধে জয় লাভ করবে।

ব্রহ্মা এমনভাবেই অসুর নিধনের রহস্য উন্মোচন করেছিলেন। দেবরাজ ইন্দ্রের সৈন্যরা মূলত: তাদের তড়িৎবাহিত অস্ত্র ‘বজ্র’ এর উপর নির্ভর করেছিল। যা অসুরদের শরীরে কোন আঘাত করতে পারেনি, কারণ অসুররা তাদের শরীর মহিষের চামড়া দিয়ে তৈরি এক বিশেষ ধরণের পোশাকে আবৃত করে রেখেছিল। মহিষের ঘন কালো লোম তড়িৎ কুপরিবাহী হিসেবে কাজ করেছে, তাই বজ্র সেই শরীরে কোন ক্ষতিই করতে অসমর্থ ছিল।  যদি স্বর্গের ভিন্ন সকল শক্তি অস্ত্র নিয়ে একত্র হয়ে লড়াই করত, যেমন: চক্র, খড়গ,অংকুশা, ত্রিশূল। তাহলে এই অস্ত্রগুলো সহজেই অসুররা শরীরে চামড়ার যে বর্ম পড়া ছিল তা নষ্ট করে দিতে পারত। এর ফলে অসুররা তাদের বর্ম ছেড়ে স্বাভাবিকরুপে যুদ্ধে আসতে বাধ্য হত।
তখন বজ্রই হত সর্বশ্রেষ্ঠ অস্ত্র যা চোখের পলকেই কাজ করত।

জযী হওয়ার এমন মূলমন্ত্র লাভ করে দেবতারা উজ্জীবিত হয়ে উঠে এবং সমস্বরে ধ্বনি দিতে থাকে। এই মিলিত স্বরেই সকল শক্তি একত্রিত হয়ে সৃষ্টি হয় দূর্গা, যে শক্তি সহজেই শয়তানের অনেক দূর্গ মুহুর্ত্বেই ধ্বংস করে দিতে পারে।

বিষ্ণু, শিব, গনপতি, সুর্য, কুবের, বায়ু, অগ্নিসহ সকল দেবতার  শক্তি ও তাদের অস্ত্র চক্র, শূল, ত্রিশূল, পাশা, অংকুশা, রশ্মি জালা, অগ্নিসারা একত্রিত হয়, সাথে প্রশিক্ষিত প্রানী  সিংহ, হাতি, ঘোড়া ও সাপ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়েছিল। গনপতি যিনি সাধারন জনগনের নেতা সকলের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করলেন এবং তাদেরকে যুদ্ধের বিষয়ে জ্ঞান দান করলেন। তারূন্যের বিজয়ী শক্তি কার্তিক হলেন প্রধান সেনাপতি। লক্ষ্মী অর্থ যোগান দিলেন এবং স্বরসতী বীণার তারে সংগীতের মাধ্যমে সৈন্যদের হৃদয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করলেন, উদ্দীপিত করলেন।  যুদ্ধ আবার শুরু হল এবং উভয় পক্ষই তুমুল লড়াই করল। স্বর্গীয় সকল অস্ত্রের ব্যবহারে অসুরদের চামড়ার বর্ম ছিন্ন-ভিন্ন ও নষ্ট হয়ে গেল। অসুরদের তাদের নষ্ট বর্ম ছুড়ে ফেলতে হল এবং স্বরূপে যুদ্ধ করতে হল। ফলে তড়িৎ কুপরিবাহী বর্মের অনুপস্থিতিতে বজ্রের আঘাতে তাদেরকে সহজেই ঘায়েল করা গেল। মহিষাসুর অসুরদের যে মিলিত শক্তিতে বলীয়ান ছিল,তা পরিশেষে দেবগনের একতা ও সহযোগী শক্তি দেবী দূর্গার নিকট পরাজিত ও ধ্বংস হল।

এই প্রবল আসুরিক শক্তি ধ্বংসের পর দেবরাজ ইন্দ্র তার হারানো সিংহাসন ফিরে পেল এবং দেবতারা তাদের অসীম সাধনার স্থানে ফেরত আসল। তারা মিলিত হয়ে দেবী দূর্গার নিকট প্রার্থনা জানাল যেন তিনি সদাই তাদের সাথে থাকেন এবং সকল বিপদ থেকে রক্ষা করেন। 

বর্তমান সভ্য মানব সমাজে দূর্গাপূজার উপরোক্ত অর্ন্তনিহিত সত্য তুলে ধরা অতীব প্রয়োজনীয়।  এটাই একমাত্র পথ যা একটি জাতিকে সফলতার চরম শিখড়ে পৌছাতে পারে। একতা, একতা, একতা এটিই জাতির কল্যান ও মুক্তির মূলমন্ত্র। আমাদের আর্য্য হিন্দু সমাজের বর্তমান পরিস্থিতির কারণও নিশ্চয় আমরা বুঝতে পারছি। উপরে বর্ণিত  দূর্গাপূজার বার্তা সুরে সুরে লিপিবদ্ধ করা উচিত এবং পূজার সময়ে বার বার বাজানো উচিত।

আধুনিক চলচ্ছিত্র ও অ্যালবামের গান না বাজিয়ে, দূর্গা পূজার সুখময় সময় উদ্যাপনের সময়টাই সেই পরম সত্যই গানে বাজানো উচিত, নাটকরূপে মঞ্চায়নে ও  নৃত্যরূপে উপস্থাপন করা উচিত। যাতে সাধারণ মানুষ দূর্গাপূজার মাহাত্ম্য ও পূজার সত্যিকার দর্শন অনুধাবন করতে পারে। তবেই দেবীদূর্গার দূর্গতিনাশিনী নাম ও পূজার সার্থকতা।

লেখক: পরিচালক, শ্রেয় অন্বেষা



Post a Comment