Ads (728x90)

SRI SRI THAKUR VIDEO

Like this page

Recent Posts

World time

Add as a follower to automatically get updated Article. Jaiguru!

হিংসায় মত্ত পৃথ্বী, এ কথায় বলেছেন দ্রোহের কবি নজরুল। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা মানব মুখোশের পিছনে অসুর প্রকৃতির উপস্থিতি লক্ষ্য করছি। আজকালকার দৈনিক পত্রিকা, টিভি নিউজ বা অনলাইন নিউজে চোখ বুলালেই যেই জিনিসটা আমাদের মনে দাগ কাটে, ক্রমবর্ধমানহারে মানুষের হাতেই প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। একসময় বন্য জন্তুদের হিংস থাবার থেকে বাঁচার জন্য মানুষ হয়েছিল সমাজবদ্ধ। কিন্তু হায়! সময়ের কি নির্মম পরিহাস, এখন এই সমাজবদ্ধ মানুষ একে অন্যকে হিংস্র বন্য জন্তুর চেয়েও বেশী ভয় পায়। সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে মানুষ দিন দিন অধিকতর হিংস্র হয়ে উঠছে। যা অন্য ভয়ংকর জন্তুদেরও ভয় পাইয়ে দিতে শুরু করেছে। স¤প্রতি জাতিসংঘ কতৃক প্রকাশিত রিপোর্টে মানবাধিকার লংঘনের যে ভয়ংকর চিত্র ফুটে উঠেছে, তাতে নিশ্চয় কেউই আমার সাথে দ্বি-মত পোষণ করবেন না। কিন্তু এ রকম কেন হচ্ছে তা কি আমরা জানতে চেষ্টা করছি বা করেছি। বিভিন্ন দেশে, এমনকি আন্ত:রাষ্ট্রীয় সম্মেলন হচ্ছে, কিন্তু বিষয়ের মূল কারণে কেউ কি পৌঁছাতে পারছে? এত গোলটেবিল বৈঠক, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম এর মধ্য দিয়ে কোন পথ কি আমরা পেয়েছি, যাতে আমরা এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি?


আসুন দেখি, ভারতীয় দর্শন কি নিদের্শনা দিয়েছে। ভারতীয় দর্শনে একটি বড় ক্ষেত্র মহাভারত। মহাভারতে আমরা ধৃতরাষ্ট্র ও পান্ডু নামে দুটি চরিত্র দেখতে পায়। এ দুইজনের জন্ম কাহিনী এখানে উল্লেখ আছে। অম্বিকা, যিনি ধৃতরাষ্ট্র ও পান্ডুর মা। যখন কৃষ্ণদৈপায়ন বৈশ্যের মাধ্যমে তিনি সন্তান ধারণ করবেন, তখন অম্বিকা, কৃষ্ণদৈপায়ন বৈশ্যের রুদ্র মুর্তি দেখে ভীত-সন্ত্রস্থ হয়ে পড়েছিলেন । অস্বিকা সেই অবস্থাতেই সন্তান ধারণ করেন এবং সন্তানও তার মায়ের ভূলের কারণে এই রকমই হয়। আবার, অম্বিকা একটি অন্ধ সন্তান (ধৃতরাষ্ট্র) জন্ম দেন, কারণ সন্তান ধারণের সময় তিনি কৃষ্ণ দৈপায়নের ভয়ংকর রুপ এড়িয়ে যাওয়ার জন্য চোখ বন্ধ করে রেখেছিলেন। মহাভারতের এ কাহিনীর পিছনে একটি বৈজ্ঞানিক সত্য লুকিয়ে আছে। ভারতীয় দর্শনে আরেকটি কাহিনী আমরা শুনতে পায়, রাবন অসুর হয়েছিলেন, তার মায়ের ভুলের কারণে। এ কথার পিছনেও একটি বৈজ্ঞানিক সত্য লুকিয়ে আছে। প্রকৃতপক্ষে, গর্ভধারণের সময় মায়ের যে মানসিক অবস্থা থাকে, অনাগত
সন্তানও উত্তরাধিকার সূত্রে সে মানসিক অবস্থা লাভ করে। রাবণ ছিলেন ভীষ্রবা মুনি ও নিকষা রাক্ষুসীর প্রথম সন্তান আর তাদের দ্বিতীয় সন্তান হল ‘কুম্বকর্ণ’। এ দুইজনই রাক্ষস হয়েছিল তাদের মায়ের ভুলের কারণে। কামের বশবর্তী হয়ে তিনি তাদের গর্ভধারণ করেছিলেন, কিন্তু সঠিক সময় ও স্থান সেখানে উপেক্ষিত ছিল। এই দম্পতিরই তৃতীয় সন্তান ‘বিভীষন’। যিনি গভীরভাবে ধর্মীয়ভাবসম্পন্ন, সদ্গুণের অধিকারী ছিলেন। এর পিছনের কারণ হলো যখন নিকষা এ সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেন, তখন তিনি তার স্বামী ভীষ্রবা মুনির পরামর্শে মানসিকভাবে পরিশুদ্ধ হয়েছিলেন। এ পরিবর্তিত মানসিক অবস্থার ছাপই দেবসন্তান বিভীষনের জন্ম দেই।

দরিদ্র এক কৃষকের ঘরে জন্মগ্রহন করেছিল একটি পুত্র সন্তান। পরবর্তীতে সেই ছেলে তার দেশ ও জাতিকে গৌরবান্বিত ও সম্মানিত করেছিল। খোজঁ খবর নিয়ে জানা গেল, ঐ কৃষক তীব্র কৌতুহলতা নিয়ে বিচারকের আদালতে যেতেন। তিনি শ্রদ্ধা ও সমীহের সাথে বিচারকের বিচারকার্য দেখতেন। তিনি প্রায়ই বিচারকের বিচারকার্যে কৌশলী ভূমিকার কথা স্ত্রীর সাথে আলোচনা করতেন। এভাবে তাদের মনে বিচারকের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা গড়ে উঠে। তারা অবচেতন মনেই বিচারকের মত একটি পুত্র সন্তান লাভের আশা করতেন। তাই তাদের মনের এ সমতান থেকেই ঐ বিচারকের মত সন্তানই তারা লাভ করেন। তাই শ্রাস্ত্রে বলা হয়েছে, স্বামী-স্ত্রীর সমতান থেকেই সন্তানের সৃষ্টি। আরেকটি কাহিনী পড়েছিলাম একটি প্রবন্ধে। একবার একটি যাত্রায় এক দম্পতি শ্রীশ্রীচৈতন্যদেবের মহান জীবনী দেখে খুবই অভিভূত হন এবং এর পড়েই তার স্ত্রী গর্ভধারণ করেন। অসাধারণ মানসিকতা সম্পন্ন এক পুত্র সন্তান জন্ম হয় এ দম্পতির গৃহে। আপনারা শুনে অবাক হবেন না, যদি কেউ টিভি বা সিনেমার পর্দায় ধর্ষন বা হত্যা বা বিভৎস কিছু দেখে তারপর গর্ভধারণ করেন, তাহলে তাদের ঘরে ঐ ধরণের বিকৃত মানসিকতা সম্পন্ন সন্তানের জন্ম হতে পারে। অর্থাৎ, দম্পতিদের মানসিক অবস্থা সন্তানের উপর ব্যপক প্রভাব ফেলে। আবার যদি এমন হয় যে স্বামী সমাজে খুবই শ্রদ্ধার পাত্র কিন্তু তার স্ত্রী যদি বদমেজাজী স্বভাবের হন এবং স্বামীকে মোটেও কোন শ্রদ্ধা না করেন। যদি তিনি তার স্বামীর মাসিক যন্ত্রনা ও চিন্তার কারণ হয়ে থাকেন, তাহলে সে দম্পতি এমন সন্তান লাভ করবে যে তার পিতার বৈশিষ্ট্যগুলো অর্জন করবে না। এই ধরণের সন্তানেরা পিতার কোন ভালগুণের উত্তরাধিকারী হতে পারে না। স্বামীর প্রতি স্ত্রীর মনোভাব সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ এবং মৌলিক বিষয়, যা প্রজননের পটেনশিয়ালিটি পরিচালিত করে। আধুনিক প্রজননবিদ্যা এখনও এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির বিষয়ে সচেতন নয়, যদিও এর কারণেই সমাজে অনাকাঙ্কিত বৈশিষ্টের সন্তানের আগমন ঘটছে। যারা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র তথা বৈশ্বিক নানা বিশৃ্খংলা সৃষ্টির মাধ্যমে মানব জাতির একমাত্র আবাসস্থলের পরিবেশ বিষিয়ে তুলেছে। হয়ত ভবিষ্যতে প্রজনন বিজ্ঞানীরা ঋষিদের এ সতর্ক বানী উপলব্দি করতে পারবেন।

এ বিষয়ে আমরা প্রতিলোম বিবাহের ( hypogamous marriage) কথা উল্লেখ করতে পারি। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে, এ ঘটনাটি নিম্ন বিকশিত শুক্রানু (less evolved sperm ) দ্বারা উচ্চ বিকশিত ডিম্বানুকে (more evolved sperm ) নিষিক্ত করা। সনাতন ধর্মীয় শ্রাস্ত্র প্রণেতা ও গ্রন্থগুলো এ ধরনের বিবাহের ব্যাপারে নিষোধাজ্ঞা দিয়েছেন। কারণ, এটি প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে বিকৃতি নিয়ে আসে। আধুনিক তথাকথিত শিক্ষিতরা আজকাল ঋষিদের এইসব বিধান পালনে অনীহা দেখাচ্ছে। যার ফলে এ সুন্দর পৃথিবীর সংকট ঘনীভূত হচ্ছে।
তাই শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বলেছেন,“শাসন-সংস্থা যেমনই হোক / যাতেই মাথা ঘামাও না / যৌন ব্যাপার শুদ্ধ না হলে / দেশের জীবন টিকবেনা।”
আরো বলেছেন, “রাষ্ট্র পূঁজার অর্ঘ্য জানিস / সু-প্রজননের সন্তান / সে ঐশ্বর্য্যে দেশবাসী সব / আপদ হতে পায়ই ত্রাণ।”

কিন্তু আমরা সবকিছুকে তোয়াক্কা করে, আজ বিদেশী কৃষ্টিবিহীন শিক্ষার চশমা লাগিয়ে জীবনের অতিপ্রয়োজনীয় বিধানকে অবজ্ঞা করছি। আর এ বিষযগুলিকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বিভিন্ন কুট যুক্তির অবতারণা করছি।
তাই শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন, “তুমি বিধিকে অবজ্ঞা করিতে পার, / প্রকৃতিকে তাচ্ছিল্য করিতে পার, / সে স্বাধীনতা তোমার আছে। / প্রকৃতিও তার দূর্দান্ত আঘাত হানতে নিবৃত্ত হবে না, / সে স্বাধীনতা প্রকৃতিরও আছে - / কা’জেই বুঝ, /যা’ শ্রেয় বলে মনে বিবেচনা কর, তাই করে চল। ”

এ ধরণের বিবাহের মাধ্যমে আগত সন্তানেরা জীবন, জীবন-উৎস ও কৃষ্টির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে।
এ কারণে তারা হিংস্র হয়ে উঠে। তাই এর মাধ্যমে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে তা হলো বিশ্বব্যাপী হিংস্রতা বৃদ্ধির কারণ হলো অসাম্য বিবাহ তথা বিবাহ ব্যবস্থায় চরম নৈরাজ্য।

আজ আমরা প্রকৃতির সাথে এক ভয়ংকর খেলায় মেতে উঠেছি। পরিবেশের কথা বিন্দুমাত্রও চিন্তা না করে আমরা নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করছি এবং ধরিত্রীকে মরুময় করে তুলছি। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য আমরা আরো বেশী বেশী গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করছি, বৃক্ষরোপর সপ্তাহ পালন করছি, বিনামূল্যে চারা বিতরণ করছি। সাথে সাথে এগুলোকে রক্ষার জন্য নিত্যনতুন পদ্ধতি যেমন সামাজিক বনায়ন এর মত কর্মকান্ডে হাত দিচ্ছি। সূতারাং এ সমাজেও আমরা বিবাহের সমস্যার কারণে মানুষের মধ্যে যে অমানবিকতা, এর বিরুদ্ধে লড়াই করছি। কিন্তু এ ভূল বিবাহের মাধ্যমে সমাজে অসুর আনার পথ খুলে দিয়েছি। তাহলে আমরা যদি জরুরি ভিত্তিতে ‘মানবতা বাচাও আন্দোলন’ ঘোষনা করি, তা কি খুবই অযৌক্তিক হবে? আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ধরিত্রীর বাতাসে বিষাক্ত নিশ্বাস আরো বাড়ার আগেই এ আন্দোলন শুরু করা দরকার। বিবাহ শুদ্ধ করা দরকার, যা জনন শুদ্ধিতার পূর্বশর্ত।

পরিচালক, শ্রেয় অন্বেষা 

Post a Comment