সদ্-গুরু কখনও কারো বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে ভেঙ্গে দিয়ে নতুন কিছু গড়েন না। বৈশিষ্ট্য তাই, যার দ্বারা মানুষের সত্তা বিশেষভাবে শাসিত ও বিধৃত হয়ে আছে। কেবল মানুষ কেন, ইতর প্রাণী ও জড় পদার্থেরও আছে এক-একটি বিশাসিত রকম। সদ্গুরু কখনও সেগুলোকে লোপাট করে ফেলেন না। বৈশিষ্ট্য নষ্ট হয়ে গেলেই কোন কিছুর আর পূর্ব নিজস্বতা থাকে না, তা হয়ে পড়ে সম্পূর্ণ নতুন একটি পদার্থ এইভাবে বৈশিষ্ট্যকে ভেঙ্গে দিয়েই সৃষ্টি করা হয় নতুন-নতুন ফল, নতুন জাতীয় ফুল। কিন্তু জগতের মূল অবিকৃত পদার্থগুলির বৈশিষ্ট্য যদি একেবারে মুছে ফেলে দেওয়া যায়, তাহলে তাদের দ্বারা যে কাজ পাওয়া যেত, তা থেকে বঞ্চিত হতে হবে। তাতে সমাজ ও দেশের ক্ষতিই হবে। সেই কারণে, মানুষ, পশু, উদ্ভিদ ইত্যাদি সবকিছুর বৈশিষ্ট্যগুলিকে সদগুরু সযত্নে রক্ষণ ও পালন করেন। তাই, সদ্ গুরুর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষণ হলো—
তিনি বৈশিষ্ট্যপালী। সদগুরু আর-একটি লক্ষণ — তিনি আপূরয়মান। কোন মানুষ পূর্ণ ব্যক্তিত্ব নিয়ে জন্মগ্রহন করে না। পরম-পুরুষ ব্যতিত সবারই থাকে অসম্পূর্ণতা ও প্রবৃত্তিপরায়ণতা। আবার, যেটুকু সাত্বত সম্পদ থাকে, তাও অনেকে অনাচার-কদাচারবশে নষ্ট করে। সবার সব দিকের এই অসম্পূর্ণতা সুকেন্দ্রিক সাধনার মাধ্যমে পরিপূরিত করে, প্রতিটি ব্যষ্টি-বৈশিষ্ট্যকে শিষ্টতায় সমাসীন ও ভাস্বর করে গড়ে তোলার ক্ষমতা রাখেন সদ্গুরু। ‘আ’ অর্থাত সর্বতোভাবে পূরণ করাই তাঁর সহজ স্বভাব, তাই তিনি আপূরয়মাণ।
বৈশিষ্ট্যপালিত্ব ও আপূরয়মাণত্ব, এই দুটি গুণ যা’র মধ্যে দেখা যায় না, তিনি যত বড় মহানই হোন না কেন, সর্বতোভাবে অনুসরণযোগ্য নন। তাঁর মধ্যে ভ্রান্তি থাকাই সম্ভব। সদ্গুরু পৃথিবীর যে-কোন প্রান্তে যখনই আসুন না কেন, তাঁর মধ্যে উপরি-উক্ত লক্ষণ দুটি পূর্ণমাত্রায় ক্রিয়াশীল থাকবেই। আর, তা থাকলে সেই ব্যক্তিত্বই হন গ্রহনীয়।
Post a Comment