‘তব মহান, আমারে কর জীবন দান’-বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ রচিত গানের এই কলিটির মতোই আমরা প্রত্যেকেই প্রতিনিয়ত বাস্তবে, স্বপ্নে, চিন্তায়, কল্পনায় একটি চমৎকার জীবন লাভের প্রত্যাশ্যায় আর চেষ্টায় ন্যস্ত। কিন্তু সেই অর্থে একটি নিষ্কন্টক, নিরূপদ্রব ও বৃদ্ধিগামী, উন্নয়নমুখী জীবন আমরা উপভোগ করতে পারছি কি? না, অগনিত সমস্যা, সংকীর্ণতা আর চেতনাগত সীমাবদ্ধতার গুণনে সেই অভীষ্ট জীবন প্রাপ্তি আমাদের ঘটছে না। কারণ জীবন সাজানোতেই যে ভূল, যেখানে আমরা নানা জীবনীয় উপাদানগুলোকে উপেক্ষা করে যাই বা সংযুক্ত করতে পারি না জীবনগ্রাহ্য বিষয়গুলো। ফলশ্র“তিতে যথার্থ অস্তি-প্রগতির সূত্র সম্বলিত বা বাঁচা-বাড়ার সহায়ক জীবনাচরণ বিহীন নিরস এক একটি জীবন পেয়ে বসে আমাদের। আর এখানেই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠে যুগপুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বহুল প্রচারিত সংজ্ঞাটি-“ধর্ম হলো বাঁচা ও বাড়ার বিজ্ঞান”। যেখানে তিনি ধর্মকেই উপস্থাপিত করেছেন জীবনবৃদ্ধিবাদ হিসেবে। যার অর্থ এমনই যে, ধর্ম পালনেই সেই অতি প্রত্যাশিত বৃদ্ধিগামী ও উন্নয়নমুখী জীবন গঠন সম্ভব। কিন্তু, প্রচলিত ধাঁচের আচারসর্বস্ব, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, শুধু ভাবপ্রবল বা ব্যাখ্যাহীন ধর্ম নির্ভরতা এই যুগে কতটুকু জীবনীয় হয়ে উঠতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় সমকালীন বাস্তবতা ও আধুনিক বিজ্ঞানমনষ্কতা। তাই শ্রীশ্রীঠাকুরের উদ্দিষ্ট সংজ্ঞায়নটি প্রমাণের স্বার্থেই তঁৎপ্রদর্শিত ধর্মের জীবনীয়তা বা জীবনসংশ্লিষ্টতা নির্ণয় জরুরী।
জীবনীয় মানে তাই যা আমাদের জীবনকে পুষ্ট, তুষ্ট ও সংবর্ধিত করে তোলে চালিত করে আরোতর উন্নয়নের পথে। আবার এই জীবনীয় উপাদান বা বিষয়গুলোও সময়ের বা যুগের প্রেক্ষাপট ও পরিবেশ-পারিপার্শি¦কতা সাপেক্ষে পরিবর্তিত হয় বা প্রযোজ্য হয়। যেমন আগেকার দিনের শস্যভরা ক্ষেত, গোয়ালভরা গরু আর পুকুরভরা মাছের প্রার্চুয্যতা আপনা আপনিই থাকত যার জন্য আলাদা করে কোন কসরত দরকার পড়ত না। কিন্তু, আজকালকার দিনে এমন অবস্থা রূপকথার বা ঘুম পাড়ানি গল্পের উপজীব্য। বাস্তবে এসব দিকের নূন্যতম স্বংয়সম্পূর্ণতার জন্যও এখন বিজ্ঞান, কৃষি আর অর্থনীতির নানা কলাকৌশল প্রয়োগ করা লাগে। তার মানে জীবনীয় বা জীবনের প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোর ব্যপ্তিও অনেক বেড়ে গেছে আগের তুলনায়। শুধুমাত্র প্রযুক্তি বা বিজ্ঞান নির্ভরতাই এতটা বেড়েছে যে এগুলো ব্যতিরেকে যে কোন জীবনই এখন অকল্পনীয়। তাহলে যেকোন ধর্মই কি এমন মাল্টি ডাইমেনশনাল (বহুমূখী) জীবনের নিয়ন্তা বা বাঁচা-বাড়ার নিয়ামক হতে পারে? হ্যাঁ, পারে বৈকি। যদি সেটি যুগধর্ম হয়। যেখানে শিক্ষা, শিল্প, সমাজ, রাষ্ট্র, কৃষি, বিজ্ঞান, অর্থনীতিসহ অন্যান্য সব বিষয় একত্রে উপনীত হয়ে সার্থক হয় একাদর্শে। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র এমন একটি ধর্মেরই উদ্গাতা হয়ে দেখিয়েছেন ‘বাঁচা-বাড়া’য় মগ্ন এক জীবনের নিশানা, তাঁর আদর্শ এতটাই জীবন সংশ্লিষ্ট যে যার আংশিক পালনেই ঝলকে ঝলকে অলোকসামান্য হয়ে উঠে জীবন আবার তেমন জীবনের আলো এতটাই অসামান্য যে তাঁর সংস্পর্শে চমকিত হয়ে উঠে অন্য অনেক জীবন নিমিষেই। সৎসঙ্গের আদত ইতিহাসের সামান্যতম পর্যালোচনাই বলে দেয় শ্রীশ্রীঠাকুরের আদর্শ নয় শুধু, শ্রীশ্রীঠাকুর নিজেই কতোভাবে জীবনীয় ছিলেন! তিনি নিজের-“বাঁচতে নরের যা যা লাগে/তাই নিয়েই তো ধর্ম্ম জাগে”-শীর্ষক বাণীর প্রয়োজনে বিংশ শতকের শেষদিকে পাবনা-হিমাইতপুরের গন্ডগ্রামেই গড়ে তুলেছিলেন বিশ্ববিজ্ঞান কেন্দ্র, সৎসঙ্গ কেমিক্যাল ওয়ার্কস, সৎসঙ্গ কলাকেন্দ্র, সৎসঙ্গ পাবলিশিং হাউস, কুটিরশিল্প, মেকানিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, সৎসঙ্গ ব্যাংক ইত্যাদি। এই কারণে তিনিই তো যুগপুরুষোত্তম, যিনি যুগচাহিদা ও প্রয়োজনানুপাতিক করে ধর্ম গঠন করেন জীবনীয় আবেশে। এখানে আরও একটি জীবনীয় বিষয় আছে তা হলো আজ থেকে অত আগে এতসব প্রতিষ্ঠান গঠনে শ্রীশ্রীঠাকুর কোন ফরেন ইনভেষ্টমেন্ট ( বৈদেশিক বিনিয়োগ) বা বিশাল ডোনেশন (দান) এর জন্য চাতক পাখির মত চেয়ে থাকেন নি। তাঁর ক্যাপিটাল ছিল মানুষ আর ভালবাসা যা গঠিত হয় তাঁর ফর্মূলাতেই-‘আয় আমার মানুষ, ব্যয় ভালবাসা’। এক-এর প্রতি আনতি,সবার মধ্যে ভালবাসা আর যোগ্যতা উন্নয়নের প্রয়াস থাকলে কোনো অনুদান বা সাহায্য ছাড়াই যে বিশাল উন্নয়ন কর্মকান্ড সম্ভব তারই একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে শ্রীশ্রীঠাকুরের জীবনের একটি জীবনীয় ঘটনা। কোলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র থাকাকালীন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, যিনি শ্রীশ্রীঠাকুরের শিষ্য ও গুণমুগ্ধ ভক্ত ছিলেন, বালিগঞ্জ লেকের ধারে তাঁর ঈড়হঃৎড়ষ- এ থাকা ৫০ বিঘা জমি আশ্রমের জন্য দিতে চেয়েছিলেন, যেখানে আশ্রম হলে সকলের কাছে সহজেই এর প্রচার সম্ভব এবং সকলের সাহায্য-সহযোগিতা পেয়ে আশ্রমও অতি সহজেই হয়ে যেত। কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুর এতে অসম্মতি জানান একারণে যে হিমাইতপুরের অজ পাড়াগাঁয়ে, যেখানে কোন কিছুরই সুবিধা নেই বরং অনেক বাধাবিঘœতা, সেখানে নিজেদের প্রচেষ্টায় যদি আশ্রম গড়ে তোলা যায়, তবে ভবিষ্যতে আর কোন কিছুই তাঁদের ঠেকিয়ে রাখতে পারবেনা। এই যে, প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে সাফল্য অর্জনের মনোভাব-এটিই বর্তমান সময়ে আমাদের সকলের জীবনে খুব বেশী জীবনীয়, খুব বেশী প্রয়োজনীয় সমাজে টিকে থাকার জন্য। শ্রীশ্রীঠাকুর ও তাঁর আদর্শ যে আরও কতভাবে জীবনীয় তা প্রমাণ করতে অনেক খাতার পৃষ্ঠা খরচ করা যাবে বা আলোচনায় কাটানো যাবে অগণিত সময়। কিন্তু তাতে সেই বিশালতার স্ন্যাপশটিও (ক্ষণিক মুহুর্তের ছবি) দেওয়া যাবে না। তাহলে উপায়? উপায় তাঁর কথাতেই-“আমার প্রচার করতে নেমে আমার কথা বল না। আমি কী বলেছি, আমি কী করেছি তাই নিয়ে প্রচার শুরু করলে বুঝতে হবে তোমার নিজস্ব কিছু পুঁজি নেই। এ প্রচার টেকে না, তোমার ব্যবহারে, তোমার কথায় প্রসাদগুণে তুমি মানুষের মন জয় করবে। তোমার চরিত্রগুণে মুগ্ধ হয়ে মানুষ খুঁজবে তোমার প্রেরণার উৎস কি? সেখানে যদি আমায় খুঁজে পায় তার থেকে শ্রেষ্ঠ প্রচার আর হয় না”। শুধু শ্রীশ্রীঠাকুরের জীবনীয় আদর্শ প্রাচারের জন্য নয়, আমাদের জীবনের যেকোন ক্ষেত্রেই এই টেকনিকটা সবচেয়ে উপযোগী। কারণ, মুখে শত খই ফোটালেও যদি কাজে আর ব্যবহারে তার অনুবাদ না ঘটে তবে তা কদাচিৎ মানুষ গ্রহণ করে। তাই শ্রীশ্রীঠাকুর যজন নির্ভর যাজনের উপর এত গুরুত্ব দিয়েছেন। সত্যিই যজন, যাজন, ইষ্টভূতি, স্বস্ত্যয়নী, সদাচার প্রভৃতি সৎসঙ্গের মৌলিক স্তম্ভগুলোর ধারণা বা থিওরি কিন্তু আমাদের কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাক্ষেত্রে, সংসারে বা নিত্যদিনে অবস্থা অনুপাতে সর্বক্ষেত্রেই প্রয়োগযোগ্য, যেখানে উপাদানগুলোর মৌলগত আন্তঃসম্পর্ক একই থাকে। মোদ্দাকথায়, শ্রীশ্রীঠাকুরের কোন ধারণাকেই এইযুগে চলেনা বা জীবনের জন্য অপ্রয়োজনীয় বলে বাতিলের খাতায় ফেলে দেয়া যাবেনা। অতএব, উন্নত,আধুনিক ও যুগোপযোগী জীবন চাইলে, জীবনীয় উপাদানগুলোর সংযুক্তি ঘটাতে হবে নিজ নিজ জীবনে। আর শ্রীশ্রীঠাকুরের ধর্ম নামক পুরো জীবনীয় প্রক্রিয়াটি সেই এক-এ গ্রথিত বলে, সর্বপ্রথমে গ্রহণ করতে হবে সেই একমেবাদ্বিতীয়ম-কে। তদ্রুপ, কিছুটা মানলাম, কিছুটা মানি না বলে এর সংশ্লেষিত জীবনীয় রূপকে উপেক্ষা করা যাবে না। শুধু জীবনীয় আদর্শ বা দর্শনটি মানলাম কিস্তু আদর্শের মূর্ত পুরুষকে মানলাম না বা গ্রহণ করলাম না তাতেও কিন্তু জীবন ঘনিষ্ঠ আদর্শ জীবনীয় হয়ে উঠবে না কারও জীবনে। কারণ সেখানে সত্তাসঙ্গত রকমে বা ভালবাসার টানে অনূদিত হবেনা জীবন। তাই, একটি উন্নত জীবন উপভোগের তরে জীবনীয় আদর্শ আমাদের কাছে গ্রহণীয় হয়ে উঠুক,স্বার্থক হয়ে উঠুক সেই জীবনস্বামীকে গ্রহণে-এই প্রত্যাশায়, ‘জয়গুরু’।
------¬¬¬¬¬¬¬
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, সৎসঙ্গ-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
জীবনীয় মানে তাই যা আমাদের জীবনকে পুষ্ট, তুষ্ট ও সংবর্ধিত করে তোলে চালিত করে আরোতর উন্নয়নের পথে। আবার এই জীবনীয় উপাদান বা বিষয়গুলোও সময়ের বা যুগের প্রেক্ষাপট ও পরিবেশ-পারিপার্শি¦কতা সাপেক্ষে পরিবর্তিত হয় বা প্রযোজ্য হয়। যেমন আগেকার দিনের শস্যভরা ক্ষেত, গোয়ালভরা গরু আর পুকুরভরা মাছের প্রার্চুয্যতা আপনা আপনিই থাকত যার জন্য আলাদা করে কোন কসরত দরকার পড়ত না। কিন্তু, আজকালকার দিনে এমন অবস্থা রূপকথার বা ঘুম পাড়ানি গল্পের উপজীব্য। বাস্তবে এসব দিকের নূন্যতম স্বংয়সম্পূর্ণতার জন্যও এখন বিজ্ঞান, কৃষি আর অর্থনীতির নানা কলাকৌশল প্রয়োগ করা লাগে। তার মানে জীবনীয় বা জীবনের প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোর ব্যপ্তিও অনেক বেড়ে গেছে আগের তুলনায়। শুধুমাত্র প্রযুক্তি বা বিজ্ঞান নির্ভরতাই এতটা বেড়েছে যে এগুলো ব্যতিরেকে যে কোন জীবনই এখন অকল্পনীয়। তাহলে যেকোন ধর্মই কি এমন মাল্টি ডাইমেনশনাল (বহুমূখী) জীবনের নিয়ন্তা বা বাঁচা-বাড়ার নিয়ামক হতে পারে? হ্যাঁ, পারে বৈকি। যদি সেটি যুগধর্ম হয়। যেখানে শিক্ষা, শিল্প, সমাজ, রাষ্ট্র, কৃষি, বিজ্ঞান, অর্থনীতিসহ অন্যান্য সব বিষয় একত্রে উপনীত হয়ে সার্থক হয় একাদর্শে। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র এমন একটি ধর্মেরই উদ্গাতা হয়ে দেখিয়েছেন ‘বাঁচা-বাড়া’য় মগ্ন এক জীবনের নিশানা, তাঁর আদর্শ এতটাই জীবন সংশ্লিষ্ট যে যার আংশিক পালনেই ঝলকে ঝলকে অলোকসামান্য হয়ে উঠে জীবন আবার তেমন জীবনের আলো এতটাই অসামান্য যে তাঁর সংস্পর্শে চমকিত হয়ে উঠে অন্য অনেক জীবন নিমিষেই। সৎসঙ্গের আদত ইতিহাসের সামান্যতম পর্যালোচনাই বলে দেয় শ্রীশ্রীঠাকুরের আদর্শ নয় শুধু, শ্রীশ্রীঠাকুর নিজেই কতোভাবে জীবনীয় ছিলেন! তিনি নিজের-“বাঁচতে নরের যা যা লাগে/তাই নিয়েই তো ধর্ম্ম জাগে”-শীর্ষক বাণীর প্রয়োজনে বিংশ শতকের শেষদিকে পাবনা-হিমাইতপুরের গন্ডগ্রামেই গড়ে তুলেছিলেন বিশ্ববিজ্ঞান কেন্দ্র, সৎসঙ্গ কেমিক্যাল ওয়ার্কস, সৎসঙ্গ কলাকেন্দ্র, সৎসঙ্গ পাবলিশিং হাউস, কুটিরশিল্প, মেকানিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, সৎসঙ্গ ব্যাংক ইত্যাদি। এই কারণে তিনিই তো যুগপুরুষোত্তম, যিনি যুগচাহিদা ও প্রয়োজনানুপাতিক করে ধর্ম গঠন করেন জীবনীয় আবেশে। এখানে আরও একটি জীবনীয় বিষয় আছে তা হলো আজ থেকে অত আগে এতসব প্রতিষ্ঠান গঠনে শ্রীশ্রীঠাকুর কোন ফরেন ইনভেষ্টমেন্ট ( বৈদেশিক বিনিয়োগ) বা বিশাল ডোনেশন (দান) এর জন্য চাতক পাখির মত চেয়ে থাকেন নি। তাঁর ক্যাপিটাল ছিল মানুষ আর ভালবাসা যা গঠিত হয় তাঁর ফর্মূলাতেই-‘আয় আমার মানুষ, ব্যয় ভালবাসা’। এক-এর প্রতি আনতি,সবার মধ্যে ভালবাসা আর যোগ্যতা উন্নয়নের প্রয়াস থাকলে কোনো অনুদান বা সাহায্য ছাড়াই যে বিশাল উন্নয়ন কর্মকান্ড সম্ভব তারই একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে শ্রীশ্রীঠাকুরের জীবনের একটি জীবনীয় ঘটনা। কোলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র থাকাকালীন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, যিনি শ্রীশ্রীঠাকুরের শিষ্য ও গুণমুগ্ধ ভক্ত ছিলেন, বালিগঞ্জ লেকের ধারে তাঁর ঈড়হঃৎড়ষ- এ থাকা ৫০ বিঘা জমি আশ্রমের জন্য দিতে চেয়েছিলেন, যেখানে আশ্রম হলে সকলের কাছে সহজেই এর প্রচার সম্ভব এবং সকলের সাহায্য-সহযোগিতা পেয়ে আশ্রমও অতি সহজেই হয়ে যেত। কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুর এতে অসম্মতি জানান একারণে যে হিমাইতপুরের অজ পাড়াগাঁয়ে, যেখানে কোন কিছুরই সুবিধা নেই বরং অনেক বাধাবিঘœতা, সেখানে নিজেদের প্রচেষ্টায় যদি আশ্রম গড়ে তোলা যায়, তবে ভবিষ্যতে আর কোন কিছুই তাঁদের ঠেকিয়ে রাখতে পারবেনা। এই যে, প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে সাফল্য অর্জনের মনোভাব-এটিই বর্তমান সময়ে আমাদের সকলের জীবনে খুব বেশী জীবনীয়, খুব বেশী প্রয়োজনীয় সমাজে টিকে থাকার জন্য। শ্রীশ্রীঠাকুর ও তাঁর আদর্শ যে আরও কতভাবে জীবনীয় তা প্রমাণ করতে অনেক খাতার পৃষ্ঠা খরচ করা যাবে বা আলোচনায় কাটানো যাবে অগণিত সময়। কিন্তু তাতে সেই বিশালতার স্ন্যাপশটিও (ক্ষণিক মুহুর্তের ছবি) দেওয়া যাবে না। তাহলে উপায়? উপায় তাঁর কথাতেই-“আমার প্রচার করতে নেমে আমার কথা বল না। আমি কী বলেছি, আমি কী করেছি তাই নিয়ে প্রচার শুরু করলে বুঝতে হবে তোমার নিজস্ব কিছু পুঁজি নেই। এ প্রচার টেকে না, তোমার ব্যবহারে, তোমার কথায় প্রসাদগুণে তুমি মানুষের মন জয় করবে। তোমার চরিত্রগুণে মুগ্ধ হয়ে মানুষ খুঁজবে তোমার প্রেরণার উৎস কি? সেখানে যদি আমায় খুঁজে পায় তার থেকে শ্রেষ্ঠ প্রচার আর হয় না”। শুধু শ্রীশ্রীঠাকুরের জীবনীয় আদর্শ প্রাচারের জন্য নয়, আমাদের জীবনের যেকোন ক্ষেত্রেই এই টেকনিকটা সবচেয়ে উপযোগী। কারণ, মুখে শত খই ফোটালেও যদি কাজে আর ব্যবহারে তার অনুবাদ না ঘটে তবে তা কদাচিৎ মানুষ গ্রহণ করে। তাই শ্রীশ্রীঠাকুর যজন নির্ভর যাজনের উপর এত গুরুত্ব দিয়েছেন। সত্যিই যজন, যাজন, ইষ্টভূতি, স্বস্ত্যয়নী, সদাচার প্রভৃতি সৎসঙ্গের মৌলিক স্তম্ভগুলোর ধারণা বা থিওরি কিন্তু আমাদের কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাক্ষেত্রে, সংসারে বা নিত্যদিনে অবস্থা অনুপাতে সর্বক্ষেত্রেই প্রয়োগযোগ্য, যেখানে উপাদানগুলোর মৌলগত আন্তঃসম্পর্ক একই থাকে। মোদ্দাকথায়, শ্রীশ্রীঠাকুরের কোন ধারণাকেই এইযুগে চলেনা বা জীবনের জন্য অপ্রয়োজনীয় বলে বাতিলের খাতায় ফেলে দেয়া যাবেনা। অতএব, উন্নত,আধুনিক ও যুগোপযোগী জীবন চাইলে, জীবনীয় উপাদানগুলোর সংযুক্তি ঘটাতে হবে নিজ নিজ জীবনে। আর শ্রীশ্রীঠাকুরের ধর্ম নামক পুরো জীবনীয় প্রক্রিয়াটি সেই এক-এ গ্রথিত বলে, সর্বপ্রথমে গ্রহণ করতে হবে সেই একমেবাদ্বিতীয়ম-কে। তদ্রুপ, কিছুটা মানলাম, কিছুটা মানি না বলে এর সংশ্লেষিত জীবনীয় রূপকে উপেক্ষা করা যাবে না। শুধু জীবনীয় আদর্শ বা দর্শনটি মানলাম কিস্তু আদর্শের মূর্ত পুরুষকে মানলাম না বা গ্রহণ করলাম না তাতেও কিন্তু জীবন ঘনিষ্ঠ আদর্শ জীবনীয় হয়ে উঠবে না কারও জীবনে। কারণ সেখানে সত্তাসঙ্গত রকমে বা ভালবাসার টানে অনূদিত হবেনা জীবন। তাই, একটি উন্নত জীবন উপভোগের তরে জীবনীয় আদর্শ আমাদের কাছে গ্রহণীয় হয়ে উঠুক,স্বার্থক হয়ে উঠুক সেই জীবনস্বামীকে গ্রহণে-এই প্রত্যাশায়, ‘জয়গুরু’।
------¬¬¬¬¬¬¬
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, সৎসঙ্গ-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
Post a Comment