Ads (728x90)

SRI SRI THAKUR VIDEO

Like this page

Recent Posts

World time

Add as a follower to automatically get updated Article. Jaiguru!

আজ আমি অত্যন্ত খুশী অনুভব করছি যে,, যুগপুরুষোত্তম পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের ১২৫ তম জন্ম মহোৎসব ধুমধামসহকারে সারাবিশ্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সারা বিশ্বের সাথে বাংলাদেশও এ শুভ সমারোহে সামিল হয়েছে। আর যখনই আমরা বাংলাদেশের কথা বলি, ভাবি, তখনই মনে পড়ে এই বাংলাদেশই তো সেই পবিত্র ভূমি যেখানে অবতার যুগপুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র চক্রবর্তী আজ থেকে ১২৫ বছর পূর্বে ইংরেজী ১৮৮৯ সালে (বাংলা ১২৯৫ সন )আবির্ভূত হয়েছিলেন।

আজ যখন সারা বিশ্ব তথা বাংলাদেশ ভিন্ন ধর্ম মতবাদ নিয়ে  উত্তপ্ত, অশান্ত এবং সারা বিশ্বের অধিকাংশ হিংসার উৎস ধর্ম মতবাদ, সেখানে শ্রীশ্রীঠাকুর শান্তির এক অভিনব পথ দেখালেন। সারা বিশ্বের প্রতিটি মানুষ যখন নানা সমস্যা, অশান্তিতে জরাজীর্ণ, তখন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র অত্যন্ত দয়াপরবশ হয়ে এ ধরাধামে অবতীর্ণ হলেন আমাদের সুস্থ করতে, শান্তি দিতে। পৃথিবীটাকে শান্তিময় করে গড়ে তোলবার জন্য। 

শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁর শ্রীমুখে অভয়বাণী দিলেন,
“সর্ব সমস্যার সমাধান
জানিস ইষ্ট প্রতিষ্ঠান ”
অর্থাৎ ইষ্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সর্ব সমস্যার সমাধান পেতে পারি।

আমরা জানি চিরকাল ইহুদী-খ্রীষ্টান স¤প্রদায়, খ্রীষ্টান-মুসলিম স¤প্রদায়, হিন্দু-মুসলমান স¤প্রদায়ের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘাত ও নরহত্যা চলে আসছে। আর এ হত্যা ও সংঘাতের মূল কারণ হিসেবে হিসেবে আমরা ধর্ম বিভেদকেই দায়ী করি। ভারত, পাকিস্থান. বাংলাদেশ তথা এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলিতে এ ধরনের মারামারি, সংঘাত, নরহত্যা এবং একে অপরের সম্পত্তি ধ্বংস করা অহরহ চলে আসছে ধর্মের নামে। এ প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুর কথাপ্রসঙ্গে বলেছেন, “ধর্মের সঙ্গে সা¤প্রদায়িকতার কোন সম্বন্ধ নেই। ধর্মের কারবার বাঁচা-বাড়া নিয়ে। ধর্মের রূপ দেখতে পায় যাদের মধ্যে, তাদের বলি Ideal বা আদর্শ। বিভিন্ন যুগে ওফবধষ যাঁরা আসেন, তারা মূলত: এক কথায় বলেন রকমারিভাবে। তাই এদের মধ্যে বিভেদ করা চলেনা। একজনকে মানলে সবাইকে মানতে হয়। বিশেষত: বর্তমান যিনি তাঁকে। বর্তমান যিনি, তিনি পূর্বতন প্রত্যেকের জীয়ন্ত বেদী। বিবর্তনবাদ যদি মানি, তবে এ জিনিস না মেনে উপায় নেই।”

তাই শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আমাদের পথ দেখালেন তাঁর অমৃত বাণীর মাধ্যমে।
“বুদ্ধ ঈশায় বিভেদ করিস্
শ্রীচৈতন্য রসুল কৃষ্ণে।
জীবোদ্ধাওে আর্বিভূত হন
একই ওঁরা তাও জানিস নে।। ”

আমাদের প্রচলিত ধারণা অর্থনেতিক সমস্যাই সবসমস্যার মূল কারণ। এই ধারণা নিয়ে এক ভদ্রলোক শ্রীশ্রীঠাকুরকে নিবেদন করলেন, “ আমার মনে হয় যদি সব মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হয়, তবেই পৃথিবীতে শান্তি আসবে। ”
শ্রীশ্রীঠাকুর তার জবাবে বললেন, “যদি শান্তি থাকে, তবে অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। যদি ’ধর্ম’ র  অভাব শেষ করতে পারি, তবে ‘অর্থ’র অভাবও শেষ হয়ে যাবে। যদি ‘ধর্ম’ থাকে, তবে ‘অর্থ’, ‘কাম’, ‘মোক্ষ’ সবই থাকবে।”

ধর্মই মানুষের জীবনের প্রথম ও প্রধান আধার। ‘ধর্ম’ মানুষের সব বৈশিষ্ট্যগুলোকে তাৎপর্য্যপূর্ণ ও বাঁচা-বাড়ার সহায়ক করে তোলে। সূতারাং যদি ‘ধমর্’’ ব্যাপ্তি লাভ করে, তবে অর্থনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক হতে পারে। কারন, বৃত্তি প্রবৃত্তিগুলির উপযুক্ত বিন্যাসের মাধ্যমে আমাদের সব কাজকর্ম সঠিকভাবে বিন্যাসিত হয়। আর উপযুক্ত ‘বিন্যাসিত কর্ম ’ই  সম্পদ। সম্পদ ‘প্রয়োজন পরিপূরনী শ্রম’ ছাড়া আর কিছুই নয়।

আর ধর্ম ছাড়া স্বাধীনতা অর্জন করা যায় না। যে ব্যাক্তির প্রবৃত্তি তার control এ (স্ব + অধীন, অর্থাৎ স্বাধীন) সেই একজন সত্যিকারের স্বাধীন ব্যাক্তি। ‘স্বাধীন’ মানে অনিয়ন্ত্রিত বা চরিত্রহীন নয়। ‘স্বাধীন’ মানে ‘মুক্ত’, অর্থাৎ যে বাঁচ-বাড়ার জন্য মুক্ত প্রবৃত্তি কবল থেকে।
এখন কথা হল আমাদের জীবনে আমরা শান্তি আনব কিভাবে?
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূূূলচন্দ্র বললেন,
“উষা নিশায় মন্ত্র সাধন
চলা ফেরায় জপ।
যথাসময়ে ইষ্ট নির্দেশ
মূর্ত করাই তপ ।। ”
শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন, “ যদি একটা লোক শুধু এ বাণীটাকে একটু মেনে চলে, তবে জীবনে খুব একটা বেকায়দায় পড়ে না। ”

তাই সারা পৃথিবীতে বা দেশে বা আমার রাজ্যে শান্তি আনার জন্য প্রয়োজন প্রথমে আমার ব্যাক্তিগত জীবনে শান্তি। এক একটি ব্যাক্তির জীবনের ‘শান্তি’ই মিলিত হয়ে তৈরি হয় পারিবারিক শান্তি। আবার পারিবারিক ‘শান্তি’ মিলিত হয়ে আসে রাজ্যের শান্তি, তথা রাষ্ট্রের শান্তি। তাই সর্বপ্রথমে আমাদের জীবনের আন্দোলন আমার নিজের বিরুদ্ধেই করতে হবে।

শ্রীশ্রীঠাকুরের শ্রীহস্ত লিখিত গ্রন্থ সত্যানুসরণে তিনি বলেছেন, “সর্ব্বপ্রথম আমাদের দূর্বলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। সাহসী হতে হবে। বীর হতে হবে। ”

তাই একটি সুস্থ ও শান্তিপূর্ণ মানুষ যেমন এই পৃথিবীতে শান্তি আনতে পারে। তেমনই একটি অসুস্থ ও অশান্ত মানুষ পৃথিবীতে বহু অশান্তি নিয়ে আসে। আর তাই মানুষের জীবনে অশান্তিও উৎপত্তি হয়।

একটি অতি প্রচলিত প্রবাদ বাক্য আছে। যে কোন তালা তৈরি করার আগেই তার চাবি তৈরি করা হয়। তাই পৃথিবীতে কোন সমস্যা তৈরি হওয়ার আগেই তার সমাধানের চাবি আমাদের হাতে থাকে। আমরা সেই চাবি ব্যবহার করি না, আর সমস্যা সৃষ্টি করি। আমরা সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান মানুষের কথা বলি এবং স্বাস্থ্যবান মানুষ বলতে বুঝি শারিরীক গঠনে পরিপুষ্ট। কিন্তু শুধু শারিরীক গঠনে পরিপুষ্ট একজন মানুষকে কখনোই স্বাস্থ্যবান বলা যায় না। একজন মানুষ তখন সুস্থ , যখন সে মানসিকভাবে সুস্থ, একটি সুস্থ ও controlled mind  এর অধিকারী। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র প্রথম জীবনে মায়ের ইচ্ছানুসারে ডাক্তার হয়ে মানুষের চিকিৎসা করতেন। কিন্তু তিনি যখন বুঝলেন যে, মানুষের সব রোগের মূল তার মন, তখনই একটি সুন্দর মনের মানুষ তৈরির উদ্দেশ্য নিয়ে এই সৎসঙ্গ Organization  তৈরি করলেন। তাই সৎসঙ্গ হল Man making industry  (মানুষ তৈরির কারখানা)।

শ্রীশ্রীঠাকুর সারাজীবনে প্রায় ২৪,০০০ বাণীর মাধ্যমে এই বিশ্বের সর্বসমস্যার, সব বিষয়ে সমাধান দিয়েছেন। তবে তিনি একটি ছোট অভয় বাণী দিয়ে আমাদের সুস্থ, শান্তি ও বাঁচা-বাড়ার রাস্তা বলে দিয়েছেন।
“সৎগুরুর শরণাপন্ন হও, সৎনাম গ্রহন কর। আর সৎসঙ্গের আশ্রয় গ্রহন কর। আমি নিশ্চয়ই বলছি, তোমাকে আর তোমার উন্নয়নের জন্য ভাবতে হবে না। ”

কোন এক ব্যক্তি শ্রীশ্রীঠাকুরকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, বহু সমস্যার সমাধান পাই না কেন? শ্রীশ্রীঠাকুর তার জবাবে বললেন, “আমাদের সবসময় লক্ষ্য রাখতে হবে কিভাবে আদর্শকে পরিপূরণ করতে পারি। আর সেই উদ্দেশ্যে চললে তুমি তোমার সমস্যার সমাধান করতে পারবে। জীবনের প্রধান উদ্দেশ্যে হল ‘ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠা ’ আর তখনই সবকিছু অতি সরলভাবে তোমার সামনে উপস্থিত হবে। আমাদের সব সমস্যা উৎপত্তি হয় প্রবৃত্তিমূখী চলন থেকে আর সব সমস্যার সমাধান হয় ‘ইষ্টার্থী’ ও ‘ইষ্টানুগ’ চলন থেকে। যত তোমরা তাঁর (পরমপিতা / ঈশ্বর ) দিকে এগিয়ে যাবে, তত তোমার জীবনের সমস্যাগুলোর সমাধান পেয়ে যাবে।”

তাই শ্রীশ্রীঠাকুর বারবার বলেছেন যে, সর্বপ্রথম একটি মানুষের জীবনে সৎগুরুর দীক্ষার প্রয়োজন। তনি অনেকবার বলেছেন যে, আমাদের দেখতে হবে যেন একটি লোকও বাদ না যায়। দীক্ষা প্রতিটি মানুষকে দেওয়া প্রয়োজন। দীক্ষা গ্রহন ও দীক্ষানুযায়ী চলনই হল নিজের ও অন্যের বাঁচা-বাড়ার পথ। শ্রীশ্রীঠাকুর যজন, যাজন, ইষ্টভৃতি, স্বস্ত্যয়নী ও সদাচার এই complete package র মাধ্যমে আমাদের পদ্ধতি দেখিয়ে দিয়েছেন।
তিনি বললেন,
“সৎদীক্ষা তুই এক্ষুনি নে
ইষ্টেতে রাখ্ স¤প্রীতি
মরন তাড়ন এ নাম জপে
কাটেই অকাল যমভীতি।। ”

তাই এই বিশ্বের মনুষ্যজাতিকে সবধরনের দু:খ দূর্দশা থেকে রক্ষা করার জন্য সৎসঙ্গের বর্তমান আচার্য্যদেব শ্রীশ্রীদাদা দীক্ষার উপর বিশেষ জোর দিয়েছেন।

সা¤প্রতিক কালে একটি ঋত্বিক অধিবেশনে তিনি বলেন, “আমাদের জীবনের উদ্দেশ্যে হল ঈশ্বরপ্রাপ্তি, অর্থাৎ ভগবানকে সর্বত:ভাবে আমাদের জীবনে বাস্তবায়িত করা। কিন্তু ভগবান ‘অবাঙমানসগোচরম্ ’ অর্থাৎ আমাদের মন ও বাক্য দ্বারা অনুধাবণ করা যায় না। মানুষ তাঁকে সাধারণ জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে চিনতে পারে না, বুঝতে পারে না। তিনি সর্বদায় আমাদের ধারণার ঊর্ধ্বে বিচরণ করেন। কিন্তু তিনি যখন এই ধরণীতে মনূষ্যরূপে অবতরণ করেন, তখন আমরা তাঁকে অনুধাবন করতে পারি ‘সৎদীক্ষা’ গ্রহন করে ও তাঁর নির্দেশিত পথে চলে। যখন আমরা তাঁর দীক্ষা গ্রহন করি, এবং তাঁর নির্দেশিত পথে চলি, তখন ভগবান স্বরূপ গুণ আমাদের মধ্যে বিকাশ লাভ করে। তখন আমরা পূর্ণ ও রক্ষনশীল ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়ে উঠি। ভগবান আমাদের সবাইকে সর্বাবস্থায় ধরে রাখেন। তিনি কখনোও হারিয়ে যান না।”
তাই একজন পরিপূর্ণ ও যোগ্য মানুষ হওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে যুগাঅবতারকে গ্রহন করা। অর্থাৎ দীক্ষা গ্রহন করা প্রতিটি মানুষের অবশ্যই কর্তব্য।

ভগবান বুদ্ধ বলেছিলেন,
“ বৃদ্ধম শরণম্ গচ্ছামি
ধর্মম শরনম্ গচ্ছামী
সম্ভ্রম শরণম্ গচ্ছামি ”
অর্থাৎ জীবন্ত আদর্শ, ধর্ম এবং সংঘ এই তিনটিকে গ্রহন ও অনুসরণ করা কতর্ব্য। আজ যুগাবতার শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ও তাঁর সৎসঙ্গ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা ভগবান বুদ্ধের উপরোক্ত বাণীর বাস্তবরূপ দেখতে পায়।

আসুন এ শুভক্ষণে , যুগাবতার শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের ১২৫তম জন্ম  মহোৎসবে আমরা এ প্রতিজ্ঞা করি যে, আমরা সারা বিশ্বে তাঁর প্রেমের বাণী ছড়িয়ে দেব। তাঁর চরণতলে কামনা করি, প্রতিটি স্বত্তা আনন্দ ও প্রেমের সাথে জীবনে বেড়ে চলুক।

প্রতিটি মানুষের দু:খ, দূর্দশা, , সমস্যার নিরাকরণ হয়ে পৃথিবীতে স্বর্গীয় প্রেম, শান্তি ও উন্নতি প্রতিষ্ঠিত হোক। জাতি, স¤প্রদায়, লিঙ্গ, দেশ নির্বিশেষে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের ও সৎসঙ্গের উদ্দেশ্য ও বাণী “মরো না. মেরো না, পারতো মৃত্যুকে অবলুপ্ত করে দাও” আমাদের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত হোক।  বন্দে পুরুষোত্তমম্! 

লেখক:
B.E.(Mech. Engg.), MBA(IT)
Senior IT Consultant, Mumbai.

Post a Comment