আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনার সাথে আছে একটি কারণ এবং এর প্রভাব। এই ঘটনা, কারণ ও প্রভাবের মধ্যে অবশ্যই সম্পর্ক রয়েছে।
শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন,
আমরা ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ি, যখন আমরা অজ্ঞ থাকি এবং কিভাবে কার্য পরিচালনা করতে হয় এবং অজর্ন করতে হয় তা জানি না। [আলোচনা প্রসঙ্গে, ১০ম খন্ড, ৯/৬/১৯৪৭]
যদি আমরা আমাদের বর্তমানকে দক্ষ ও সূচারুভাবে নিয়ন্ত্রন করতে পারি, তাহলে আমাদের অদৃষ্ট ও ভবিষ্যত নিয়ে কোন ধরনের উদ্বিগ্ন হতে হবে না। [আলোচনা প্রসঙ্গে, ৯ম খন্ড, ১/৬/১৯৪৭]
শ্রীশ্রীঠাকুর জোর দিয়ে বলেছেন, ‘
এই কারণেই সফলতা অজর্নের পথ অনুসরণ না করে, আমাদের নিজেদের ব্যর্থতাগুলো ঢাকার ঢাল হিসেবে ভাগ্যকে ব্যবহার করা উচিত নয়।
ভৃগুসংহিতার ভবিষ্যৎবাণী করার বিষয়ে শ্রীশ্রীঠাকুর বলেন, কেন ভবিষ্যৎ বাণী করা যাবে না? যদি কারো চুরি করার ঝোঁক থাকার কারণে চুরি করে এবং আমরা যদি দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সর্ম্পকে জানি, তাহলে কি করলে, কি হবে তা বলা সম্ভব। জীবনের গতিপথ তাদেরই ধারণা করা সম্ভব, যাদের জীবন বিভিন্ন জটিলতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। কিন্তু যারা জটিলতার উর্ধ্বে, তাদের ক্ষেত্রে কিছুই সঠিকভাবে ধারণা করা সম্ভব নয়। তাদের জীবন চলার গতি, তাদের সক্রিয় সংযুক্তি ও কর্মোদ্যমের উপর নির্ভর করে। [আলোচনা প্রসঙ্গে, ৭ম খন্ড, ৯/২/১৯৪৬]
শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন, ‘তুমি পৃথিবীতে এমনতর একজন মানুষও দেখাতে পারবেনা, যে ধর্মের পথ অনুসরণ করে সফলতা লাভ করেনি। কিন্তু তুমি যদি ধর্মের নামে অস্তিত্ব ও বৃদ্ধির নীতির বিরোধী কোন কাজ কর, তবে অবশ্যই আমাদের দুঃখ, দূর্ভোগ এবং দারিদ্র্যের অংশীধারী হতে হবে। কারণ, ঘটনার পারম্পর্য্য নির্দিষ্ট এবং বিধির বিধান অলঙ্গনীয়। ’ [আলোচনা প্রসঙ্গে, ১০ম খন্ড, ৩০/১/১৯৪৮]
মাঝে মধ্যে আমরা প্রতিকূল পরিবেশের কারণে দূঃখ ভোগ করি। এটাও আমাদের অতীত কর্মের প্রভাব বা ফল। এই কারণেই সবার জন্য যাজন এমন একটি কর্ম যা প্রত্যহ করা উচিত। এমনকি যদি পরিবেশ প্রতিকূলও হয়, ইষ্টকেন্দ্রিক সহ্যক্ষমতা, পরমত সহিষ্ণুতা, আত্ম-নিয়ন্ত্রন এবং সংগ্রাম যা একজনের সক্ষমতাকে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। যা আমাদের পরোক্ষভাবে আনন্দ দান করে। পাপে নিমজ্জিত হলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এবং পূর্ণজন্মেও তা থেকে যায়। স্মরণ রেখো, প্রকৃতি কখনো হিসাবের প্রতিটি কানাকড়ি বুঝিয়ে দিতে ভূল করবেনা, হতে পারে সেটা ভাল বা খারাপ।
[আলোচনা প্রসঙ্গে, ১০ম খন্ড, ২৪/১/১৯৪৮]
আমাদের অতীত কর্মের প্রভাব আমাদের প্রাজ্ঞতাকে প্রচ্ছন্ন এবং বিশৃঙ্খল অবস্থায় রাখে। এটাকেই বলে অজ্ঞতা। অজ্ঞানতার অন্ধকার কেটে বের হতে আমাদের থাকতে হবে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা, সক্রিয়, একনিষ্ঠ সাড়াপ্রবণ ভক্তি এবং আকুঁতি। (আলোচনা প্রসঙ্গে, ৮ম খন্ড, ১৯/৫/১৯৪৬)
যখন আমরা দেখি একজন সৎ ব্যাক্তি দূর্ভোগ পোহাচ্ছে, এটা তার অতীত ও বর্তমান কর্মের প্রভাব। সৎ ব্যাক্তি বলতে তাদেরকে বুঝায় না, যারা অস্তি-বৃদ্ধির প্রক্রিয়া সম্বন্ধে জানে। বরংচ সেগুলোকে জীবনে বাস্তবায়ন করে। উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, সদাচারের তিনটি অঙ্গ আছে; শারিরীক, মানসিক এবং আধ্যাত্বিক। যদি ব্যক্তিটি শারিরীক সদাচার পালন না করেন, তাহলে তিনি অসুস্থতা, রোগ-ব্যধি থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন না। শারিরীক সদাচার পালন করা সত্ত্বেও, তিনি যদি মানসিক সদাচার পালন না করেন, তাহলেও ধীওে ধীওে রোঘের সৃষ্টি হবে। কারণ, মানসিক সদাচারের অভাবে বিভিন্ন হতাশা ও মানসিক দুশ্চিন্তার ফলে তার øায়ু দূর্বল হয়ে পড়বে। একইভাবে তিনি যদি আধ্যাত্বিক সদাচার থেকে দূরে থাকেন, তিনি অবশ্যই জটিলতার কষাঘাতে জর্জরিত হবেন। আধ্যাত্বিক সদাচার বলতে ইষ্টের (আদর্শ) প্রতি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, সক্রিয়, জীয়ন্ত ও সর্বতোকেন্দ্রিক ভালবাসা ও ভক্তিকে বুঝায়। ফলে, আমাদের অতীত কর্মের প্রভাব যাই হোক না কেন, যদি আমরা আমাদের বর্তমান জীবন চলনাকে পরিশুদ্ধ করতে চেষ্টা করি; এটা আমাদের অতীত প্রভাবকে ভাল বা হিতকর দিকে পরিবর্তিত করে দিতে পারে।
[আলোচনা প্রসঙ্গে, ১০ম খন্ড, ৩০/১/১৯৪৮]
ইষ্টের সাথে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের অতীতের সব জন্মের কর্মফলকে পরিবর্তন করা সম্ভব।
[আলোচনা প্রসঙ্গে, ৮ম খন্ড, ৮/৬/১৯৪৬]
একজন ব্যক্তির বর্তমান চরিত্র বা অবস্থা, তার অতীতের স্বভাব, কথা-বার্তা, ভাবনা-চিন্তা এবং কর্মের ফল ছাড়া আর কিছুই নয়। যদি তার স্বভাব, কথা-বার্তা, ভাবনা-চিন্তা এবং কর্ম পরিবর্তিত হয়, তাহলে তার চরিত্র ও অবস্থাও ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতে শুরু করবে। ভালবাসা - এ পরিবর্তন আনতে সাহায্য করে। হতে পারে সেটা ভাল বা খারাপ এর দিকে। এই কারণেই একজনকে সচেতনভাবে ইষ্টের সাথে ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে, যাতে তার অতীত কর্মের খারাপ ফলগুলো পরম সুখের পথে ধাবিত হতে পারে। ইষ্টের প্রতি ভালবাসা বজায় রাখার জন্য তাকে অবশ্যই দীক্ষা গ্রহন করতে হবে এবং প্রাত্যহিক করণীয় কর্মগুলি সম্পাদন করতে হবে। (আলোচনা প্রসঙ্গে, ১০ম খন্ড, ২৫/১/১৯৪৮)
কারণ, অদৃষ্টের দূর্ভোগ থেকে পরিত্রানের একমাত্র পথ, যার সম্ভাবনা অত্যথিক, তা হলো পরমপিতার সাথে সক্রিয় সংযুক্তি। [আলোচনা প্রসঙ্গে, ১০ম খন্ড, ২১/১/১৯৪৮]
সব গ্রহেরই পৃথিবী ও ব্যক্তির উপর প্রভাব রয়েছে। কিছু সময়ের জন্য, কিছু ব্যক্তির উপর কিছু নির্দিষ্ট গ্রহের প্রসন্ন বা সুপ্রভাব অথবা ক্ষতিকর বা কুপ্রভাব বিরাজ করে। আমাদের সুপ্রভাবের উপকারিতা গ্রহন করা উচিত এবং কুপ্রভাবের মোকাবিলা করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহন করা উচিত। (ইষ্টের প্রতি ভক্তির সাহায্যে) একজন মানুষের মানসিক স্তরকে এমন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব যে গ্রহের ক্ষতিকর প্রভাব তেমন একটা কার্যকর হবে না। ব্যপক মাত্রায় সঠিক রতœ ধারণের মাধ্যমেও (ক্ষতিকর রশ্মিগুলোকে বাধা দিয়ে ) ক্ষতিকর প্রভাবের মোকাবিলা করা যায়।
[আলোচনা প্রসঙ্গে, ১০ম খন্ড, ৯/১/১৯৪৮]
দৈব’ কে অনেক সময় পুরুষাকারের চেয়েও শক্তিশালী বিবেচনা করা হয়। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বলেছেন, ‘ দৈবও পুরুষাকারেরই ফল। মানুষ ভুল ও অজ্ঞানতাবশত একটাকে অন্যটির বিপরীতে দাড় করায়। ’
[আলোচনা প্রসঙ্গে, ১৭ম খন্ড, ৪/৫/১৯৪৯]
এটি সত্য যে, অতীত কর্মও পুরুষাকারেরই সৃষ্টি। ফলে, কেউ পছন্দ করুক বা না করুক, যদি জের করে পুরুষাকারটি গুরুর আদেশ পালনে রত হয়, তাহলেই সুন্দও ভবিষ্যৎ নির্মান করা সম্ভব, দুঃখকে দূর করাও সম্ভব। এই কারণেই, সদ্গুরুকে কখনোই অবজ্ঞা করা উচিত নয়। (আলোচনা প্রসঙ্গে, ৯ম খন্ড, ১০/৮/১৯৪৭) যখনই দেখবে ধীরে ধীরে ইষ্ট আদেশ তোমার মন থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছে এবং অন্য সমস্যাগুলো তোমার ভিতরে রাজত্ব করছে, এটা নিশ্চিত জানবে, ঐ মুহুর্ত্ব থেকে তুমি দুষ্ট গ্রহের কবলে আছো। এই ধরণের পরিস্থিতে, প্রচন্ড শক্তিতে ইষ্টের আদেশ ও বিধানে যুক্ত হও, যা তোমার দূর্গতিকে লাঘব করতে পারবে। (আলোচনা প্রসঙ্গে, ৯ম খন্ড, ৫/৯/১৯৪৭)
Post a Comment