Ads (728x90)

SRI SRI THAKUR VIDEO

Like this page

Recent Posts

World time

Add as a follower to automatically get updated Article. Jaiguru!



জীবন, বহতা নদীর মতই বহমান। আমরা যারা এ সুন্দর পৃথিবীতে জন্মগ্রহন  করেছি, সবাইকেই একদিন এ লীলা সাঙ্গ করতে হবে। বেদনাদায়ক, কষ্টদায়ক মৃত্যু নামক বিষয়টার সাথে সবারই পরিচয় ঘটবে এবং তাকে বরণ করে নিতে হবে। অবচেতন মনেও অনেক সময় একটা প্রশ্ন এসে দাড়ায়, যদি আমাদের চলে যাওয়াটা নিশ্চিতই হয়, তাহলে এই ক্ষণিক সময়ের জন্য এ ধরিত্রীর বুকে আগমনের কারন ও উদ্দেশ্য কি? এই জীবনের লক্ষ্যই বা কি? খুজেছি উত্তর, অনেকেই অনেকভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন, কিন্তু মনপূত উত্তর পাওয়া হয়ে উঠেনি। আমি বলতে চায় না তারা ভুল বলেছেন। আমি বলছি আমার মন তাতে তৃপ্ত হয়নি। অতঃপর শ্রীশ্রীঠাকুরের কথা পড়লাম।

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বলেছেন, বাঁচা ও বাড়া জীবনের লক্ষ্য। আদর্শে আত্মসমর্পনের উপর তা নির্ভর করে। পূর্ণ আত্মসমর্পণ মানুষকে দেবত্ব অর্জনের দিকে নিয়ে যায়। তাই বলা যেতে পারে, দেবত্ব অর্জনই জীবনের লক্ষ্য বা ভগবানের ছয়টি গুণ অর্জনই জীবনের লক্ষ্য। (আলোচনা প্রসঙ্গে, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৬/১২/১৯৪৫)

অনেকে বলে থাকেন জীবনের লক্ষ্য মুক্তি। এ মুক্তির পিছনে ছুটছে অনেকে। কিন্তু গন্তব্য তাদের জানা নেই। শ্রীশ্রীঠাকুরকে যখন জীবনের লক্ষ্য কি মুক্তি, এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি খুব সুন্দর উত্তর দিয়েছিলেন। 
তিনি বৈষ্ণবতত্ত্ব থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছিলেন,  মুক্তির ইচ্ছা প্রাথমিকভাবে ভন্ডামিপূর্ণ। জীবনের লক্ষ্যই হলো তাঁর লীলা উপভোগ করা। মুক্তি সেখানে খুবই নিু স্তরের ভিত্তি। যদি স্মৃতিবাহী চেতনা বজায় থাকে এবং ই্েযষ্টর প্রতি ভক্তিই প্রাথমিক স্বার্থ বা আগ্রহ হয়, তাহলে একলক্ষবার জন্মগ্রহন করাও তেমন গুরুত্ব বহন করে না। কারণ, জীবনের জটিলতা আমাদেও ইপর আধিপত্য বা রাজত্ব করতে পারে না, বরংচ আমরা সবসময় জটিলতার উর্ধ্বে থাকি।  (আলোচনা প্রসঙ্গে, ২০শ খন্ড, ২/১/১৯৫২)

পৃথিবী বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। সফলতা আমরা তখনই পায়, যখন আমরা এুসব সমস্যার মধ্যে থেকেও তাঁকে (আদর্শ বা ইষ্ট) লালন করতে সমর্থ হই। এতসব সমস্যাকে মোকাবিলা করে বেঁচে থাকাটাই জীবন।
(আলোচনা প্রসঙ্গে, ১৭শ খন্ড, ২৬/৫/১৯৪৮)

আমাদেও লক্ষ্য হল শাশ্বত উন্নয়ন। যেহেতু ঈশ্বর অনন্ত, তাই জীবনের উন্নতিও অসীম। কারণ, আমাদের জীবন যাত্রা তাঁকে ঘিরেই। সূতরাং, এ রকম কোন অবস্থা নেই যাকে বলে ‘অবসান’। কিন্তু আমাদেও অহংকার বা অন্য কোন আকর্ষণের কারণে, আমাদের উন্নয়ন যাত্রা শেষ হয়ে যায়। শয়তান সবসময় আমাদের মাঝে
হস্তক্ষেপ করছে। আমরা সবাই চিরজীবী ও ঈশ্বরের আর্শিবাদে অভিষিক্ত হতে চাই। ভিতর ও বাইরের সকল বাধাকে সমন্বয়ের মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের সন্তুষ্টি ও অমৃত সুধা উপভোগ করি। তাই এগুলো অর্জনের জন্য আমাদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে লড়াই করে যেতে হবে। কিন্তু আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে, যুদ্ধ আমাদের মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়, তা হলো দানবের উপহার। আর যে যুদ্ধ জীবনের জন্য তা হলো স্বর্গীয় উপহার। তাই জীবনের জন্য যুদ্ধই হলো ধর্ম।  (আলোচনা প্রসঙ্গে, ৮ম খন্ড, ২/৬/১৯৪৬)

যদি পরম পিতাই আমাদের আশা-আকাঙ্কার বিষয় হন, তাহলে তাঁর ইচ্ছাগুলো আমরা আন্তরিকতার সাথে নিজেদের ইচ্ছা হিসেবেই পালন করব। তিনি পৃথিবীকে আদর্শের ছাঁচে গড়তে চান। সূতরাং, এটা সম্পন্ন করার জন্য যতদিন প্রয়োজন হয়, আমাদের তা পালন করে যেতে হবে। তাঁর জন্য যে আকাঙ্কা, তাই জীবনের পরম আশির্বাদ প্রাপ্তি। এই আকাঙ্কার কোন শেষ নেই এবং তাঁকে প্রাপ্তিরও কোন শেষ নেই। সর্বব্যাপী বিদ্যমান যিনি, তাঁর জন্যঅনন্ত তীব্র আকাঙ্কার যে প্রক্রিয়া, তাতে আমরাও অনন্ত হয়ে যাব।
(আলোচনা প্রসঙ্গে, ২০শ খন্ড, ১১/১০/১৯৫১)

বাইবেলে যীশু বলেছেন,  “ You are to be perfect even as your father in heaven is perfect  (Mathew, 5:48) । শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন, “ Perfection is a relative statement that does not have any full stop  ( পূর্ণতা একটি আপেক্ষিক বিবৃতি, যার কোন শেষ নেই। ) ”
পরম পিতার দয়া আমাদের অনন্ত সম্ভাবনার কক্ষপথে টেনে নিয়ে যায়। কিন্তু অনিশ্চয়তার মধ্যে পূর্ণতার কথা বলে, তাঁর পথে চলার যে আকুঁতি তা ধ্বংস করা এবং একজনকে অফুরন্ত দয়া উপভোগের থেকে বঞ্চিত করা কি ভাল? যে কোন পরিস্থিতিতেই, তাঁকে সেবার যে আকুঁতি তা যেন কখনোই শ্লথ হয়ে না যায়, সে বিষয়ে তিনি আমাদের জোর দিয়ে বলেছেন। কারণ, যদিও আমরা অনেক চেষ্টা করি, তবুও মাঝে মধ্যে আমাদের মধ্যে জড়তা আসে। এই সময় আমাদের অন্ত:স্থ  আকাঙ্কা ও আকুঁতিকে প্রজ্জ্বলিত করে আমাদের বড় ধরনের লাফ দেওয়া উচিত। (আলোচনা প্রসঙ্গে, ৮ম খন্ড, ২/৬/১৯৪৬)
আমাদেও জীবনের লক্ষ্য কি বেঁচে থাকা? এমনই এক প্রশ্নের উত্তরে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বলেছেন, “ Evolution is the aim (বিবর্তনই লক্ষ্য )”। প্রকাশিত হওয়ার জন্য, আমাদের উৎসের দিকে অগ্রসর হতে হবে। উৎস, যেখান থেকে আমাদের সূত্রপাত ঘটেছিল। এর জন্য সরল প্রক্রিয়া হলো আমরা যা পেতে চাই, তার প্রতি অনুরক্ত হওয়া।  সাধারণত: আমরা নিজের জন্যই বাঁচি। এটি যেন সম্ভব হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য, আমাদের, সেইসব কাজ চালিয়ে যাওয়া উচিত, যা আমাদের অস্তিত্বকে মূর্ত করে তোলে।  প্রক্রিয়াটি আমাদের  prime factor  বা ব্রহ্মের দিকে নিয়ে যায় (ব্রহ্মত্ব অর্জনের দিকে)। যা সন্ন্যাসী জীবন বা পারিবারিক জীবনের ভিতর দিয়ে লাভ করা যায়। একটি প্রশ্নের উত্তওে শ্রীশ্রীঠাকুর বলেন, “পারিবারিক মানসিকতার মধ্যে যে সাধু বা ধার্মিক মানসিকতা নেই তা নয়। ববংচ সাধু মানসিকতা বিকশিত হয় না, যদি আমরা পারিবারিক জীবনকে উপেক্ষা করি। ” (আলোচনা প্রসঙ্গে, ২০শ খন্ড, ২৬/১২/১৯৫০)

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বিচ্ছিন্ন বা পৃথক সাধনার পরামর্শ দেননি।
তিনি বলেছেন, “ইষ্টের সাহচর্য্য, পৃথক সাধনা, বৃহত্তর পরিবেশের সেবা এবং পারিবারিক সঙ্গ - এই চারটি বিষয়ই সমান্তরালে অনুশীলন করা উচিত।”  (আলোচনা প্রসঙ্গে, ২০শ খন্ড, ২৪/৪/১৯৫১)

আমরা যেমন একজন পিতার মধ্যে পিতৃত্ব দেখতে পায়, তেমনই আমরা ইষ্টের মাধ্যমে ঈশ্বরকে লাভ করি। আমাদের লক্ষ্য ঈশ্বর। একমাত্র সম্পদ যা আমাদের আছে তা হলো আদর্শকেন্দ্রিক অনুরক্তি। আমরা তাঁকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য যা করার প্রয়োজন তাই করব - হয়ত তা বয়ে আনতে পারে অশেষ দু:খ, সুখ অথবা অনন্ত জীবন। (আলোচনা প্রসঙ্গে, ২০শ খন্ড, ৫/৫/১৯৫১)

Post a Comment