Ads (728x90)

SRI SRI THAKUR VIDEO

Like this page

Recent Posts

World time

Add as a follower to automatically get updated Article. Jaiguru!

শিক্ষা শব্দটি দুটি অর্থে ব্যবহৃত হয়-প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং মনুষ্যত্বের পূর্ণ বিকাশ লাভের শিক্ষা।যুগপুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র শিক্ষার এই দুটি অর্থকে দুটি পৃথক শব্দের দ্বারা চিহ্নিত করেছেন।প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে তিনি বিদ্যা অর্থাৎ যাঁরা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করে ডিগ্রিলাভ করেছেন,তাঁরা বিদ্বান, আর যাঁরা মনুষ্যত্ব অর্জনের বিধিগুলো হাতে কলমে করার ভেতর দিয়ে জীবনে রূপায়িত করতে পেরেছেন,তাঁরাই হচ্ছেন শিক্ষিত।তাই বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় যদি কোন ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিলাভ করে বিদ্বান হলে তিনি যে শিক্ষিত হবেনই-এমন কোন নিশ্চয়তা নেই।

৩১শে মার্চ ২০১১, ‘আনন্দবাজার’ পত্রিকায় সম্পাদকীয় কলামে ‘পরীক্ষা সর্বস্ব’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে ‘কে শিক্ষিত? গণমন বলিবে, পরীক্ষায় নম্বর বেশী পাইয়াছে যে, সে।পরীক্ষায় সিদ্ধিলাব গুরুত্বপূর্ণ হইতেই পারে,কিন্তু তাহাই যে শিক্ষার একমাত্র উদ্দেশ্য,এই যুক্তিটি মানিয়া লওয়া কঠিন।অথচ কার্যক্ষেত্রে এই দেশের শিক্ষণ পদ্ধতি সেই সূত্রটিই মানিয়া চলে।ফলে শিক্ষার উদ্দেশ্য হইয়া উঠে যেনতেন প্রকারের মস্তিষ্কের ভেতরে কিছু তথ্য ঠাসিয়া রাখিবার বন্দোবস্ত করা।পরীক্ষা কেন্দ্রে বসিয়া যে যত মসৃণভাবে সেই তথ্যরাজি স্মরণ করিতে পারিবেন, মানিতে হইবে, লেখাপড়া তাহারই হইয়াছে।ফলে গাড়ি-ঘোড়া ইত্যাদি যাহা কিছু পার্থিব সুখ ও উন্নতির সূচক,সেই সকল বস্তু তাহারই করায়ত্ব হইবে।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ন্যায় কিছু ব্যক্তিত্ব এই প্রচলিত পন্থার বাইরে গিয়া শিক্ষার স্বরূপ লইয়া অন্য রকম পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়াস পাইয়াছিলেন।সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর বিজ্ঞান বিষয়ক মুখ্য উপদেষ্টা সি.এন.আর.রাও মহাশয় একটি পত্রে সেই বিতর্কটি ফের গণপরিসরে আনিয়া দিয়াছেন।প্রধানমন্ত্রীকে লিখিত সেই পত্রের সারার্থটি সরল-এই দেশে সুনির্মিত পরীক্ষা পদ্ধতি আছে, কোনও প্রকৃত শিক্ষা পদ্ধতি নাই।

শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন,-
“লেখাপড়ায় দড় হলেই
শিক্ষা তারে কয় না,
অভ্যাস, ব্যবহার,সহজ জ্ঞান
না হলে শিক্ষা হয় না”

শুধু ভাষায় জানা আছে, কিন্তু করায় জানা নেই, এমনতর যে বিদ্যা, চাকরি করে অর্থ উপার্জন ছাড়া প্রকৃতপক্ষে তার কোনও সার্থকতা আছে বলে মনে হয় না।বেশ কিছুদিন আগে ‘আনন্দবাজার’ পত্রিকায় এক অল্প পরিচিত কবির একটি ছড়া দেখেছিলাম।সাল, তারিখ, কবির নাম স্মৃতি থেকে মুছে গেলেও ছড়াটি স্থায়ী আসন নিয়েছে-

”বাবার ইচ্ছে ইঞ্জিনীয়ার,
মায়ের ইচ্ছে ডাক্তারি
দাদুর ইচ্ছে উকীল হবো
জেঠুর ইচ্ছে মাষ্টারি
ইচ্ছেগুলো কেমন জানি
ভেবেই আমি থ
কেউতো আমায় বললো না তো
খোকা ‘মানুষ’ হ….।”

আমরা আমাদের আপনজনদের ইঞ্জিনীয়ার, ডাক্তার, উকিল নিদেনপক্ষে শিক্ষক করার জন্য শুধুমাত্র বিদ্বান করতে চাইছি,মনুষ্যত্ব অর্জনের শিক্ষায় শিক্ষিত করে প্রথমে ‘মানুষ’ করতে চাইছি না।শুধু বই পড়া আর নোট মুখস্থ করা বিদ্যা জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।যেমন আমি হয়তো শিক্ষক হিসেবে শ্রেণীকক্ষে ‘বিদ্যাসাগরের মাতৃভক্তি’ প্রবন্ধটি পড়ালাম।আবেগের সঙ্গে নানা দৃষ্টান্ত সহযোগে বক্তৃতা দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রবন্ধটি বোধগম্য করে দিলাম এবং এই প্রবন্ধ থেকে সম্ভাব্য সব প্রশ্নের উত্তর সুললিত ভাষায় লিখিয়েও দিলাম।ছাত্ররাও পরীক্ষায় ভাল নাম্বার পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হলো।এই ছাত্ররাই একদিন আমার বাড়ির পাশ দিয়ে বিদ্যালয়ে যাবার পথে দেখলো যে মায়ের সাথ আমার তুমুল বাকবিতন্ডা চলছে এবং শেষে মা চোখে জল নিয়ে বাড়ী চলে যাচ্ছেন।ছাত্ররা এই দেখে নিশ্চিত হ’ল যে ‘‘বিদ্যাসাগরের মাতৃভক্তি’ পরীক্ষায় ভালো নাম্বার পাওয়ার জন্য প্রয়োজন,জীবনে পরিপালনের জন্য প্রয়োজন নেই।শ্রীশ্রীঠাকুর সবাইকে সাবধান করে বললেন,

“মুখে জানে ব্যবহারে নাই,
সেই শিক্ষা মুখে ছাই।”
“শিক্ষা দিবে কি?
আচারে না থাকলে শিক্ষা
কথার ঝিকিমিকি।”

বর্তমান দিনের এই সমস্যার সমাধান শ্রীশ্রীঠাকুর ‘শিক্ষা বিধায়না’ গ্রন্থে দিয়েছেন।সৎসঙ্গের প্রধান
আচার্যদেব শ্রীশ্রীবড়দা এইগ্রন্থের প্রথম ভূমিকার প্রথম অংশে বলেছেন-“শিক্ষার প্রধান কথা মানুষ গড়া”। এই মানুষ গড়ার কলাকৌশলই শ্রীশ্রীঠাকুর “‘শিক্ষা বিধায়না”তে বিবৃত করেছেন।যুগে যুগে শিক্ষার প্রধান সমস্যা হল-অধিকাংশ শিক্ষিত মানুষ মস্তিষ্ক ও বুদ্ধি বিচার দিয়ে যা ভাল বলে বুঝে ও সত্য বলে স্বীকার করে,হৃদয়াবেগ ও ইচ্ছাশশক্তি দিয়ে বাস্তব জীবন চলনার ক্ষেত্রে তা কমই পরিপালন করে থাকে। ভাবা, বলা ও করার এই অসঙ্গতি ও ব্যবধানই বিংশ শতাব্দীর জ্ঞান-বিজ্ঞান-শিক্ষা-সংস্কৃতি-সমৃদ্ধ সভ্য সমাজের এক বিকট বিড়ন্বনা-বিশেষ।গোড়ার এই গলদই ব্যষ্টি জীবন ও বিশ্বজীবন পর্যন্ত সমাজবদ্ধ মানবজীবনের প্রতিটি স্তরকে খানবডত, বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত করে দ্বন্দ্ব, বিক্ষোভ ও অশান্তির কবলে নিক্ষেপ করছে।জীবন যন্ত্রনা কাতর আর্ত মানব তাই পথ হাতড়াচ্ছে-কঃ পন্থাঃ?”

প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যে ঘুমিয়ে আছে অফুরন্ত শক্তি, অনন্ত সম্ভাবনা।সেই শক্তিকে জাগিয়ে তুলা,সেই শক্তিকে পূর্ণ বিকশিত করাতেই তার আনন্দ।কিন্তু য়ে সে গোপন ভান্ডারের সন্ধান পেল না,যার সম্ভাবনার কুঁড়ি বিকশিত হওয়ার আগেই শুকিয়ে গেল, একটা কৃত্রিম শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে পড়ে আজীবন বাহ্যিক জ্ঞানের বোঁঝার ভার বহন করে তার জীবনটা হয়ে উঠে মরুময়, হতাশাগ্রস্ত, দিশাহারা।আমারা আমাদের অক্ষমতাকে বাক্-চাতুর্য্য দিয়ে,হতাশাকে পোষাকের চাকচিক্য দিয়ে,মনের আবিলতাকে প্রসাধনের সৌরভ দিয়ে ঢাকা দেওয়ার ব্যর্থ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি।কিন্তু এইসব ব্যর্থ ‘ঘা’ উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে বাড়তে বাড়তে ক্যানসারে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

“এই দূরুহ সমস্যার নিরাকরণ কল্পে শ্রীশ্রীঠাকুর আচার্যা।য়নুরাগবিধৃত, দীক্ষাসমন্বিত, সুকেন্দ্রিক, সর্বতোমুখী শিক্ষা প্রবর্তন করতে চেয়েছেন।আচার্য্য হলেন তিনি,যিনি স্বীয় আচার্য্য-তে শ্রদ্ধানিবদ্ধ হয়ে আচরণের ভিতর দিয়ে সুসঙ্গত জ্ঞানে অধিষ্টিত হয়েছেন।এক-কথায় তিনি হলেন জ্ঞানমূর্ত্তি।তাঁর প্রতি ভাবভক্তি-ভালবাসা জাগলে জীবনের রুদ্ধদ্বার অর্গলমুক্ত হয়ে যায়,সুপ্ত শক্তি ও সম্ভাবনা জাগ্রত ও স্বতঃস্রোতা হয়ে তরঙ্গ গর্জনে অনন্ত বিকাশের অভিসারে ছোটে।জীবনীয় গুণপনা অতন্দ্র সক্রিয়তায় সার্থকতায় মেতে উঠে-অস্খলিত নিষ্ঠা-নিপুন সেবা তাৎপর্যে।তথাকথিত উচ্চাকাঙ্কা বা হীনম্মন্য গর্বেপ্সা বিদ্যার্থীর জীবন জঠরে সেই শ্রদ্ধামধুর জারকরস সৃষ্টি করতে পারে না,যা শিক্ষাকে আত্মীকৃত করে সত্তাসঙ্গত করে তুলে , বহুমুখী জ্ঞান, গুণ, প্রতিভা, শক্তি ও অভিজ্ঞতাকে অখন্ড একীকরণে সুসংহত ও সুবিন্যস্ত করে মানুষের পরাক্রমী ব্যক্তিসম্পন্ন অথচ বিণীত ও নিরভিমান করে তুলে।প্রকৃত শিক্ষা বৈশিষ্ট্যে সুপ্রতিষ্টিত হয়ে বিশ্বতোমুখী বিস্তারের পথে এগিয়ে চলে।”

শুধু বিদ্বান হলেই হবে না,প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে জ্ঞানার্জন করতে হবে।কারণ অজ্ঞানতা মানুষকে উদ্বিগনন করে,জ্ঞান মানুষকে শান্ত করে।না জেনে শিশুও যদি আগুনে হাত দেয়,আগুন তাকেও ক্ষমা করে না।তাই শিক্ষার প্রথম কথাটি দিয়ে শেষ করছি—

“দীক্ষা নিয়ে শিক্ষা ধরিস্
আচার্য্ককে করে সার
আচরণী বোধ চয়নে
জ্ঞানের সাগর হ’না পার।”

Post a Comment