Ads (728x90)

SRI SRI THAKUR VIDEO

Like this page

Recent Posts

World time

Add as a follower to automatically get updated Article. Jaiguru!

সৎসঙ্গের আকাশ থেকে একটি বিরাট উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক অপসৃত হয়ে গেল। পার্থিব মায়ার বন্ধন ছিন্ন করে স্বলোকে মহাপ্রস্থান করলেন পরমপূজ্যপাদ আচার্য্যদেব শ্রীশ্রী বড়দা। গত ৫ ই আগষ্ট (১৯৯৪) শুক্রবার ঠিক সন্ধ্যা প্রার্থনা (ছয়টা নয় মিনিটে) শুরু হবার ক্ষণে পুরীধামে তিনি তাঁর নশ্বর দেহ পরিত্যাগ করেছেন। সৎসঙ্গের মাথার উপর যে বিশাল ছত্রছায়াটি ছিল,ঐ মুহূর্ত্ত থেকে তা' আর রইল না।
সৎসঙ্গের প্রাণপুরুষ শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকুলচন্দ্র তাঁর মহাপ্রয়ানের অনেক আগে থেকেই বেশ কিছু লোকের কাছে ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন যে সৎসঙ্গের ভবিষ্যৎ পরিচালনার ভার তিনি জেষ্ঠ্য পুত্রের উপর অর্পন করবেন এবং
তা তিনি বাস্তবে করেছেনও। আর সেই সুযোগ্য জ্যেষ্ঠ পুত্র, তাঁর আদরের 'বড় খোকা', আমাদের সকলের বড়দা ইষ্টপ্রদত্ত ঐ দায়িত্বভার আজীবন বহন করে চলেছেন।
সর্ব্বদর্শী শ্রীশ্রীঠাকুর জানতেন যে তাঁর জেষ্ঠ্য পুত্রই তাঁর সৃষ্ট এই বিশাল প্রতিষ্ঠান ধ'রে রাখতে এবং এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম। তাই বোধ হয় একদিন তিনি তাঁর এই দীন সন্তানকে বললেন, "তুই শাস্ত্র থেকে একটা কথা আমাকে বের করে দিতে পারিস যে বড় ছেলেকে ব্রক্ষ্ম জ্ঞান দেওয়া যায়?" শুনে একটু চিন্তিত হলাম। ইতিপূর্ব্বে তাঁর অনেক কথার শাস্ত্রীয় সমর্থন বের করার জন্য বহু বই ঘাটতে হয়েছে, তার মধ্যে কোথাও এই ধরনের কথা দেখেছি ব'লে মনে পড়ছে না। বললাম 'দেখি'। শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, 'তুই খুঁজে দ্যাখ। আমি শুনেছি এরকম কথা আছে'। তারপর থেকে বহু বইয়ের পাতা ওলটানো চলল। নাঃ, কোথাও কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। একদিন বসে উপনিষদগুলি দেখে চলেছি, হঠাৎ ছান্দ্যোগ্য উপনিষদের একটা পাতায় (৫/১/১)# এসে চমকে উঠলাম। ঠিক ঐ রকম কথা-ঠাকুর যা চেয়েছেন। তাঁকে এসে বলতে খুব খুশি হলেন তিনি। তাঁর কি এ কথাটা অজানা ছিল? তা নয়। জগতে জানাবার জন্য যেন আমাকে দিয়ে দেখিয়ে রাখলেন যে কেন তিনি তাঁর বড় ছেলের উপর এই সঙ্ঘের ভবিষ্যৎ দায়িত্ব অর্পন করতে যাচ্ছেন।
কথা প্রসঙ্গে একদিন স্পষ্ট ভাষায় বললেন শ্রীশ্রীঠাকুর,'বড় খোকা শুধু আমার Son by birth (রক্তজাত সন্তান) নয় Son by cultureও (কৃষ্টিজাত সন্তান) বটে।' কারণ বিশ্বপিতার ভাবাদর্শ বহন করে নিয়ে চলার ক্ষমতা কেবল রক্তজাত সন্ততি হ'লেই থাকে না, তার জন্য প্রয়োজন তাঁর কৃষ্টিতে, তাঁর সংস্কারে পরিস্নাত ও পরিভৃত হওয়া। সেই সাধন-সিদ্ধ ব্যাক্তিত্ব শ্রীশ্রীঠাকুর পূজ্যপাদ বড়দার মধ্যে দেখেছিলেন বলেই দায়িত্ব তাঁকে দিয়েছিলেন। মানুষের মধ্যে যাতে কোনরকম দ্বিধাদ্বন্দ্ব না আসে সে জন্য দয়াল ঠাকুর আরো বলেছিলেন, 'বড় খোকা হল God-gifted representative of paramopita (পরমপিতার ঈশ্বর প্রদত্ত প্রতিনিধি)। এতবড় নিশ্চয়াত্মক অভিধা তিনি আর কারো সম্বন্ধে প্রয়োগ করেননি।
ইং ১৯৪৮ সালের অক্টোবর মাসে আমার প্রথম ঠাকুর দর্শন হয়। ঠাকুর প্রনাম করার পর আশ্রমের ভিতরে ঘুরে ঘুরে দেখছি। হঠাৎ দেখি এক অতি সুপুরুষ ব্যক্তি আরো কয়েকটি লোক সঙ্গে নিয়ে আশ্রম প্রাঙ্গন অতিক্রম করছেন। অত লোকের মধ্যেও এই সুন্দর মানুষটির দিকে চোখ স্বভাবতই আটকে গেল। পাশের একজন প্রবীণ সৎসঙ্গী আমার কানে কানে বলে দিলেন, 'ইনি বড়দা'।
আগে বড়দার কথা শোনা ছিল, কিন্তু তিনি এতো সুঠাম দেহের অধিকারী তা' জানা ছিল না। সেবার যে কদিন আশ্রমে ছিলাম আরো দেখেছি বড়দাকে, দেখে মুগ্ধ হয়েছি। কি দীর্ঘায়ত চক্ষু, কি ভরাট মেঘধ্বনিবৎ কন্ঠস্বর, চলার কি ম্যাজেস্টিক ভঙ্গী! দেখতাম দুর থেকে, কাছে যেয়ে কথা বলার সাহস হত না।
পরে আরো কয়েকবার আশ্রমে এসেছি। দর্শন ও প্রণাম করেছি।
ইং ১৯৫২ সাল থেকে শ্রীশ্রীঠাকুরের আদেশে আশ্রমে শ্রীপ্রফুল্ল কুমার দাসের সহকর্ম্মী হিসাবে স্থায়ীভাবে আমার থাকা শুরু হয়। তখন পূজ্যপাদ বড়দাকে আরো নিকট থেকে দেখার ও কথা শোনার সৌভাগ্য হয়েছে। যত দেখেছি, তত এই ব্যক্তিত্ব্যের মহনীয়তায় আকৃষ্ট হয়েছি। তাঁর সুচারু কর্ম্মদক্ষতা, পরিস্থিতি-নিয়ন্ত্রন ক্ষমতা, উপস্থিতবুদ্ধি, চৌকস দৃষ্টি, দুর্জ্জয় সাহস, বীর্য্যবত্তা, জ্ঞান বুভুক্ষা, লোকদরদ, রঙ্গপ্রিয়তা, বন্ধুবাৎসল্য, কৌশলী চলন, সর্ব্বপরি তাঁর সাধনা শক্তি, প্রভৃতি গুণরাজির কথা বিশদভাবে বলতে গেলে এই নিবন্ধের আকার বিপুলায়তন হয়ে যাবে।


পরম পুজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা


লৌকিকভাবে শ্রীশ্রীঠাকুর ছিলেন পরমপূজ্যপাদ বড়দার পিতা। বড়দা তাঁকে 'বাবা' বলে ডাকলেও অন্তরে ইষ্ট বলেই জানতেন। সেইজন্য শ্রীশ্রীঠাকুরের অসাক্ষাতে তাঁর সম্বন্ধে উল্লেখ করতে হলে 'ঠাকুর' ব'লেই বলতেন, তখন আর 'বাবা' বলতেন না। আর,ঠাকুরের মহাপ্রয়াণের পর থেকে তাঁর সম্বন্ধে বলতে হলে কখনও 'ঠাকুর' ছাড়া 'বাবা' বলে বলেননি।ইষ্ট এক এবং অদ্বিতীয় এই বোধে তিনি এমনি জাগ্রত ছিলেন যে ঠাকুরের সমপর্য্যয়ের কেউ তাঁর কাছে ছিল না। যদি কেউ কখনও ওরকম চিন্তা করত, তাতে বড়দা গুরুতর অসন্তুষ্ট ও ব্যথিত হতেন। জেষ্ঠ্য পুত্রের এমন দৃঢ় প্রত্যয়ী মনোভাবের কথা শ্রীশ্রীঠাকুরের অবগতির মধ্যে ছিল। তাই তিনি সর্ব্বতোভাবে নির্ভর করেছিলেন। বাংলা ১৩৬২ সাল থেকে পূজ্যপাদ বড়দার প্রতি জন্মতিথি উপলক্ষে শ্রীশ্রীঠাকুর একটি করে আশীর্ব্বাণী দিয়েছেন। আশীর্ব্বাণীগুলির মধ্যে বড়দার প্রতি ঠাকুরের আশা ও স্বস্তিবচন ঠাকুর যেন ঢেলে দিয়েছেন, সাথে সাথে চলার পথের দিকনির্দ্দেশও দিয়ে গেছেন। আশীর্ব্বাণীগুলি পর পর প'ড়ে গেলেই এ কথার যথার্থ্য প্রমানিত হবে।
ব্রক্ষ্মজ্ঞান মানে শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন বিস্তৃতির জ্ঞান। এই বিস্তৃতির বা দূরপ্রসারী জ্ঞান বড়দার কতখানি ছিল তা' অনেকেই কিছু কিছু জানেন। এখানে আমি আমার জীবনের একটি ছোট্ট ঘটনা উল্লেখ করছি।
শ্রীশ্রীঠাকুরের মহাপ্রয়াণের বছর আটেক পর একবার পরমপূজ্যপাদ বড়দার অনুমতি নিয়ে পুরুলিয়া শহরে যাই। সেখানে কিছু দীক্ষার কাজ ছিল। আমি আশ্রম থেকে রওনা হই শুক্রবারে। রওনা হবার পুর্ব্বে অনুমতি দিয়ে বড়দা বললেন "মঙ্গলবারের মধ্যে চলে আসবি।" সাধারন কথা। তবু ঐ আদেশ মনে রেখে পুরুলিয়া গিয়ে অধ্যাপক মনোরঞ্জন মহান্তিদার বাড়ীতে উঠলাম এবং কাজকর্ম্ম করতে থাকলাম। সোমবার দুপুরবেলায় ঐ বাড়ীতে সৎসঙ্গের দুই কর্ম্মী দুলাল মজুমদার এবং ঁ অন্নদা হালদার গিয়ে উপস্থিত হন। তাঁরা উভয়েই বলেন," আমরা দেওঘর থেকে আসছি। বড়দা তোমাকে মঙ্গলবারের মধ্যে দেওঘরে ফিরে যেতে বলেছেন।" আমার ইচ্ছা ছিল আর একটা দিন কাটিয়ে আর কিছু লোকের সঙ্গে দেখা করে বুধবারে রওনা হব। ভেবেওছিলাম, একটা দিন তো; মঙ্গলবারের জায়গায় বুধবার করলে কি এমন ক্ষতি হবে। আমি তো ঠাকুরের কাজ নিয়েই আছি। কিন্তু এই খবর পাওয়ার পর আর দেরী না করে মঙ্গলবারেই টাটা-পাটনা এক্সপ্রেসে পুরুলিয়া থেকে দেওঘরে চলে আসি। বেশী দেরী হল না। বুধবার রাতেই বুঝতে পারলাম পরমপূজ্যপাদ বড়দা কেন অত জোরের সাথে আমাকে মঙ্গলবারের মধ্যেই ফিরতে বলেছিলেন।

বুধবার বিকাল থেকেই আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে যায় এবং তুমুল ঝড়বৃষ্টি সুরু হয়। অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেল। পরে খবর পাওয়া গিয়েছিল, বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে এই ঝড়বৃষ্টির দাপট শুরু হয়েছিল। ঐ রাতে যে টাটা-পাটনা ট্রেনটি আসছিল, তা' মুষলধারে বৃষ্টি ও তৎষহ প্রবল ঝড়ের মুখে পড়ে মধুপুর স্টেশনের কাছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়।(তারিখটা এখন ঠিক মনে পড়ছে না)। কয়েকখানা বগী লাইনচ্যুত হয়। অনেক মানুষ মারা যায়, আহত হয় তার থেকে অনেক বেশী লোক। বুধবারে আমার ঐ ট্রেনটিতেই আসার কথা ছিল। এলে কী দুর্ভোগের কবলে পড়তাম তা' একমাত্র পরমপিতাই জানেন। পরমপূজ্যপাদ বড়দার সাধনসিদ্ধ দুরদর্শিতায় আমি ঐ নিশ্চিত দুর্ব্বিপাক থেকে রক্ষা পেলাম। এই দুর্ঘটনাটি তাঁর দর্শনে এতো স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছিল যে আ মাকে শুধু ফিরে আসার আদেশ দিয়েই ক্ষান্ত হননি, আবার দুজন কর্ম্মীর মারফৎ সংবাদ পাঠিয়েছেন যাতে আমি তাঁর নির্দ্দেশ ভুলে না যাই।
একবার বিজয়া দশমীতে সন্ধ্যাবেলায় শ্রীশ্রীঠাকুর প্রণাম করতে এসেছেন বিহারের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী পন্ডিত বিনোদানন্দ ঝাঁ। শ্রীশ্রীঠাকুরের সান্নিধ্যে কিছুক্ষণ কাটাবার পরে বিনদাবাবু বললেন," এবার একটু বড়দার কাছে যাই।" বিনোদাবাবুর মুখে 'বড়দা' উচ্চারন শুনে শ্রীশ্রীঠাকুর প্রীত হয়ে বলে উঠলেন-'ঐ দ্যাখ বিনোদাবাবুও বড়দা বলছে। বড়দার তোমাদের একেবারে Universal (বিশ্বের) বড়দা হ'য়ে গেল।'
বড়দা আজ সশরীরে অনুপস্থিত। সবাইকে শোকসাগরে ভাসিয়ে তিনি অমরধামে প্রয়াণ করেছেন।নশ্বর দেহে না থাকলেও তিনি সবার অন্তরে Universal (বিশ্বের) 'বড়দা' হয়েই বেঁচে আছেন এবং চিরকাল থাকবেন।
পরমপূজ্যপাদ বড়দা আজ আমাদের মধ্যে নেই। কিন্তু তিনি রেখে গেছেন তাঁর সন্তান-সন্ততি,প্রস্তুত করে গেছেন তাঁর সুযোগ্য জেষ্ঠ্য পুত্র তাঁর পরম আদরের বাবুকে। যিনি সৎসঙ্গ জগতের পরমপূজ্যপাদ 'বড়দাদা' বলেই পরিচিত। পরমদয়াল শ্রীশ্রীঠাকুরের চরণে আমাদের আকুল প্রার্থনা-
'তোমার পতাকা যারে দাও, তারে বহিবারে দাও শকতি।'
★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★
আলোচনা(ভাদ্র-১৪০১)

Post a Comment

  1. Tomer syaber mohot proyas aratya chahina mukti. Khub khub valo laglo. "Isto guru purushotom Protik guru bongshodhor Ryath sorir a supto thyakya Jyanto tini nirontor "

    ReplyDelete
  2. উনি আমাকে নতুন জীবন দিয়ে, এখনো রক্ষা করে চলেছেন, আমার দশটি বই আছে, একটি পিএইচডি থিসিস , সব বই গুলি ই ওনার প্রেরণায় রচিত, কিছু ভুল প্রচার হচ্ছে, দেবীদা কী ফোন করবেন? 8016333749

    ReplyDelete
  3. আমি unknown নই, dr. অরূপ হালদার, দেবীদা আমাকে চেনেন !

    ReplyDelete