১
ক্ষুব্ধ-সম্বেগে অব্যক্তের বুকে দ্রুত ব্যঞ্জনায় বিঘূর্ণিত
সত্তার উচ্ছৃষ্ট-বিচ্ছুরণ-সংবিদ্ধ সংঘাতকম্পিত ছন্দে ভাসমান শক্তি-শরীরী
প্রতিধ্বনিই আদিবাক্---সৃষ্টির প্রথম প্রগতি !
২
কম্পিত-কল,সৃজন-উৎস সেই স্ফুটবাক্ বিজৃম্ভিত-সম্বেগে,আত্ম
বিচ্ছুরণে,সহসম্পদে,ভাস-বিস্ফোরণে,বহুধা-প্রকটে পর্য্যবসিত হইয়াও তাহাই
থাকিলেন---অব্যক্তেরই বুকে ! --- কিন্তু সে স্পন্দনে ব্যক্ত- বিমুখ সাড়া
দিল না !
৩
স্পন্দনপ্লুত, বিপ্লব-বহ্নি, শক্তি-সমুদ্র, ঘোষ-কল,জাতবাক্ প্রকট-প্রাচুর্য্য হইয়াও তদবস্থ !-- তিনিই ঈশ্বর, আদিবাক্--পরমদৈবত !
৪
অব্যক্তে বিরাগ-সম্বেগজ-বীচিস্পন্দিতসত্তা সংক্ষুধিত-আবেগ
কম্পনে সিসৃক্ষু হইয়া উদ্বুদ্ধ-সৃজন-স্রোতে বিক্ষুব্ধ সংঘাতে ব্যাবর্ত্ত
বৃত্তাভাসে চেতনোদ্দীপ্ততায় অসম-বহুল-প্রকটপরায়ণ হইলেন--- আর তিনি
প্রোদিতবাক্ !---
৫
বিচ্ছুরিত সত্তার বিশ্লিষ্ট-বিভেদান্তরালে
বিক্ষুব্ধ-ব্যষ্টিতে বিভিন্ন-বোধ উপ্ত করিয়া- অনুস্যূত-আকর্ষণ-উপেক্ষায়
সমত্ব হরণ করিল যে-- সে-ই অব্যক্ত !
চলার সাথী
তুমি জগতে প্লাবনের মত ঢলিয়া পড়--সেবা, উদ্যম, জীবন ও
বৃদ্ধিকে লইয়া ব্যাষ্টি ও সমষ্টিতে তোমার আদর্শকে প্রতিষ্ঠা করিয়া--জয়, যশ ও
গৌরবের সহিত;--আর, নারী যদি চায়-ই তোমাকে তবে ছুটুক সে তার
মঙ্গলশঙ্খনিনাদে সব-প্রাণ মুখরিত করিয়া তোমার দিকে,--কিন্তু সাবধান ! ---
চেও না তুমি তা' !
কৃতকার্য্যতায় ক্রমাগতি
তুমি জান বা না-জান, পার বা না-পার--তোমার চেষ্টার ক্রমাগতি
অটুট,অব্যাহত থাক্-- সিদ্ধির পথ খুঁজিয়া লও--কৃতার্থ হইবে, কৃতকার্য্যতা
আসিবে; আর, তোমার প্রতিষ্ঠা তোমার আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করিবেই-- নিশ্চয়
জানিও !
ভালবাসায় জ্ঞান
মানসিক স্বস্থতা এবংভালবাসা হইতেই জ্ঞান ও শুভদর্শিতার
আবির্ভাব হয় --- কিন্তু দ্বন্দ্ব,অবিশ্বাস ও বিতৃষ্ণা হইতে অজ্ঞানতা ও
নিরাশা প্রবণতারই সৃষ্টি হইয়া থাকে !
চরিত্র-নির্ণয়ে
তোমার চলা ও বলা-ই ব'লে দেয়--তুমি কেমন মানুষ, কী চাও -- আর, কী-ই বা পেতে পার!
সিদ্ধিলাভে
করা, লেগে থাকা, দেখা ও অনুধাবন করা -- এই কয়টিই বোধ, বিজ্ঞান, দক্ষতা ও সিদ্ধিকে প্রতিষ্ঠা করে !
পারায় 'হাঁ'
পারা আর না-পারার মধ্যে ততটুকু তফাৎ যতটুকু 'হাঁ' আর 'না' র
ভিতর; -- পারাতে যে 'না' কে ডেকে আনে না, যার পারা সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন নেই
অথচ করাকে অবলম্বন করে, -- করার আনন্দে কোন-কিছুতে থেমে যায় না, সে পারে !
পারায় 'না'
আর, পারার চিন্তাকে যে 'না' কে ডেকে এনে ক'ষে নিতে চায়- 'না'
যার এত বিশ্বস্ত !-- 'না' কে বাদ দিয়ে যার কোন ভাব, কোন চিন্তা, কোন
কর্ম্ম-চালনাই হ'য়ে ওঠে না, পারা বা করার সাজ-সরঞ্জাম সে যতই করুক না কেন,
তার সবটাই 'না' টাকে আলিঙ্গন ক'রে অবশ হ'য়ে ঘুমিয়ে পড়ে !
'না' -- এর কুটুম্বিতায়
'না' যাহার সহধর্ম্মিণী, 'হয়-না' যাহার শ্যালক, সে যদি অভিনন্দিত হয় -- দুর্দ্দশার সিংহাসন অটল থাকিবে সন্দেহ নাই !
কর্ম্মপটুতায় অনুপ্রাণতা
অনুপ্রাণতা যেখানে যত সহজ ও তরতরে--কর্ম্মপটুতা সেখানে তত স্বাভাবিক ও উদ্দাম !
সুখ
যাহাতে তোমার being-টাকে (সত্তাকে) সজীব, উন্নত ও আনন্দিত
করিয়া পারিপার্শ্বিকে চারাইয়া সবাইকে উৎফুল্ল করিয়া তোলে--সুখ যদি বলিতে
হয়--তাহাকেই বলা যাইতে পারে !
আলস্যে দারিদ্র্য
আলস্য, পারি না, হয়-না বা পারা-যায়-না, এ-সব চিন্তা ও চলন
হইতে সাবধান ও সতর্ক থাকিও,-- কারণ, ইহারা সহজেই বংশ পরম্পরায় সংক্রামিত হয়
এবং পারিপার্শ্বিক ইহাদের দ্বারা দুষ্ট হইয়া ওঠে;--ফলে, বংশ,সমাজ ও দেশ
মূঢ়,মুহ্যমান ও অবসন্ন হইয়া বিশাল দরিদ্রতায় নিঃশেষ হইয়া যায় !
কাজ-পন্ডকরণে দীর্ঘসূত্রতা
দীর্ঘসূত্রতা আলস্যেরই সম্বন্ধী-- কাজ পন্ড করার গুরুঠাকুর
!-- যাহা করণীয় তৎক্ষনাৎ করিয়া দীর্ঘসূত্রতাকে বিদায় করিও;-- দক্ষতা ও
কার্য্যসিদ্ধি তোমার অনুচর হইবে !
লোভে
যথোপযুক্ত প্রয়োজনকে অতিক্রম করিয়া অতিরিক্তে উদগ্রীব
আকাঙ্ক্ষাকেই লোভ বলা যাইতে পারে;--তুমি ঐ অতিক্রমণ হইতে সাবধান থাকিও,
কারণ, উহা তোমাকে অবসন্নতায় চালাইয়া মৃত্যুতে নিঃশেষ করিতে পারে !
সঞ্চয় ও সেবা
সঞ্চয় করিও--কিন্তুসেবার জন্য ! তোমার সঞ্চয় যদি সেবাকেই পূজা না করিল, নিশ্চয় জানিও--উহা যাহা বর্দ্ধনকে ক্ষুন্ন করে তাহারই জন্য !
সেবাহীন শুশ্রূষায়
সেবা মানে তাহাই-- যাহা মানুষকে সুস্থ,স্বস্থ, উন্নত ও
আনন্দিত করিয়া তোলে;আর, তাহা হয় না অথচ শুশ্রূষা আছে, সে সেবা অপলাপকেই
আবাহন করে !
শয়তানী অহংএর নিয়ন্ত্রনে
তোমার অহঙ্কার যখনই অন্যকে খাটো করিয়া বা অস্বীকার করিয়া
নিজেকে প্রতিষ্ঠা করিতে চায়, তখনই তাহাকে শয়তানী অহং বলিয়া চিনিও;--তুমি
অহংকে এমনভাবে নিয়োজিত করিও--যাহাতে তাহাকে চালনা করিয়া তোমার
পারিপার্শ্বিকের জীবন,যশ ও বৃদ্ধিকে আমন্ত্রন করিতে পার !
ভালবাসা--বিপরীত সংঘাতে
ভাব, ভক্তি, ভালবাসা যদি তার বিপরীত সংঘাতে উদ্দামই না হইল,---তবে তা' আদৌ ছিল কিনা সন্দেহযোগ্য বটে !
যাজনের-অপ্রবৃত্তিতে জ্ঞান ও বোধের দীনতা
যখনই দেখিবে তোমার যাজন-প্রবৃত্তি দীন হইতেছে বা থামিয়া
গিয়াছে, ঠিক বুঝিও-- তোমার অন্তরের বোধ ও উপভোগ দিন দিন স্থবির হইয়াছে ও
হইতেছে !
বহুরূপী কাম
না-পাওয়া যেখানে তোমাকে ক্ষুন্ন করে, যাহার বৃদ্ধি তোমাকে
অবসন্ন করে,--অন্যের প্রতি আদরে তোমাকে উদ্বিগ্ন করে,--অথচ আসক্তি,
অনুরক্তি তোমাকে লেলিহান করিয়া তুলিয়াছে, বুঝিও সেখানে প্রেম নাই, আছে
বহুরূপী কাম !
যাজনে বৃদ্ধি ও অপলাপে
যাহাকে যাজন করিবে তাহাই বৃদ্ধি পাইবে,--তাই, নজর রাখিও,
যাহাতে জীবন ও বৃদ্ধির অপলাপ আনিয়া থাকে-- তোমার যাজন-প্রবৃত্তিকে কিছুতেই
সে-দিকে চালনা করিও ণা;-- মরিও না ও মারিও না !
ভাব---চরিত্রে ও চলনে
যেমনতর ভাব যখন যেমনভাবে তোমাতে অধিষ্ঠিত থাকিবে, তোমার
চিন্তা, চলন ও ভাষা সাধারণতঃ তেমনতরই হইবে;-- আর, ইহা যতই উন্নত হইয়া
তোমাতে সমাহিত থাকিবে, তোমার চিন্তা, চলন ও ভাষাও তেমনতর উন্নত ধরনের হইবে !
সত্য ও মিথ্যা
যাহার অস্তিত্ব ও বিকাশ আছে, আর যাহা, থাকাটাকে অক্ষুন্ন
রাখিয়া উন্নয়নে পরিচালিত করে,--এমন-কি, আর কোন থাকার বিচ্ছেদ বা বিরতি আনে
না তাহাই সত্য;-- আবার, যাহাতে এই থাকাকে ক্ষুন্ন করিয়া তুলিয়া অন্যের
থাকার বিক্ষেপ বা অপলাপ ঘটায়--তাহাই মিথ্যা !
আধ্যাত্মিকতা
অস্তিত্বে গ্রথিত হইয়া বা অস্তিত্বকে অধিকার করিয়া যে ভাব
তদদ্বারা অনুপ্রাণিত ও নিয়ন্ত্রিত হইয়া চিন্তা, চলন ও কর্ম্মে প্রতিফলিত হয়
তাহাই বস্তুতঃ আধ্যাত্মিকতা !
কর্ম্মপ্রেরণার অনুপূরণে আধ্যাত্মিকতা
যেখানে আধ্যাত্মিকতা অর্থাৎ being কে ( সত্তা বা জীবনকে )
basis (ভিত্তি) করিয়া কিছু নাই, অথচ কর্ম্মপ্রাণতা আছে,--তাহা যেমন কাহাকেও
প্রতিষ্ঠা বা সার্থক করে না,--তেমনি আধ্যাত্মিকতা আছে অথচ কর্ম্মপ্রেরণা
নাই,--- তাহাও কাহাকে ধন্য বা নন্দিত করে না !
ঋষি
যিনি বৃত্তিগুলিকে গমন করিয়া, অর্থাৎ, বৃত্তিগুলিকে জানিয়া,
তাহাদের সমাবেশ ও সমাধান করিয়া,একে সার্থক করিয়া তুলিয়া নিজ মনকে ত্রান
করিয়াছেন, তিনিই ঋষি,-- তাই "ঋষয়ো মন্ত্রদ্রষ্টারঃ"!
পরবর্ত্তীতে পূর্ব্ববর্ত্তী
যেখানে পরবর্ত্তী পূর্ব্ববর্ত্তীকে প্রতিষ্ঠা করিয়া তাহার
উৎকর্ষে অনুপ্রেরিত, ঠিক বুঝিও--এ সেই প্রেরণা যাহা পূর্ব্ববর্ত্তীর সংঘটন
ঘটাইয়াছিল !
ধর্ম্ম ও অধর্ম্ম
ধর্ম্ম মানে তাই যাহা নাকি থাকা ও বৃদ্ধিকে পাওয়াকে জীবন, যশ ও
উন্নতিপ্রবণতার সহিত একতানে, বাঁধিয়া, ধরিয়া রাখিয়া অমৃতকে আলিঙ্গন
করায়;--আর, যাহা এইগুলির অপলাপ ঘটাইয়া সঙ্কোচ, অবসন্নতা ও অধঃপতনের পথে
লইয়া মরণকে স্পর্শ করাইয়া দেয়-- তাহাকেই অধর্ম্ম বলা যায় !
Post a Comment